ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ‘মৃত্যুবরণ’ করেন ফারদিন: র‌্যাব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২২
নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ‘মৃত্যুবরণ’ করেন ফারদিন: র‌্যাব

ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিন নুর পরশ (২৪) নিহত হওয়ার ঘটনার তদন্তে জানা যায় তিনি স্বেচ্ছায় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ‘মৃত্যুবরণ’ করেছেন।  

বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ঘটনাটির তদন্তে পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের মতো প্রতিটি সেকেন্ডে তদন্ত করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ও বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি ফারদিন সুলতানা কামাল ব্রিজের ওপর থেকে স্বেচ্ছায় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ‘মৃত্যুবরণ’ করেন।

তিনি আরও বলেন, ফারদিন যখন ঝাঁপ দিয়েছেন তখন তিনি ব্রিজের পিলারের ওপর পড়েছেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ফারদিন নিহত হওয়ার ঘটনায় র‌্যাব তার পারিবারিক সূত্র, অধিকতর তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্লেষণ, সিসিটিভি ফুটেজসহ স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের আলোকে রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করে। আমরা জানতে পারি, গত ৪ নভেম্বর বিকেল ৩টার দিকে রাজধানী ডেমরার কোনাপাড়া নিজ বাসা থেকে পরীক্ষার কথা বলে বুয়েটের হলের উদ্দেশ্যে বের হন ফারদিন। বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে ফারদিন সায়েন্স ল্যাব মোড়ে তার পরিচিতজনের সঙ্গে তিনি দেখা করেন। অতঃপর সেখান থেকে নীলক্ষেত ও ধানমন্ডিসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেন। পরে সাত মসজিদ রোডে একটি রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। ওইদিন রাত আনুমানিক ৮টার দিকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেন। পরে তিনি রিকশাযোগে রামপুরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।  

তিনি বলেন, ওইদিন আনুমানিক রাত পৌনে ১০টার দিকে রামপুরা ব্রিজ এলাকায় তিনি রিকশা থেকে নেমে যান এবং কিছুক্ষণ রামপুরা ব্রিজ এলাকায় ঘোরাফেরা করেন।  

র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ফারদিন কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, বাবুবাজার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা, পুরান ঢাকার জনসন রোড, গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট এলাকায় যান।  

সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা যায়, রাত ২টা ১ মিনিটে (সিসিটিভি ফুটেজ টাইম ২টা ৩ মিনিট) যাত্রাবাড়ীর বিবিরবাগিচা থেকে নিহত ফারদিনকে লেগুনায় উঠতে দেখা যায়। রাত আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজের অপর পাশে তারাবো বিশ্বরোডের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লেগুনা থেকে নেমে যান ফারদিন।  

তিনি বলেন, রাত ২টা ২৬ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজের তারাবো প্রান্তে ফারদিনের অবস্থান ছিল। পরে রাত ২টা ৩৪ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজের প্রায় মাঝখানে আসেন ফারদিন। ব্রিজের তারাবো প্রান্ত থেকে সুলতানা কামাল ব্রিজের মাঝখান পর্যন্ত দূরত্ব আনুমানিক ৪০০-৫০০ মিটার। রাত ২টা ৩৪ মিনিট ৯ সেকেন্ডে সুলতানা কামাল ব্রিজের রেলিং ক্রস করে ফারদিন এবং রাত ২টা ৩৪ মিনিটে ১৬ সেকেন্ডে সুলতানা কামাল ব্রিজের ওপর থেকে স্বেচ্ছায় নদীতে ঝাঁপ দেন। ঝাঁপ দেওয়ার পর রাত ২টা ৩৪ মিনিট ২১ সেকেন্ডে শীতলক্ষ্যা নদীর পানিতে পড়ে ফারদিন। রাত ২টা ৩৫ মিনিট ৯ সেকেন্ডে ফারদিনের মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও রাত ২টা ৫১ মিনিট ফারদিনের হাতের ঘড়িতে পানি ঢুকে অকার্যকর হয়ে পড়ে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ, ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টসহ অন্যান্য সব সংশ্লিষ্ট আলামত বিবেচনায় নিয়ে আমাদের তদন্তে বের হয়ে আসে যে, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন স্বেচ্ছায় সুলতানা কামাল ব্রিজ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।  

ফারদিন হত্যার মামলা তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফারদিনের মৃত্যু সংক্রান্ত অন্য কোনো সূত্র বা আলামত পাওয়া গেলে, তবে তা বিবেচনায় নিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বলেও জানান তিনি।  

এর আগে, বুয়েট ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা বলে গত ৪ নভেম্বর ডেমরার কোনাপাড়ার বাসা থেকে বের হন ফারদিন।

ওই দিনই তিনি নিখোঁজ হন। পরদিন ৫ নভেম্বর রামপুরা থানায় জিডি করেন তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন। নিখোঁজের তিন দিন পর গত ৭ নভেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। এ ঘটনায় ফারদিনের বাবা মামলা করেন। মামলায় ছেলের বন্ধু আয়াতুল্লাহ বুশরাকে আসামি করেন। ওই মামলায় গ্রেফতার বুশরা পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে রয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২২
এসজেএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।