মৌলভীবাজার: মনু নদের ভাঙন থেকে মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলা রক্ষা প্রকল্পের বিভিন্ন পর্যায়ের ২৬টি প্যাকেজের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে যথাসময়ে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি খরস্রোতা নদ মনুর তলদেশ অনেক আগেই ভরাট হয়ে পড়েছে। দেশের সীমানায় প্রবাহিত ৭২ কিলোমিটারের এই নদ স্বাধীনতার পর থেকে এই পর্যন্ত একবারও খনন করা যায়নি।
প্রতি বর্ষায় নদের পানি বেড়ে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া- এই তিন উপজেলায় বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয় বাড়িঘর। ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকার ফসলের।
স্থায়ীভাবে এই বন্যার কবল থেকে মৌলভীবাজারকে রক্ষায় ২০২১ সালে ৯৯৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার একটি মেগা প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ দুই বছর ধরে ৫৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে। তবে নদের তীরের কয়েকটি স্থানে কিছু জিও ব্যাগ ড্রপিং ও ব্লক তৈরির প্রক্রিয়া ছাড়া মেগা এই প্রকল্পের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বরাদ্দের টাকা না আসায় তারা বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ করে দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, নির্মাণসামগ্রীর দাম আগের চেয়ে অস্বাভাবিক বাড়তে থাকায় তারা বেকায়দায় পড়েছেন। ৭২টি প্যাকেজের মধ্যে ২৬টির কাজ এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ৪৬টির কাজ ঢিলেঢালাভাবে চলতে থাকলেও অর্থাভাবে যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যাবে।
নদী শাসনের মূল কাজ জমি অধিগ্রহণ। ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ কিলোমিটার চর অপসারণ, ৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৬ কিলোমিটার নদীর বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও ৫১ কোটি টাকায় আড়াই কিলোমিটার শহর রক্ষা বাঁধে ফ্লাড-ওয়ালসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো এখনো করা হয়নি। এতে বর্ষায় বন্যা আতঙ্কে রয়েছেন শহরের বাসিন্দারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজনগর উপজেলার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাখিল রায়হান বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক সংকটে কাজে অনীহা দেখাচ্ছে।
আর কাজের মেয়াদ বাড়ানোসহ আর্থিক বরাদ্দের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর কথা বললেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বন্যার স্থায়ী সমাধানে ৯৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও- দেড় বছরে এ পর্যন্ত মাত্র ৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২২
বিবিবি/আরএইচ