কুয়ালালামপুর (মালয়েশিয়া): মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি নারীর ব্যবহারে-কথায় আমার যেনো ভাষা হারানোর দশা। যার সঙ্গেই কথা বলতে চাই, ভাব দেখে মনে হয় যেনো প্রেম করার উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলছি।
একবার তো একজন কি একটা বাংলা শব্দ বললেন, তা বুঝতে পাক্কা সাত সাতটা মিনিট লাগলো। মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে যখন বুঝলাম যে তিনি চর্চা শব্দটা ব্যবহার করেছেন, তখন বুঝলাম, তিনি আসলে বলেছেন- ভাই, বাংলা চর্চা করে কি হবে!
এ কথার সঙ্গে তিনি আরো যোগ করলেন, বাংলা ভাষা শিখে কি হবে? মাকে মাম্মি অথবা চাচাকে আঙ্কেল বললে কিইবা আসে যায়?
এরপর এক ঘণ্টার আড্ডায় ৫০ মিনিট ধরে দেশের বদনাম, ৮ মিনিট নিজের ও তাদের বাবা-মায়ের পরিচয় বিশ্লেষণ, আর অবশিষ্ট দুই মিনিট ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে আলোচনা। ব্যস সেশন শেষ।
অথচ ক’দিন আগেই কলকাতার কিছু মানুষের সঙ্গে দেখা। পুরো আধা ঘণ্টার আড্ডাজুড়ে সব মিলিয়ে তিন থেকে চারটি ইংরেজি শব্দের ব্যবহার। সাবলীল বাংলায় গুছিয়ে বলা কথায় মুগ্ধই হতে হয় শ্রোতাকে।
কিন্তু প্রবাসী বাংলাদেশিদের বেলায় সাধারণ আলাপচারিতাতেও যেন দু’একটা ইংরেজি শব্দ ঝেড়ে না দিলে নাক কাটা যাবে। আর কথায় আঞ্চলিক টান থাকলে তো আপনি অচ্ছুতই হয়ে গেলেন। যদি কোন কারণে আপনার মুখ ফসকে-করতাছি, খাইতাছি, যাইতাছি টাইপের শব্দ বের হয়ে যায় তাহলে আপনি তথাকথিত বস্তির নাগরিক।
তো সেইসব আপা ও কিছু ছোট ভাই বা ‘ব্রো’দের বলতে চাই, আই.এল.টি.এস-এ ৭.০ আমিও পেয়েছি। (গর্ব নয়, উদাহরণ)। নিজের ভাষায় গালি দিয়েও যে কতো মজা তা আপনারা কখনো্ই বুঝবেন না। রফিক, শফিক, সালাম, বরকতের যে কি ঠেকা পড়েছিলো ভাষার জন্য নিজের জান দেবার! তারা আজ বেঁচে থাকলে হয়তো আফসোসই করতেন। হয়তোবা আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে যাওয়াও বিচিত্র ছিলো না।
পাঠক হয়তো ভাবছেন, নারীদের ওপর এভাবে চড়াও হওয়ার মানে কি? মানে খুবই পরিষ্কার। এখন পর্যন্ত দশ জনের মধ্যে নয় জনেরই বাংলার প্রতি অনীহা আমাকে এ লেখার প্রেরণা জাগিয়েছে। এখানে ভিন্নমতের মানুষ যে নেই, তা নয়। তবে তা নেহায়েতই নগণ্য।
জীবনের এ পর্যায়ে এসে তাই কৃতজ্ঞতা জানাই ছোটবেলার সেসব শিক্ষকদের প্রতি যারা পড়া না পারলে কান মলে দিয়েছেন। দিয়েছেন চড়-থাপ্পড়, কানমলা, বেতের বাড়ি। ওসব সয়েই তো বাংলা ভাষাটা শেখা হয়ে গেছে।
পরিশেষে বলতে চাই, যদি ইংরেজি শব্দ ব্যবহার না করায় আপনাকে কেউ আনস্মার্ট বলে তাহলে গর্ববোধ করুন। যদি আঞ্চলিক ভাষায় কথা বললে আপনার মাথা নত হয় তাহলে বুঝতে হবে, আপনার শ্রোতাদের জ্ঞানের অভাব রয়েছে। দোষ আপনার দোষ নয়। আর যদি আপনি বস্তির নাগরিকের কাতারে পড়েন তাহলে আপনি স্লামডগ মিলিওনিয়ার, থুক্কু বস্তির কোটিপতি।
বাংলাদেশ সময়: ০৬০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৪