রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলতের ব্যাপারে এভাবেই বলছিলেন ফেনী আলিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা মো. মাহমুদুল হাসান। বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা হচ্ছিল তার।
রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে বোখারি শরিফের একটি হাদিসের উল্লেখ করে এই আলেম বলেন, হাদিসে বলা হয়েছে একদিন এক বেদুইন নবী (সা.) এর কাছে এসে বললো, ‘আমাকে এমন একটি কাজের সন্ধান দিন, যা করলে আমি বেহেশতে প্রবেশ করতে পারি’। নবী (সা.) বললেন, ‘আল্লাহর ইবাদত করো, তার সঙ্গে অন্য কাউকে শরিক করো না, ফরজ নামাজ কায়েম করো, জাকাত আদায় করো এবং রমজান মাসের রোজা রাখো’। লোকটি বললো, ‘আল্লাহর শপথ! আমি এর চেয়ে বেশি কিছু করবো না’। যখন লোকটি ফিরে গেল তখন নবী (সা.) বললেন ‘বেহেশতি লোক দেখার যার ইচ্ছা, সে যেন এ ব্যক্তিকে দেখে’।
মাওলানা মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, বরকতময় রমজান মাস শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বেহেশতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শেকলবন্দি করে রাখা হয় শয়তানকে, যেন সে মানুষকে প্ররোচনা দিতে না পারে।
রমজান মাসে রোজাদারদের জন্য বেহেশতে ‘রায়্যান’ নামের একটি দরজা বানানো হয় উল্লেখ করে এই আলেম বলেন, সাহাল ইবনে সাআ’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন- ‘বেহেশতের আটটি দরজা রয়েছে। এগুলোর একটির নাম রায়্যান। এ দরজা দিয়ে শুধু রোজাদাররাই প্রবেশ করবেন’।
রমজানে জাহান্নাম থেকে বান্দার মুক্তি লাভের ব্যাপারে মাওলানা মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, রমজান মাসের প্রথম রাত থেকেই শয়তান এবং দুষ্ট, খারাপ জ্বিনদের বন্দি করে রাখা হয় এবং বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহান্নামের সমস্ত দরজা। রমজানে রোজা ও কিয়ামুল্লাইল বা তারাবী আদায়কারী কেয়ামতের দিন সিদ্দিক ও শহীদগণের সঙ্গে থাকবে।
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি রমজানের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত, সে চরমভাবে হতভাগ্য। এ প্রসঙ্গে তিনি হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) এর একটি হাদিসের উল্লেখ করেন। হাদিসে বলা হয়েছে, রাসূল (সা.) বলেন, ‘এই মাস তোমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে, এতে এমন একটি রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, সে সর্বপ্রকার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে’।
তাই এ আলেম বলেন, রমজান পেয়েও যে ব্যক্তি পাপ থেকে মুক্ত হতে পারেনি, তার জন্য ধ্বংস অনিবার্য।
ফেনীর ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি প্রতিষ্ঠান আলিয়া কামিল মাদ্রাসার এ অধ্যক্ষ আরও বলেন, রমজান শুধু রাসূল (সা.) এর উম্মতদের ওপর ফরজ করা হয়নি, ফরজ করা হয়েছিল পূর্ববর্তী নবী ও রাসুলদের উম্মতদের ওপরও।
এ ব্যাপারে তিনি পবিত্র কোরানের সুরাহ বাকারার ১৮৩ নং আয়াতের উল্লেখ করেন। আয়াতে বলা হয়েছে ‘হে ইমানদারগণ-তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যেন তোমরা খোদাভীরুতা অর্জন করতে পারো। ’
মাওলানা মাহমুদুল হাসান বলেন, রমজান মাস আল্লাহ তায়ালার বিশেষ ইবাদত ও প্রশংসাবাদের মাস। রমজান মাস হলো সে মাস, যে মাসে নাযিল হয়েছে মহাপবিত্র আল-কোরআন। তিনি বলেন এ মাসের ইফতার, সেহরি সবই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রোজা অবস্থায় গীবত করা, মিথ্যা বলা, গালমন্দ করা, ঝগড়া-বিবাদ করা, অশ্লীল কাজ কর্ম করা, দেখা ও শোনা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে অন্যায়ভাবে লাভ করা নাজায়েয।
পরিশেষে বিশিষ্ট এ আলেম বলেন, রমজানের ফজিলত ও গুরুত্বের প্রতি খেয়াল রেখে সবার উচিৎ তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে গুনাহ মাপের চেষ্টা করা। কারণ কারও কারও হয়তো এটিই জীবনের শেষ রমজান। রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের সুযোগ থেকে যেন নিজে এবং সমাজের অন্যরা বঞ্চিত না হয় তার খেয়াল রাখা প্রত্যেক ইমানদারের দায়িত্ব।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৮ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৮
এসএইচডি/এইচএ/