ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

প্রবাসে ‘ভূতের’ জীবন ইকবালদের!

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৫
প্রবাসে ‘ভূতের’ জীবন ইকবালদের!

গ্যান্টিং হাইল্যান্ড (মালয়েশিয়া) থেকে: প্রবাসে ‘ভূতের’ জীবন কাটাতে হচ্ছে ঢাকার সায়দাবাদের ইকবাল হোসেনকে। নিজের এ পরিচয় নিয়ে স্বদেশিদের কাছে বেশ অস্বস্তি তার।

তবে জীবন ও জীবিকার তাগিতে প্রবাসে এ পরিচয়ই তার অন্ন জোগায়।

বিশাল এ বিনোদন নগরীতে ফান্টেড অ্যাডভেঞ্চার প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটির নানা অফার ক্রেতার কাছে তুলে ধরতে দিনরাতের অর্ধেকটা সময় ভূতের আদলেই সঙ সেজে থাকতে হয় তাকে। রাজধানীর কুয়ালালামপুর থেকে বাসে ঘণ্টাখানেকের সমতল ও আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে পৌঁছাতে হয় গ্যাংটিং হাইল্যান্ডে।

সেখানে গ্যান্টিং স্কাইওয়ে স্টেশন থেকে ক্যাবল কারে চেপে উঁচুনিচু পাহাড়ের ওপর দিয়ে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আকাশযাত্রা শেষে পৌঁছাতে হয় সেই বিনোদন নগরীতে।

গ্যান্টিং গ্রুপের তৈরি সাড়ে ১৭শ’ মিটার উচ্চতার পাহাড়ের চূড়ায় তৈরি এ বিনোদন নগরী বিশ্বের আকর্ষনীয় পর্যটনকেন্দ্র। মূলত বেশ কিছু পাঁচ তারকা রিসোর্ট-হোটেল, থিম পার্ক, ক্যাসিনো নিয়েই এ ব্যস্ত নগরী।

বাংলাদেশের বহু যুবক কাজ করছেন এ রঙিন নগরীতে। তবে চারপাশের জৌলুস আর উচ্ছ্বলতা টানে না তাদের। ১২ ঘণ্টা কঠোর পরিশ্রম করে তবেই টিকে থাকতে হয় অভিবাসী এ শ্রমিকদের।

দেশ থেকে এইচএসসি পাস করে ছাত্র ভিসায় মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান ইকবাল হোসেন। উদ্দেশ্য বাবা-মা, দুই ভাই ও দুই বোনের সংসারে স্বচ্ছলতা আনা। বাবা ঢাকার দয়াগঞ্জে চালের ব্যবসা করেন।

ছাত্র ভিসায় প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ করে মালয়েশিয়ায় আসা ইকবাল এ দেশে এখন অবৈধ অভিবাসী হিসেবে আছেন। ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী পরিচয়েই এ দেশে ঢুকেছিলেন তিনি। কলেজেও গিয়েছেন একদিন। তবে পড়তে নয়। ভিসায় কলেজ ছাত্রের পরিচয় বসাতে।

কিন্তু মালয়েশিয়া সরকার কলেজটিকে কালো তালিকাভুক্ত করায় এখন পুরোপুরিই অবৈধ শ্রমিক হিসেবে দেশটিতে অবস্থান করেছেন ইকবাল। বেতনও আহামরি নয়। মাত্র ১১শ’ রিঙ্গিত। বাংলাদেশি মুদ্রায় মাত্র সাড়ে ২২ হাজার টাকা।

ইকবাল বাংলানিউজকে জানান, কুয়ালালামপুরে কাজ করায় তাদের বেশ অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়। কারণ সেখানে হরহামেশা চলে পুলিশের অভিযান। ধরা পড়লে গুনতে হয় মোটা অংকের অর্থ। গুতুমজিয়ায় থাকা এক বন্ধুর কল্যাণেই এই বিনোদন নগরীতে আসা তার। এখানে বছরজুড়েই ভিনদেশি পর্যটকদের ভিড় থাকে বলে পুলিশও খুব একটা ঝামেলা করে না। আর এখানকার মালিকরা পুলিশের সঙ্গে একরকম বোঝাপড়া করেই অবৈধ শ্রমিকদের কাজ দেন। এর বিনিময়ে তারা অধিক কর্মঘণ্টা খাটিয়ে স্বল্প বেতন দেন। দু’দিক থেকেই লাভ মালিকদের।

তবে সম্প্রতি রিঙ্গিতের দাম পড়ে যাওয়ায় চিন্তিত ইকবালের মতো প্রবাসী শ্রমিকরা। গতকাল (সোমবার) বাড়িতে টাকা পাঠিয়েছেন রিঙ্গিত প্রতি ২০ টাকা ৫৪ পয়সা রেটে, জানান ইকবাল।

অসহায় কণ্ঠে তিনি বলেন, মালিক দুই বেলা খানা দেয়। রাইতে বাসায় গিয়া রান্না কইরা খাইয়া ঘুমাইতে ঘুমাইতে হাতে থাকে বড়জোড় ছয় থেকে সাত ঘণ্টা। আর ভালো লাগে না। দেশে কী জানা শোনা কেউ আছে? থাকলে কন চইল্যা যামু।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২২ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৫
আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ