ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সরকারি কর্মসংস্থান প্রকল্পে কাজ করছে শিশুরা

এ কে এস রোকন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপনডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২২
সরকারি কর্মসংস্থান প্রকল্পে কাজ করছে শিশুরা ছবি: বাংলানিউজ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: শিবগঞ্জ উপজেলায় অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচি প্রকল্পে শিশুদের দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ উঠেছে। স্কুল-কলেজের ছাত্র ও প্রান্তিক শিশুদের এ কাজ করানো হচ্ছে!

সরকারি এ কর্মসংস্থান প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ আছে আরও।

জানা গেছে, প্রকল্পে ভুয়া শ্রমিক দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সভাপতিরা দুটি হাজিরা খাতায় কাজ চালাচ্ছেন। গড়মিলেরও অভিযোগ আছে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের হাজিরায়।  

উল্লেখ্য, শিবগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। এ ধারাবাহিকতায় রাস্তা, বাঁধ নির্মাণ ও স্কুলের মাঠ সংস্কার প্রকল্প হাতে নেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অতি দরিদ্রদের বাছাই করে কাজ বাবদ প্রতিদিন জনপ্রতি ৪০০ টাকা হিসেবে পারিশ্রমিক ধরা হয়েছে।

সরেজমিনে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে একটি বাস্তবায়ন করছেন প্রকল্প সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির। এক নম্বর ওয়ার্ড গোপালপুর চাপড় এলাকায় প্রকল্পের আওতায় রাস্তার সংস্কার কাজ চলছে। এতে কাজ করছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও শিশু।  

এ প্রকল্পে কাগজ-কলমে ৮৩ জন শ্রমিকের কথা উল্লেখ থাকলেও কাজ করছেন মাত্র ২১ জন। এর মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। পাশাপাশি কিছু কলেজ শিক্ষার্থীকেও সেখানে কাজ করতে দেখা গেছে। একই ইউনিয়নের দুই, ছয়, সাত ও নয় নম্বর ওয়ার্ডে রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে হাতে গোনা ১০-১২ জন করে শ্রমিকের দেখা মিলেছে।  

এ ছাড়া দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নের পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে তিনটি প্রকল্পে ও মনাকষা ইউনিয়নের চৌকা, রাঘববাটি, শিংনগর প্রকল্প, বিনোদপুর ইউনিয়নের নামো কালীগঞ্জ, লছমানপুর এলাকার প্রকল্পে একই চিত্র দেখা গেছে।

এদিকে কানসাট, মোবারকপুর, ধাইনগর, ছত্রাজিতপুর, নয়ালাভাঙা, দুর্লভপুর ইউনিয়নের প্রকল্পগুলোয় কাগজ-কলমে শ্রমিকের সংখ্যা বেশি থাকলেও বাস্তবে তা কম। এছাড়া বিনোদপুরের একটি প্রকল্পে বেলা ১১টার সময় কোনো শ্রমিককেই পাওয়া যায়নি।

মোবারকপুরের ঘোষলাদর এলাকায় সরজমিনে মাত্র ১১ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে। ওই প্রকল্পের সভাপতি শ্রমিকের সংখ্যা প্রকাশ না করলেও না অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এক শ্রমিক জানান, এ প্রকল্পে তাদের ৪০ জনের নাম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত পাঁচদিন ধরে মাত্র ১১ জন শ্রমিক কাজ করছেন।

নাম অপ্রকাশ রাখার শর্তে আরও কয়েকজন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, বেশিভাগ প্রকল্পের সভাপতিরা তাদের দেওয়া তালিকায় ভুয়া নাম যোগ করেছেন। এসব নামের বিপরীতে মোবাইল ফোনের সিম কার্ড নিজেদের কাছেই রাখেন তারা। আর কাজ করানোর জন্য হাজিরার অংশ হিসেবে রেখেছেন একটি খাতা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা গণমাধ্যমকর্মীরা গেলে কিংবা টাকা উত্তোলনের জন্য গোপন আরেকটি খাতা রয়েছে তাদের কাছে।  

প্রকল্পের পারিশ্রমিকের টাকা এলে সিম চালু করেন সভাপতিরা। পরে সেই টাকা তুলে অর্ধেক টাকা নাম থাকা শ্রমিকদের দেওয়া হয়। বাকি টাকা চলে যায় প্রকল্প সভাপতির পকেটে।  

এ ব্যাপারে মনাকষা, বিনোদপুর, শাহবাজপুর, নয়ালাভাঙাসহ কয়েকটি ইউনিয়নের পরিষদ চেয়ারম্যানদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে বা মুঠোফোনে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে চায় বাংলানিউজের এ প্রতিবেদক। কিন্তু তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি।  

তবে দাইপুখুরিয়া, ধাইনগর, কানসাট, মোবারকপুর, ছত্রাজিতপুরসহ কয়েকটি ইউপি চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন, তাদের প্রকল্পের কাজ স্বাভাবিকভাবেই চলছে। কোনো অনিয়ম হয়নি। শ্রমিকদের হাজিরার ক্ষেত্রে তারা সর্তকতা অবলম্বন করেন। যে শ্রমিকরা কাজ আসে না, তাদের অনুপস্থিত দেখানো হয়। স্বচ্ছতার সঙ্গেই কাজ চলছে বলেও দাবি করেন তারা।

এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, যেসব শ্রমিক কাজ করছেন, তাদের নিজস্ব বিকাশ নম্বরে প্রকল্পের ধার্যকৃত পারিশ্রমিক জমা হবে। এতে অর্থ আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই।  

শিশু শ্রমিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো প্রকল্পে শিশু শ্রমিক কাজ করলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রকল্পের সভাপতির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাজিরার ব্যাপারে আরিফুল ইসলাম বলেন, আমার সই করা প্রত্যায়নপত্র ছাড়া কোনো কাগজে হাজিরা করতে পারবে না। আর যাদের হাজিরা থাকবে না, তাদের টাকা ফেরত যাবে।  

বহু অনিয়মের মধ্যে কিছু ব্যাপারে স্বীকারোক্তিও দেন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আমি কয়েকটি ইউপির প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করেছি। কিছুটা অনিয়ম লক্ষ্য করেছি। তাদেরকে সর্তকতামূলক নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ৪০ দিনের ৭০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পে পনেরটি ইউনিয়নে চার হাজার ৫১০ জন শ্রমিক কাজ করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২২
এসআইএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।