ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ধারণ ক্ষমতা না থাকাই যানজটের মূল কারণ

মো. রোমান আকন্দ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২২
ধারণ ক্ষমতা না থাকাই যানজটের মূল কারণ

শরীয়তপুর: দিনকে দিন পরিবহনের সংখ্যা বাড়ায় স্বাভাবিক ধারণ ক্ষমতা হারিয়েছে শরীয়তপুর পৌরবাস টার্মিনাল। ছোট হওয়ায় টার্মিনালের গাড়ি দাঁড় কয়ে রাখা হয় রাস্তায়।

রাস্তার ওপরেই ক্ষণিকের স্ট্যান্ড বানিয়ে করা হয় যাত্রী ওঠা-নামা। যে কারণে যাগে যানজট। ফলে শরীয়তপুর-ঢাকা সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানটিতে যাত্রীদের পোহাতে হয় চরম মাত্রার ভোগান্তি। যাত্রী পরিবহন ছাড়াও অন্যান্য বাহনের চালকদেরও হয় বিপাকে পড়তে।

শরীয়তপুর পৌরবাস টার্মিনালের এ দৈন্যদশা মেলা দিনের। শোনা যায়, নব্বইয়ের দশকে জেলার অভ্যন্তরে বাসে যাত্রী পরিবহন শুরু হয়। তখন থেকেই রাস্তার ওপর বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করা হতো। সেই সিলসিলা এখনও বিদ্যমান।

সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করেন তৎকালীন সময়কার জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক (বর্তমান সভাপতি) ফারুক আহমেদ তালুকদার ও তার ভাই ফরিদ আহমেদ তালুকদার বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য বাঘিয়া ও চরপালং এলাকায় শরীয়তপুর পৌরসভাকে এক একর জমি দান করেন। ১৯৯৮ সালে পৌর কর্তৃপক্ষ সেই জমিতে বাস টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এরপর ২০১০ সালে সেখানে একটি ভবন নির্মাণ করে বাস টার্মিনালের যাত্রা শুরু করে পৌরসভা।

এ দিকে গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগ পর্যন্ত ওই টার্মিনাল থেকে জেলার সব উপজেলা, মাদারীপুর, খুলনা, বেনাপোল ও সাতক্ষীরায় বাস চলাচল করতো। কিন্তু পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ঢাকা-শরীয়তপুরে বাস চলাচল শুরু হয়। এ রুট দিয়ে জেলার অন্তত ৩০ হাজার যাত্রী প্রতিদিন ওই টার্মিনাল দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে। বর্তমানে সাড়ে ৩০০ বাস বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে। অথচ এ টার্মিনালে ধারণ ক্ষমতা রয়েছে মাত্র ৫০টি বাস রাখার। এর বাইরে অন্য বাসগুলো শহরের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়। কিছু বাস রাখা হয় সদরের প্রেমতলায় প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। এ অবস্থায় অতিদ্রুত শরীয়তপুর শহরে একটি বড় আকারের বাস টার্মিনাল নির্মাণের দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের বাস চালকরা জানান, টার্মিনালে পুরনো কিছু বাস রেখে জায়গা দখল করে রাখা হয়েছে। ঠিকভাবে কোনো বাস রাখা যায় না। যে কারণে ঢাকা যাতায়াতের সব বাস রাস্তায় রেখে যাত্রী তোলে। এতে যাত্রী ভোগান্তি তো আছেই, দুর্ঘটনার ঝুঁকিও থাকে।

যানজটের ব্যাপারে শরীয়তপুর পৌরসভায় চলাচলকারী ছোট ছোট যানবাহনের চালকরা বলেন, টার্মিনালের সংকটের কারণে যানজট চড়িয়ে পড়ে পুরো পৌরসভায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন পরিবহনের জট লেগে থাকে। এতে যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সাধারণ যাত্রী, স্থানীয়রা বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় বেশ বিরক্ত।

এ ব্যাপারে শরীয়তপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহমেদ তালুকদার বলেন, আমাদের পরিবারের দেওয়া জমিতে ছোট একটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছিল। তখন এত গাড়ি ছিল না। দিন দিন পরিবহনের সংখ্যা বেড়েছে। এখন আরও বড় টার্মিনাল জরুরি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর পরিবহন ব্যবসা সম্প্রসারিত হয়েছে। তাই যাত্রীদের পাশাপাশি আমাদেরও বিভিন্ন সমস্যা পোহাতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শহরের অভ্যন্তরে বড় পরিসরে একটি টার্মিনাল জরুরি। আমরা বিভিন্ন সময় পৌরসভাকে বিষয়টি নিয়ে অনুরোধ করেছি। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছি না।

শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট পারভেজ রহমান জন এ ব্যাপারে বলেন, শহরের বাইরে পৌর এলাকার মধ্যে বাস টার্মিনালটি সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ফান্ড না থাকায় জমি ক্রয় করা যাচ্ছে না। তাই এই উদ্যোগটিও তরান্বিত হচ্ছে না। জমি কেনা হলেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে বড় টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।