ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শীতের কাপড় নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় ব্যবসায়ীরা

ইফফাত শরীফ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২২
শীতের কাপড় নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় ব্যবসায়ীরা

ঢাকা: পৌষ মাস শুরু হলেও রাজধানীসহ দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে এখনও শীত জেঁকে বসেনি। রাতে তাপমাত্র কিছুটা কমলেও দিনের বেলায় বাড়ছে।

ফলে নগরীর পেশাজীবীরা সন্ধ্যার হালকা ঠাণ্ডা সহ্য করে গরম কাপড় ছাড়াই চলাফেরা করছেন। আর শীত না থাকায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকান ও ফুটপাতের দোকানে জমে উঠছে না শীতের কাপড়ের বেচাকেনা।

যদিও শীত এলেই পোশাকের বেচাকেনা থাকে তুলনামূলক বেশি। তাই বেশির ভাগ ব্যবসায়ী শীতের জন্য অপেক্ষা করেন। কারণ তারা সারা বছরের বেচাকেনায় যে পরিমাণ লোকসান করে তা উৎসব ও শীত মৌসুমে পুষিয়ে নেন।

বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত রাজধানীর নিউমার্কেট, গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, বায়তুল মোকাররম, খিলগাঁও এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতগুলোতে হাকারদের দোকানে পর্যাপ্ত গরম কাপড়ের পোশাক, কম্বল থাকলেও ক্রেতা নেই। বঙ্গবাজার এলাকার পাইকারি মার্কেটগুলোতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কিছু সংখ্যক পাইকারি ক্রেতা থাকলেও খুচরা ক্রেতা ছিল একেবারেই কম।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় ক্রেতা বেশ কম। সারাদিনে বেচাকেনায় দোকান ও কর্মচারীর খরচ উঠছে না। এভাবে চলতে থাকলে লোকসানে পড়ে ব্যবসা বন্ধ করতে হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। সেজন্য আগের কাপড়েই শীত কাটানোর প্রস্তুতি নিয়েছে সাধারণ মানুষ।

তবে আবহাওয়া দপ্তর বলছে, ডিসেম্বরের শেষের দিকে বা পৌষ মাসের মাঝা-মাঝি সময়ে দেশে শীত বাড়তে পারে।  

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্যমতে, শীত মৌসুমে দেশে শীতের পোশাকের বাজার প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।

মোহাম্মদ ইউনুস খান গত চার বছর ধরে গুলিস্তানের জিপিও এর সামনের ফুটপাতে ব্লেজার এবং প্যান্ট বিক্রি করছেন। এবার শীত উপলক্ষে তিনি এবং তার ভাই দুজনে মিলে ব্লেজারের ব্যবসায় দেড় লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাত্র দুটি ব্লেজার বিক্রি করেছেন। ব্লেজার দুটির দাম সর্বমোট দুই হাজার পাঁচশত টাকা। তিনি আশা করছেন এবারের শীতে বেচা-বিক্রি ভালোই হবে।  

বিক্রেতা ইউনুস খান বলেন, আমাদের এখানে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা পর্যন্ত দামের ব্লেজার পাওয়া যায়। আর প্যান্টের ক্ষেত্রে দাম ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। বেশির ভাগ ব্লেজার আমরা সদরঘাট এলাকা থেকে সংগ্রহ করি।

সরেজমিনে বায়তুল মোকাররমের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতারা বিভিন্ন ডিজাইনের ব্লেজার ফুটপাতে ঘুরে ঘুরে দেখছেন। কেউ কেউ আবার পছন্দের ব্লেজারটি দামা দামি করছেন। যদিও দাম কম এসব ব্লেজার কিনতে তেমন একটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না ক্রেতাদের মধ্যেও। শীতে খুব বেশি বেকায়দায় না পড়লে কেউ এসব পোশাক সহজে কিনছেন না, এমনটাই জানা গেছে বিভিন্ন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে।  

কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা হাজী মো. সাদেক মিয়া (৫৫) কম্বল কিনতে এসেছেন বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ পাশের ফুটপাতে। একটি কম্বল পছন্দ হওয়াতে দোকানির সঙ্গে দামা দামি করছেন। দোকানি সজিব মিয়া সর্বশেষ দুই হাজার পাঁচশত টাকায় লাল রঙের (ইন্ডিয়ান চিরতা ব্রেন্ডের) কম্বলটি বিক্রি করেন।  

কম্বল কিনছেন কেন জানতে চাইলে সাদেক মিয়া বলেন, ‘ফুটপাত হলেও এখানে ভালো মানের কম্বল পাওয়া যায়। আর শো-রুম গুলোতে গেলে গলা কাটা দাম রাখে।

ব্লেজার বাদেও ফুটপাতে নানা ডিজাইন ও রঙের হুডি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা করে। এক্সপোর্টের কাপড়ের জ্যাকেট ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  

ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্য বছরের তুলনায় এবছর হুডি বিক্রি কিছুটা কমেছে। বর্তমানে ফুটপাতগুলোতে বেশি বিক্রি হচ্ছে কম্বল, সোয়েটার, মাফলার, কানটুপি, কাপড়ের জ্যাকেটসহ বিভিন্ন শীতের কাপড়।

ফুটপাতের সোয়েটার ব্যবসায়ী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ফুটপাতে দুই থেকে পাঁচ বছরের ছোট বাচ্চাদের শীতের কাপড় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। আর বড়দের সোয়েটার সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায় পাওয়া যায় গুলিস্থান এবং বায়তুল মোকাররমের ফুটপাতে।

ফুটপাতের মাফলার ১০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকার পাওয়া যায়। বাহারি ডিজাইনের কানটুপি পাওয়া যায় ১৫০ থেকে ৩০০ টাকায়।  

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাফলার বেশির ভাগই দেশের বাইরে থেকে আসা। ফুটপাতের বেশির ভাগ দোকানি এসব মাফলারগুলো সদর ঘাট থেকে সংগ্রহ করেন।

বঙ্গবাজার ফুটপাতের মাফলার বিক্রেতা মো. সুমন মিয়া বলেন, এসব জিনিস খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ কেনেন না। শীত বেশি পড়লে তখনই মাফলারের বিক্রি বাড়ে। গতবছর এ সময় তেমন বেচা কেনা হয় নাই। এবার আশা করি বিক্রি ভালো হবে। শুধু ডাল ভাত খেয়ে বাঁচতে পারলেই হবে।

এবছরের শীতের পোশাকের মার্কেট সম্পর্কে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, পুরো দেশে শুধু মাত্র শীতের পোশাকের বাজার প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। আমরা ভাবছি এবার শীতে ভালো ব্যবসা হবে। তবে বেচা কেনা কেমন হতে পারে তা আগামী সাত দিন না গেলে বোঝা যাবে না। কারণ দু-এক দিনই হলো মাত্র শীত পড়া শুরু করেছে। এখন মানুষ অতি প্রয়োজন ছাড়া সহজে কেনাকাটা করতে চান না।

তিনি বলেন, এবার শীতের পোশাকের দাম অন্য বারের তুলনায় খুবই কম। তবে আমদানি করা পণ্যগুলো বাড়তি দামে নিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২২
ইএসএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।