পাথরঘাটা (বরগুনা): ‘হঠাৎ মা-বোন আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে আগুন আগুন বলে চিৎকার দেয়। আমি দ্রুত ঘুম থেকে উঠে লঞ্চের নিচে চলে আসি।
‘দেখেছি মুহূর্তের মধ্যে কীভাবে তাজা প্রাণ অঙ্গার হয়ে যায়। মা-বোনকে আনার জন্য উপরে যাই। তাদের বললাম, আগুনে পুড়ে মরার চেয়ে পানিতে পড়ে মরলে লাশটা তো পাবে। চলো আমরা সবাই নদীতে ঝাঁপ দিই, অন্তত জীবনটা বাঁচাই। ’
ঢাকা-বরগুনা রুটে সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের এক বছর ছিল শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর)। সেই লঞ্চে ছিলেন বরগুনার শুভ কর্মকার। ভয়াবহ সেই স্মৃতি এখনো তাড়া করে কে।
তিনি বলেন, ‘চারদিকে পানি থাকা সত্ত্বেও আগুনে পানি দেওয়ার মতো সুযোগ ছিল না। অনেকের মতো আমরাও লঞ্চ থেকে লাফ দিই, প্রাণে বেঁচে যাই। প্রতি মুহূর্ত শিউরে উঠি, রাতে ঘুমাতে পারি না। ’
শুভ কর্মকার আরও বলেন, ‘আগুনের লেলিহান শিখা দেখে কেবিন থেকে ব্যাগ নিয়ে তিনজন বের হয়ে লঞ্চের ডেকের সামনে যাত্রী ওঠা-নামার স্থানে চলে আসি। প্রথমে মাকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিই। ’
তিনি বলেন, ‘আমার হাত থেকে কয়েকবার মায়ের হাত ছুটে যায়, অনেক কষ্ট করে মাকে নিয়ে তীরে যাই। কিছুক্ষণ পর লঞ্চে বোনকে আনতে যাই। বোনকে নিয়ে ঝাঁপ দিই। বহু কষ্টে সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হই। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি একাই সাঁতার জানি, মা-বোন সাঁতার জানে না, হয়তো সৃষ্টিকর্তা আমাকে শক্তি ও সাহস দিয়েছিলেন তখন। নদীতে ঝাঁপ না দিলে হয়তো আগুনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতাম। পৃথিবীর আলো আর দেখতে পেতাম না। ’
২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর ভোরে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মোট ৪৯ জন নিহত হন। আগের দিন সন্ধ্যায় ঢাকার সদরঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে বরগুনার উদ্দেশে ছেড়েছিল অভিযান-১০ লঞ্চটি। রাত ৩ টার দিকে সুগন্ধা নদীতে ইঞ্জিন বিস্ফোরিত হয়ে পুরো লঞ্চে আগুন ধরে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২২
আরএইচ