ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সেলাই শিখে আত্মকর্মসংস্থানে চা বাগানের প্রতিবন্ধী নারীরা 

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩
সেলাই শিখে আত্মকর্মসংস্থানে চা বাগানের প্রতিবন্ধী নারীরা  সেলাই এর মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানে প্রতিবন্ধী নারীরা।

মৌলভীবাজার: কমলগঞ্জ উপজেলার শমশের নগর চা বাগানে আত্মকর্মসংস্থানের পথে পা রেখেছেন প্রতিবন্ধী নারীরা। চা জনগোষ্ঠী প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

 

প্রতিবন্ধী চা শ্রমিক সন্তান উত্তম যাদবের নিজ উদ্যোগে গত দুই বছর ধরে এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। এতে প্রতিবন্ধী নারীরা আত্মকর্মসংস্থানে নিজেরা পথ খুঁজছেন। ইতোমধ্যে সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে চা বাগানের ৩০ জন নারী নিজ নিজ বাসায় কাজ করছেন।

শমশের নগর চা জনগোষ্ঠী প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, চা বাগানে প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলায় ২৪টি চা বাগানে ৫১৩ জন প্রতিবন্ধী রয়েছেন। তারা অসহায় অবস্থায় জীবন ধারণ করছেন। তাদের জীবনমান উন্নয়নে ও আত্মপ্রতিষ্ঠায় সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। দ্বিতীয় দফায় গত বছরের ১০ ডিসেম্বর থেকে ৩০ জন নারীকে নিয়ে ৫০ দিনের প্রশিক্ষণ শুরু হয়।

সংগঠনটির সভাপতি উত্তম যাদব বলেন, প্রতিবন্ধীদের অনেকেই বোঝা মনে করে। আমি নিজেও একজন প্রতিবন্ধী। তাই প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পর থেকে চা বাগানের প্রতিবন্ধীরা যাতে ঘরে বসে আয় করতে পারেন সেজন্য সেলাই প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিই। আমাদের প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থায়নেই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। যাতে প্রতিবন্ধী প্রত্যেকেই আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠে। প্রতিষ্ঠানে ১০টি সেলাই মেশিনে প্রতিদিন ১৫ জন করে দুই শিফটে ৩০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

তিনি জানান, সেলাই প্রশিক্ষণ সেন্টারের প্রশিক্ষক শমশের নগর চা বাগানের শ্রমিক সন্তান অসীম পাল অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এ প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন।  পরিষদ থেকে তাকে প্রায় ৬/৭ হাজার টাকা মাসিক সম্মানী প্রদান করা হয়।

উত্তম যাদব আরও বলেন, অর্থাভাবে প্রতিষ্ঠানটিতে আরও নতুন সেলাই মেশিন কেনা সম্ভব হচ্ছে না। জাগরণ যুব ফোরামের সভাপতি মোহন রবিদাসের প্রচেষ্টায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নাগরিক উদ্যোগ কর্তৃক ৩০টি সেলাই মেশিন বরাদ্দ করা হয়েছে।  উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিস বেগম প্রশিক্ষণ নেওয়া এক প্রতিবন্ধী নারীকে একটি সেলাই মেশিন উপহার দেন। এছাড়া শমশের নগর ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নে নগদ ১০ হাজার টাকা অর্থ বরাদ্দ দেন।  

তিনি আরও জানান, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত উদ্দিনের মাধ্যমে ৩০ জন প্রতিবন্ধী নারীকে ৩০টি কম্বল দেওয়া হয়। করোনাকালীন সময়ে জনপ্রতি এক হাজার টাকার খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হয় তাদের।  

এছাড়া আর কোনো সরকারি সহায়তা পাওয়া যায়নি বলে জানান উত্তম যাদব।

চা শ্রমিক নেতা সীতারাম বীন বলেন, চা জনগোষ্ঠী প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদের মাধ্যমে চা বাগানের প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে কাজ করছে। এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এই প্রতিষ্ঠান নারী প্রতিবন্ধীদের সমাজের সম্পদ হিসাবে গড়তে চায়। এজন্য সরকারি উদ্যোগে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে প্রতিষ্ঠানটি উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি লাভ করবে।

কমলগঞ্জ উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিস বেগম বলেন, প্রতিবন্ধী নারীদের উন্নয়নে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদানে আমরা সচেষ্ট আছি। সেলাই প্রশিক্ষণ নেওয়া  চা শ্রমিক প্রতিবন্ধী নারীরা সংগ্রামী ও ত্যাগী। তাদের সাফল্য সমাজের অন্য নারীদের পথ দেখাবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এসব প্রতিবন্ধী নারীরা বোঝা নয়, সম্পদে পরিণত হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩
বিবিবি/এসএএইচ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।