ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজয় দিবসের বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০২২
প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজয় দিবসের বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ

ঢাকা: মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হলো সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ। অভিবাদন মঞ্চ থেকে কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে শুরু  হয় বিজয় দিবস উদযাপনের এ আয়োজন।

১০টা ২৭ মিনিটে ঘোড়া সুসজ্জিত মিলিটারি পুলিশের মোটর শোভাযাত্রা সহযোগে প্যারেড গ্রাউন্ডে আসেন প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্রধান অতিথি জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তিন বাহিনীর প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তাকে অভ্যর্থনা জানান।

এর আগে ১০টা ২৩ মিনিটে কাতার সশস্ত্র বাহিনীর উপহারের আরবীয় ঘোড়া সুসজ্জিত মিলিটারি পুলিশের মোটর শোভাযাত্রা সহযোগে প্যারেড গ্রাউন্ডে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তাকে স্বাগত জানান মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী ও তিন বাহিনীর প্রধানরা।

প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে অভিবাদন মঞ্চে যান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিভিআইপি গ্যালারিতে তার আসন নেন।

এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। জাতীয় সঙ্গীতের পরিবেশনের পর সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতিকে সম্মান জানিয়ে গার্ড অব অনার প্রদান করেন।

এরপর খোলা জিপে প্যারেড পরিদর্শন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্যারেড পরিদর্শন শেষে রাষ্ট্রপতি পুনরায় অভিবাদন মঞ্চে অবস্থান নেন এবং মহান বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজের সালাম নেওয়া শুরু করেন।

কুচকাওয়াজের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুর‌্যাল ও সাতজন বীরশ্রেষ্ঠর প্রতিকৃতি প্রদর্শনের পর সুসজ্জিত বাহনে মুক্তিযোদ্ধা কন্টিনজেন্ট রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন জানায়।

প্যারেড গ্রাউন্ডে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজের পাশাপাশি প্যারেড গ্রাউন্ডের আকাশ থেকে রাষ্ট্রপতিকে সালাম দেওয়া হয়। আকাশ থেকে ফ্রিফল জাম্প দিয়ে পতাকা নিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ডে অবতরণ করেন প্যারা কমান্ডোরা। আর্মি এভিয়েশন, নেভাল এভিয়েশন ও র‌্যাব ফোর্সেসের ফ্লাইপাই, দুঃসাহসিক প্যারা কমান্ডো সদস্যদের ফ্রিফল জাম্প কুচকাওয়াজকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলেন।

বিভিন্ন কন্টিনজেন্টের মার্চ ফাস্টের পর যান্ত্রিক বহরে সুসজ্জিত সশস্ত্র বাহিনীর উল্লেখযোগ্য সমরাস্ত্রসমূহ প্রদর্শন করা হয়।

যান্ত্রিক বহরের প্রদর্শনীর পরপরই শুরু হয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এক মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট ও এরোবেটিক ডিসপ্লে। বিমান বাহিনীর ফ্লাইপাস্টের নেতৃত্ব দেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. মনিরুজ্জামান হাওলাদার।

কুচকাওয়াজে বিভিন্ন বাহিনীর সর্বমোট ২৩টি কন্টিনজেন্ট মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে সালাম প্রদান করে।

মহান বিজয় দিবস কুচকাওয়াজে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯ পদাতিক ডিভিশনের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হয়।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, বাংলাদেশ জেল এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এ কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করে।

বিজয় দিবস কুচকাওয়াজে প্যারেড কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জেনারেল অফিসার কমান্ডিং, ৯ পদাতিক ডিভিশন মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক এবং প্যারেড উপ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন কমান্ডার, ৭১ মেকানাইজড ব্রিগেড, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. খালেদ কামাল।

কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণকারী সম্মিলিত যান্ত্রিক বহরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কমান্ডার, ৯ আর্টিলারি ব্রিগেড, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তৌফিক হামিদ এবং জাতিসংঘ কন্টিনজেন্টের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কমান্ডার, ৮১ পদাতিক ব্রিগেড, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ ব ম আব্দুল বাতিন ইমানী।

কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের গ্যালারিতে মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্যগণ, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ, বাংলাদেশে নিযুক্ত বৈদেশিক কূটনৈতিক ব্যক্তিরা এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে (ভোর ৬টা ৩ মিনিট) তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে শুরু হয় মহান বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা। ঢাকা পুরাতন বিমান বন্দর এলাকায় (তেজগাঁও) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের ব্যবস্থাপনায় একটি আর্টিলারি রেজিমেন্টের ৬টি গান ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের প্রতি গান স্যালুট প্রদর্শন করে।

কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, রেডিও, অনলাইনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

৫২তম বিজয় দিবস উদযাপন করছে বাংলাদেশ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ।

এ উপলক্ষে সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০২২
এমইউএম/আরএইচ/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।