সুনামগঞ্জ: ফসলের উদ্বৃত্ত উৎপাদন হলেও অভাব তাদের পিছু ছাড়ছে না। বছরের দুই থেকে চার মাস খাবারের অভাবে ভোগেন তারা।
কৃষির বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ায় তাদের এ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এছাড়া বড় ধরনের শিল্প-কারখানাও গড়ে ওঠেনি এ জেলায়। ফলে হাওর বেষ্টিত এ অঞ্চলে দারিদ্র্যের হারও বেশি। অথচ এখানকার উদ্বৃত্ত ফসল অন্য জেলার মানুষের চাহিদা পূরণ করে।
জেলার মোট আয়তনের ৮০ ভাগ জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষাবাদ করেন কৃষক। তাদের আয়ের প্রধান উৎস কৃষি। আর তাদের মধ্যে অধিকাংশই প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও ভূমিহীন। বর্তমানে চাহিদার চেয়ে বেশি চাল উৎপাদন হয় এ জেলায়। উদ্বৃত্ত থাকে অন্যান্য ফসলও।
জেলার সচেতন মহল বলছেন,বহুমাত্রিক আয়ের উৎস তৈরি করা প্রয়োজন। কৃষক বিনিয়োগ অনুপাতে লাভ করতে পারে না। এছাড়া কৃষিতে শ্রম অপচয় হয়। যেখানে দুজন দক্ষ শ্রমিক শ্রম দিলে হচ্ছে। কিন্তু সেখানে পরিবারের চার-পাঁচজন শ্রম দেওয়ায় বাড়তি শ্রম যাচ্ছে। বৃহৎ শিল্প-কারখানা না থাকায় এ অঞ্চলে বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের হার বেড়েই চলেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,কৃষির বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় সুনামগঞ্জে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ বা সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ গুরুতর দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। জেলার চাল উদ্বৃত্ত থাকে প্রায় চার লাখ টন। এছাড়া অন্যান্য খাদ্য শস্য চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়। এরপরও মানুষ বছরের চার মাসের বেশি সময় এক বেলা খাবার সংকটে ভুগছে। আর ১৫ শতাংশ বা চার লাখের বেশি মানুষ মধ্যম দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তারা বছরের দুই-চার মাস খাবারের অভাবে থাকে। তবে জেলার ৩৫ শতাংশ বাসিন্দা বা পৌনে ১০ লাখ মানুষ মৃদু ও দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বাকি ৩০ শতাংশ বা ৮ লাখ ৩০ হাজার মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ঠিক রয়েছে। এছাড়া জেলায় দারিদ্র্য হারের উচ্চরেখায় অবস্থান করছে ২৬ শতাংশ মানুষ।
জেলার শনি হাওর পাড়ের কৃষক হাবিবুর রহমান খেলু বলেন, বছরে এক ফসলি বোরো ধানের ওপর নির্ভরশীল আমার মতো হাজার হাজার কৃষক। বোরো ধান ভালো হলে সব কৃষকের ভাতের জোগান,ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া, সংসারের খরচসহ সব খরচ বহন করা হয়। এ এলাকার মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। সুযোগ না থাকায় হাওর অঞ্চলে দারিদ্র্যের হার বেশি।
জেলার টাংগুয়ার হাওর পাড়ের কৃষক হারিছ মিয়া বলেন, আমরা হাওরপাড়ের মানুষ অসহায়,দিনমজুর,গরিব। বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় বছরের ৬ মাসের বেশি সময় কর্মহীন থাকায় অভাব অনটন আর দারিদ্র্য পিছু ছাড়ে না। ফলে কষ্টে দিন কাটাতে হয়। এক ফসলি বোরো ধান চাষাবাদ করতে গিয়ে ঋণ করতে হয়, সে টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে একমাত্র ফসল বোরো ধান গোলায় তোলার আগেই ঋণগ্রস্ত কৃষক পরিবারের মানুষ ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে ধান-চাল বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এ কারণেই বছর শেষে আমাদের খাদ্যের সংকট দেখা দেওয়ার কারণে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও দরিদ্রতা দূর হয় না।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, হাওরাঞ্চলের মানুষ খাদ্য শস্য মজুদ না করার কারণে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। মূলত খাদ্য উৎপাদনে এগিয়ে থাকা জেলাগুলোতে শিল্পায়ন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে দারিদ্র্য পিছু ছাড়ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২২
জেএইচ