ঢাকা: সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস তেজগাঁওয়ের শাহীনবাগ এলাকায় নিখোঁজ এক বিএনপি নেতার বোনের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সে বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জানার কথা ছিল।
তবে সেখানে তার নিরাপত্তার কোনো ধরনের ঘাটতি ছিল না। পুলিশ বাহিনী যখনই খবর পেয়েছে তখনই সেখানে ছুটে গেছে বলে জানান তিনি।
রোববার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইন-শৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির ষষ্ঠ সভা’ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে নিখোঁজদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাকের’ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে তেজগাঁওয়ের শাহীনবাগ এলাকার একটি বাসায় যান। ওই বাসায় ২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ বিএনপি নেতা মাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি থাকেন। তিনি যখন ওই বাসায় যান তখন সেখানে ‘মায়ের কান্না’ নামে আরেকটি সংগঠনের সদস্যরাও ওই বাসার বাইরে অবস্থান করছিলেন তাকে স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য। মায়ের কান্না হলো ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর বিদ্রোহ দমনের নামে বিমানবাহিনীর সহস্রাধিক সদস্য গুমের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সংগঠন।
শাহীনবাগের বাসায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের অবস্থান এবং বের হওয়ার পর স্মারকলিপি দেওয়া নিয়ে তখন ওই এলাকায় ধস্তাধস্তির মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে সেখান থেকে দ্রুত বের করে নিয়ে যান। ওই বাসায় তিনি ২৫ মিনিট অবস্থান করেছিলেন। বের হয়ে যাওয়ার পরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জরুরি ভিত্তিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দেখা করে তিনি তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান।
তেজগাঁওয়ে ওই বাসায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের যাওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বিষয়টি নিয়ে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুন্দরভাবে ব্যাখা দিয়েছে। এরপর আমার আর কোনো ব্যাখার প্রয়োজন নেই। তবে যেহেতু আমার নির্বাচনী এলাকা। আমি ওই এলাকার সংসদ সদস্য (এমপি)। আমি যতটুকু খবর পেয়েছি, সেখানে দেখা গেছে মার্কিন রাষ্ট্রদূত যে বাড়িতে গিয়েছিলেন তার পাশের বাড়ির কয়েকজন তারা কিভাবে জেনেছে তা আমি জানি না। তাদের কয়েকটি দাবি যেমন, জিয়ার আমলে তাদের নিরপরাধ পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে, সে বিষয়ে তাদের দাবি প্ল্যাকার্ড মার্কিন রাষ্ট্রদূতের হাতে দেওয়া হয়েছে বলে এটুকু আমি শুনেছি।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রথম কথা হলো সেখানে তার নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি ছিল না। পুলিশ বাহিনী যখনই শুনেছে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সেখানে যাচ্ছেন তখন পুলিশ বাহিনীর কর্তব্য হয়ে গিয়েছিল সেখানে যাওয়ার। আমাদের ওসি সিভিল পোশাকেই চলে গেছে। এখানে তার নিরাপত্তার ঘাটতি হয়েছে বলে আমার কাছে রিপোর্ট আসেনি।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত সেখানে যাচ্ছেন সে তথ্যটা কিভাবে ফাঁস হলো জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা সেটা জানি না। তারা তো আমাদের কাছে তথ্য দেয়নি। কিভাবে তথ্য ফাঁস হলো তার অফিস থেকে তথ্য ফাঁস হয়েছে কিনা সেটা আমরা জানি না। আর এটা আমাদের জানার কথাও নয়। উনি সেখানে যাবেন সেটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জানার কথা ছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও জানে না, আমরাও জানি না।
তিনি বলেন, আমাদের পুলিশি ব্যবস্থা এতটাই শক্ত। যে আমাদের প্রতিটা ওয়ার্ডে একটি বিট পুলিশি সিস্টেম রয়েছে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের অসি সেখানে চলে গেছে এবং তার যাতে নিরাপত্তার বিঘ্ন না ঘটে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কূটনীতিক পুলিশ তো আছে সেক্ষেত্রে এ ধরনের একটি বিষয় কিভাবে হলো জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, কূটনীতিক পুলিশ তার সঙ্গে ছিল। সেখানে কোনো ঘটনা ঘটেনি। রাষ্ট্রদূতরা যে এলাকায় থাকেন সেখানে যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি তারা যখন বের হন তখনও আমাদের সিকিউরিটি নিয়ে বের হন। চার জন রাষ্ট্রদূতকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়ে থাকে, তার মধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত একজন। তিনি যখনই কোথাও যাওয়া-আসা করেন তখন তার আগে পেছনে আমাদের পুলিশ বাহিনী নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। তার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এ ধরনের কথা আমরা কখনো শুনিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২২
জিসিজি/এএটি