কুনডাঙ (মালয়েশিয়া) থেকে ফিরে: পাম বাগানের ভেতর ভালোমতোই আসন পেতেছে জামগাছটা। পাশের পাহাড়ের ঝর্ণা থেকে নেমে আসা ঝিরিটা ঠিক যেখানে ৯০ ডিগ্রি বাঁক নিয়েছে সেখানটায়।
প্রায় ১৮ কিলোমিটার বিস্তৃত পামবনের ফাঁকে সদ্য মাথা তুলতে থাকা এই জামগাছটার সামনে খানিকটা খোলা চত্বর, তার সামনে কাটা পুকুর। তাতে লাল তেলাপিয়া উছলাচ্ছে যেনো। পাশেই আর একটা ছোট পুকুরে শোল মাছের বাচ্চা।
পুকুর তীরের বেড়া ডিঙ্গোলেই লকলকিয়ে ওঠা পুঁই ডাটা আর ঢেঁড়স গাছ। এখানকার উর্বর মাটিতে মাত্র ৩ থেকে ৪ সপ্তাহেই নাকি কাটার উপযোগী হয় পুঁই ডাটা। আর সব শাক-সবজিও দ্রুত বেড়ে ওঠে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ায়।
সবজি ক্ষেত ঘিরে আম-বরইয়ের গাছ। একপাশে মুরগির খামারে গিজগিজ করছে মুরগি। পাশেই লঙহাউসের মতো গরুর দু’টি বিশাল গোয়াল। তার পেছনে রাম ছাগলের ডেরা। পাশে হাঁসের বসত। ছাদের নিচে গোটা কয় কবুতরের খোপও ঝোলানো।
এক কোণায় গো-খাদ্য মজুদের পরিকল্পনায় খড়ের গাদা। আর এক পাশে পাতা ভেঙ্গে গো-খাদ্য তৈরির মেশিন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশি এক স্বপ্নবাজের বহুমুখী এক কৃষি খামার এটা। সেলানগরের কুনডাং এলাকায় ময়মনসিংহের মোহাম্মদ মামুন বিন আব্দুল মান্নান বিদেশের মাটিতে এই খামার গড়ে তুলছেন তিল তিল যত্নে।
মালয়েশিয়াতে সস্তায় জমি কিনে কৃষিক্ষেত্রে যে বিপ্লব ঘটিয়ে দেওয়া যায় তারই যেনো জলজ্যান্ত প্রমাণ তিনি। বছর তিনেক আগে ১২ লাখ রিঙ্গিতে (১ রিঙ্গিতে ১৯ টাকা) ২০০ শতাংশ জায়গা কিনে কৃষি খামারটা শুরু করেন তিনি। এখন গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, মাছ আর সবজি বেচছেন দেদারছে। খামারে কাজ দিয়েছেন আরো ৫ বাংলাদেশিকে।
অস্ট্রেলিয়া আর থাইল্যান্ড থেকে ভালো জাতের মাংসল গরু এনেছেন তিনি। ছাগল এনেছেন অস্ট্রেলিয়া আর মায়ানমার থেকে। মুরগি পালছেন স্থানীয় জাতের। কালো মাংস হয় এমন কিছু দামি মুরগিও দেখা গেলো তার খামারে। হাঁসের মধ্যে আছে রাজ হাঁস, চীনা হাঁস আর পাতি হাঁস।
দেশ থেকে এনে এখানে রোপন করেছেন জাম গাছ, বরই গাছ। প্রায় ২৩ বছর ধরে এ এলাকায় থাকা মামুন বিন আব্দুল মান্নান বিয়েও করেছেন মালয় মেয়েকে। চাইলে বাংলাদেশিরা কৃষি খামারে এই মালয়েশিয়াতও নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
জেডএস/জেডএম/