ঢাকা: রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে টিকিট কালোবাজারি চক্রের মূলহোতাসহ ছয় জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩)।
গ্রেফতাররা হলেন- চক্রের মূলহোতা মো. আব্দুল হাকিম (৩৭)।
অভিযানে তাদের কাছ থেকে ২১টি টিকিট, পাঁচটি মোবাইল, তিনটি সিমকার্ড, দুইটি মানিব্যাগ, একটি আইডি কার্ড ও টিকিট বিক্রির নগদ ৯ হাজার ৮১৮ টাকা জব্দ করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুর রাজধানীর টিকাটুলিতে র্যাব-৩ এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি জানান, কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিট কালোবাজারি চক্রের অন্যতম মূলহোতা মো. আব্দুল হাকিম। সহযোগীদের নিয়ে রেলস্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে এনআইডি ব্যবহার করে তারা টিকিট সংগ্রহ করতেন। এছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও ফোন নম্বর ব্যবহার করেও তারা টিকিট সংগ্রহ করতেন।
এরপর আব্দুল হাকিমের নেতৃত্বে ট্রেন ছাড়ার ৩/৪ ঘণ্টা আগে তারা বেশি দামে টিকিট বিক্রির তৎপরতা শুরু করতেন। ট্রেন ছাড়ার সময় যত ঘনাতে থাকে তাদের তাদের টিকিটের দামও বাড়তে থাকে। তারা দিগুণ দামে টিকিট বিক্রি করতেন। সুযোগ ও সময় বুঝে অনেক ক্ষেত্রে তারা টিকিটের দাম আরও বাড়িয়ে দিতেন।
তিনি বলেন, চক্রের সদস্যরা মূলত তূর্ণা নিশিথা, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, তিস্তা এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী, চট্টলা এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ও পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করতেন। চক্রটির আরও সদস্য ইউনিট রয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে ৫-৭ জন করে সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, চক্রের মূলহোতা আব্দুল হাকিম নিজ জেলা কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরিচয় ব্যবহার করে রেলস্টেশনে কর্মরত অসাধু একটি চক্রের যোগসাজশে ২০১৮ সাল থেকে টিকেট কালোবাজারির ব্যবসা শুরু করেন। তিনি মূলত নিজে টিকেট কাটার কাজ না করে তার সহযোগীদের দিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে টিকেট সংগ্রহ করাতেন। এরপর সে চড়ামূল্যে এসব টিকিট বিক্রি করতেন।
তিনি বলেন, কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বিভিন্ন জেলার রেলস্টেশন গুলোতেও তাদের এজেন্ট থাকত। তাদের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারির কার্যক্রম চলত। রেলস্টেশনে যে পরিমাণ টিকিট বরাদ্দ থাকে তার মধ্যে ৫০ শতাংশ বিক্রি হয় অনলাইনে। যার ফলে কাউন্টারে এসে অনেকে টিকিট না পেয়ে ফিরে যান। আর এই সুযোগটিই কাজে লাগান টিকিট কালোবাজারি চক্রের সদস্যরা।
চক্রটি অনেক সময় রিকশাচালক, কুলি, দিনমজুর এদের টাকার বিনিময়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে টিকিট সংগ্রহ করত। এছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবহার করেও টিকিট সংগ্রহ করত। সংগ্রহ করা টিকিট নিয়ে তারা রেলস্টেশনের ভেতরে ছড়িয়ে পড়তেন। ট্রেন ছাড়ার ঘণ্টা দুয়েক আগে যাত্রী সমাগম শুরু হলে তাদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। তারা তখন দিগুণ মূল্যে টিকিট বিক্রি করে থাকে। সুযোগ-সময় বুঝে অনেক ক্ষেত্রে তারা টিকিটের দাম আরও বাড়িয়ে দেয়। এটা তাদের স্বাভাবিক সময়ের কার্যক্রম।
ঈদসহ বিভিন্ন ছুটিতে চক্রটি টিকিট ৩-৪ গুণ বেশি মূল্যে বিক্রয় করে থাকে। ছুটিতে ৫০০ টাকার টিকিট সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকায়ও বিক্রি করেছে বলে জানায় তারা। এই পেশার মাধ্যমে তারা জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন বলে জানা যায়।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার হাকিম জানিয়েছেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার ক্লায়েন্ট রয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা মানুষের সুযোগ বুঝে চড়ামূল্যে কখনো দিগুণ-তিনগুণ মূল্যে টিকেটগুলো বিক্রির ব্যবস্থা করে থাকে। এভাবেই দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে হাকিম দেশব্যাপী টিকিট কালোবাজারির শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করে।
গ্রেফতার চক্রের সদস্য খোকন মিয়ার নামে টিকিট কালোবাজারির দায়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মোট ৫টি মামলা রয়েছে। তিনি র্যাব-৩ এর কাছে গত ২০ অক্টোবর গ্রেফতার হয়ে ৩২ দিন কারাগারে ছিলেন। জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি আবারও টিকিট কালোবাজারির কাজে যুক্ত হন।
চক্রের অপর সদস্য শামীমের নামে মাদক মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন। এ চক্রটির সদস্যরা বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়াশি অভিযানে গ্রেফতার হয়ে জেল খেটে জামিনে মুক্ত হন।
গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২২
এসজেএ/এমএইচএস