বরগুনা: বরগুনায় মোট ৭৯৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০৯টি প্রধান শিক্ষক ও ৭৮৩টি সহকারী শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। সহস্রাধিক পদ শূন্য থাকায় শ্রেণিকক্ষে পাঠদানসহ দাপ্তরিক নানা কাজে বিদ্যালয়গুলোতে সৃষ্টি হচ্ছে নানা সমস্যা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা সদরে ২২৭টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৬টিতে নেই প্রধান শিক্ষক। আমতলী উপজেলায় ১৫২টি বিদ্যালয়ে ৪১টি প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য। তালতলীতে ৭৯টি বিদ্যালয়ে ৩০টি, পাথরঘাটায় ১৪৯টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৫টিই চলছে প্রধান শিক্ষকবিহীন। এছাড়া বামনায় ৬২টি বিদ্যালয়ে ২৬ ও বেতাগী ১২৯টি বিদ্যালয়ের ৩১টিতে নেই প্রধান শিক্ষক।
সহকারী শিক্ষকের সংকটও প্রকট জেলার বিদ্যালয়গুলোতে। সদরে ২৩৮টি, আমতলীতে ৬৪টি, তালতলীতে ১৪০টি, পাথরঘাটায় ১৬১টি, বামনায় ৫৫টি, বেতাগীতে ১২৫টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।
সরজমিনে বরগুনা জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ বছরে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবসর জনিত, মৃত্যু ও সরাসরি প্রধান ও সহকারী শিক্ষকের পদে নিয়োগ না থাকায় পদগুলো শূন্য হয়ে পড়েছে। যার প্রকৃত হিসেব বরগুনা জেলা প্রাথমিক কার্যালয়ে নেই। আর ওইসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হলেও সহকারী শিক্ষকের বিপুল সংখ্যক পদ শূন্য থাকায় অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বিশেষ করে করোনা কালীন সময়ে শিক্ষা থেকে পিছিয়ে ও ঝরে পড়া শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করা। আবার অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি, এ কারণে একাধিক শাখা করে পাঠদান করা হয়। সেখানে শিক্ষক স্বল্পতায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সমস্যাও আরও বেশি বলে বলে জানান শিক্ষকরা।
সদর উপজেলার ছোনবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হক বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষকের ৫টি পদ আছে। কিন্তু বর্তমানে ৩ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ২টি পদ শূন্য। এই বিদ্যালয়ে ১২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তাকে প্রায়ই দাপ্তরিক কাজে জেলা শহরে যেতে হয়। ২ জন শিক্ষক দিয়ে তখন বিদ্যালয় চালাতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে কোমলমতি শিশুদের পড়ালেখা ঠিকমতো হবে না। সামনের বছর এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।
বেতাগী উপজেলার উত্তর কাজীরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষকের সংকট থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো পড়ানো যায় না। দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি ক্লাস করাতে হিমশিম খেতে হয়।
আমতলী উপজেলার কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, ওই বিদ্যালয়গুলোতে দুজন তিনজন করে শিক্ষক রয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকেরা দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকেন। বেশিরভাগ সময় একজন শিক্ষককেই বিদ্যালয় চালাতে হয়। এতে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে সিলেবাস শেষ হচ্ছে না। তা ছাড়া পরীক্ষার পর খাতা দেখা ও ফলাফল ঘোষণা করতেও দেরি হচ্ছে।
এদিকে, সারাদেশে ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর সহকারী শিক্ষকের শূন্যপদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বরগুনা জেলায় লিখিত পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ২৫৩৭ জন। যার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে আজ। জেলার শূন্য পদের বিপরীতে সর্বোচ্চ সংখ্যক নিয়োগ দেবার জন্যে আন্দোলন করছেন ফলাফল প্রত্যাশিরা।
শূন্য পদের বিপরীতে সবোর্চ্চ সংখ্যক নিয়োগ বাস্তবায়ন কমিটির বরগুনা জেলা আহ্বায়ক মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আমাদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শূন্যপদের বিপরীতে নিয়োগ উল্লেখ থাকলেও বর্তমানে বরগুনায় প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ও প্রাক প্রাথমিক মিলিয়ে শূন্যপদ হাজারের অধিক। যা অনেক বিদ্যালয়েই দুই শিফটের চাহিদা অনুযায়ী তালিকা করা। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো এক শিফটে চলবে বলে আমরা বিদায়ী সচিব থেকে জানতে পারি। সেক্ষেত্রে পাঠদানের জন্য সর্বোচ্চসংখ্যক নিয়োগের প্রয়োজন। প্রকৃত শূন্য পদ অনুযায়ী নিয়োগ হলে প্রাথমিকে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বরগুনা জেলায় শূন্য পদের জন্যে যে আন্দোলন হচ্ছে, সে ব্যাপারে আমাদের হাতে কিছু নেই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্য পদের তালিকা ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে।
শ্রেণিকক্ষের অভাব উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, বরগুনা জেলায় সামনের বছর সব বিদ্যালয়ে এক শিফটে ক্লাস পরিচালনা করার মতো শ্রেণিকক্ষ আমাদের নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২২
এনএস