মাদারীপুর: সেপটিক ট্যাংক ভেঙে ফেলার অভিযোগে মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ(ইউএনও) সাতজনকে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১১ জানুয়ারি) ডাসার উপজেলার ডাসার গ্রামের সৈয়দ নওশেদ আলীর পক্ষে এ নোটিশ দেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. নুরুল ইসলাম চৌধুরী।
নোটিশপ্রাপ্তরা হলেন- ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমীন ইয়াছমীন, ডাসার ইউনিয়নের ৮ নম্বর ইউপি সদস্য সজীব মাতুব্বর, ডাসার গ্রামের সৈয়দ আজাদ আলী, সৈয়দ কাওসার হোসেন, সৈয়দ আখতার হোসেন, সৈয়দ আলাউল হোসেন ও সালেহা বেগম।
নোটিশ সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার ৩২ নম্বর ডাসার মৌজার ৪৮৪ খতিয়ানের ৬৩৩ নম্বর দাগের মোট সম্পত্তির ২৯ শতাংশ ভিটেবাড়ি। এরপাশে একই মৌজার ৮৯৩ খতিয়ানের ৬৩৪ নম্বর দাগের ২৪ শতাংশ ব্যক্তি মালিকানাধীন। এ জমিতে সরকারি কিংবা পরিত্যক্ত হিসেবে বর্তমানে কোনো রেকর্ড নেই। কিন্তু গত ২৯ ডিসেম্বর ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমীন ইয়াছমীনসহ ৭ জন উপস্থিত হয়ে ওই দাগ ও খতিয়ানের ওপর নির্মিত একটি সেপটিক ট্যাংক লোহার সরঞ্জামাদি দিয়ে আঘাত করে ভেঙে ফেলেন। যা দণ্ডবিধির ৪৪৭/৪৪৮/১১৪ ধারা মতে অপরাধের শামিল।
এদিকে স্থাপনা ভেঙে ফেলার আগে কোনো নোটিশ প্রদান বা শুনানি করা হয়নি বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তের। এটিও বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭ ও ৩১ অধ্যাদেশ লঙ্ঘন হয় বলে লিগ্যাল নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া ঘটনার সময় নোটিশ দাতাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও কারাদণ্ডের হুমকি দেওয়া হয়। এতে সৈয়দ নওশেদ আলী সামাজিকভাবে হেয় হন। এর ক্ষতিপূরণ ৫০ লাখ টাকা ও স্থাপনা ভেঙে ফেলার ক্ষতি হিসেবে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। নোটিশ দেওয়ার সাতদিনের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না দিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সাতজনের নামে ফৌজদারি আইনে মামলা দায়ের কথা বলে হয়েছে লিগ্যাল নোটিশে।
ক্ষতিগ্রস্ত সৈয়দ নওশেদ আলী বলেন, ঘটনার দিন পরিবারের সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সাথে থাকা লোকজন। এমনকি জেল-জরিমানার হুমকিও দেওয়া হয়। স্থাপনা ভেঙে ফেলার আগে কোনো দপ্তর থেকে আমাদের নোটিশ কিংবা শুনানি করেনি। আমার মোট ৫৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে মানসম্মান ক্ষুণ্ন বাবদ ৫০ লাখ ও সেপটিক ট্যাংক ভেঙে ফেলায় ৫ লাখ টাকা। আমি এই ক্ষতিপূরণ ও যারা ঘটনায় জড়িত সবার বিচার চাই। ’
সৈয়দ নওশেদ আলীর ছেলে সৈয়দ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যায়ভাবে আমাদের জমির ওপর নির্মিত স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় যারা জড়িত সবার সুনির্দিষ্ট বিচার দাবি করছি। ’
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা ভূমি সহকারী কমিশনার (ডাসার উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে) মো. কায়েসুর রহমান বলেন, ‘জায়গাটি সরকারি কিনা, পুনরায় তদন্ত করে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত দেওয়া হবে। স্থাপনা ভেঙে ফেলার ব্যাপারে তিনি সঠিক কোনো উত্তর দিতে পারেননি। আদৌ, জমির মালিককে, সেটাও তিনি সঠিকভাবে জানেন না বলে মন্তব্য করেন। ’
ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমীন ইয়াছমীন বলেন, ‘আগের অ্যাসিলান্ডের (ভূমি সহকারী কমিশনার) স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ওই জায়গাটি সরকারি বলে মন্তব্য করেন। যে কারণেই সরেজমিনে গিয়ে সেপটিক ট্যাংক ভেঙে ফেলা হয়। সরকারি জায়গা উচ্ছেদ করাই মূল উদ্দেশ্য ছিল। এই ঘটনায় আইনজীবীর পাঠানো লিগ্যাল নোটিশ হাতে পেয়েছি। বিষয়টি যথা সময়ে উত্তর দেওয়া হবে। ’
মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ঝোটন চন্দ বলেন, ‘কোনো কারণে ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্থাপনা ভেঙে ফেলেছে বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে। দোষ পাওয়া গেলে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৩
এএটি