ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ফোনে মেসেজ দিয়ে মামলার বাদীকে এসআইয়ের হুমকি!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩
ফোনে মেসেজ দিয়ে মামলার বাদীকে এসআইয়ের হুমকি!

সিরাজগঞ্জ: মোবাইল ফোনে মেসেজ দিয়ে মামলার বাদীকে হুমকি দিলেন সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের নাটুয়ারপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসান।

মেসেজে তিনি বাদীকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, 'তুই ইয়াবা খাস, ইয়াবা বিক্রি করস।

পুলিশ কি জিনিস তরে চিনাব'। অপর একটি মেসেজে তিনি লেখেন,'তরে পাগলা গারদে পাঠামু, তুই নদী পার হয়ে আসিস। '

বিষয়টি কাজিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) জানালে তিনিও বাদী ও তার মায়ের সঙ্গে খাবার ব্যবহার করেন। মামলার বাদী হয়েও পুলিশ আতঙ্কে বাড়িতে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না বাদী মো. রাশেদুল ইসলাম।

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) এ বিষয়ে পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করেছেন কাজিপুর উপজেলার যমুনার দূর্গম চরাঞ্চলের ডিক্রী দোরতা গ্রামের মৃত আজম আলী সেখের ছেলে রাশেদুল ইসলাম।

লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাশেদুল ইসলামের মেজ ভাই রুহুল আমিন বাবলুর সঙ্গে বাকি চার ভাইয়ের জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। এরই জের ধরে গত বছরের অক্টোবর মাসে মারপিটের ঘটনা ঘটে। এ সময় রুহুল আমিন বাবলু গংয়ের হামলায় রাশেদুল ইসলামসহ চারজন আহত হন। এ ঘটনায় রাশেদুল ইসলাম বাদী হয়ে নয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা করেন। মামলাটির তদন্তভার পড়ে নাটুয়ারপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসানের ওপর।

মামলার তদন্তভার পাওয়ার পরই অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগসাজসে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বাদীকে হুমকি দেন এসআই। এমনকি চলতি বছরের ২ জানুয়ারি মাহমুদুল হাসান তার মোবাইল ফোন থেকে বাদীকে 'তুই ইয়াবা খাস, ইয়াবা বিক্রি করস। পুলিশ কি জিনিস তরে চিনাব!' এমন একটি হুমকির মেসেজ পাঠান।

বিষয়টি জানাতে কাজিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল কুমার দত্তের কাছে গেলে তিনিও বাদীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। জমির দাবি ছেড়ে দিতে বলে বাদীর বৃদ্ধ মা লাইলী বেগমকে ওসি বলেন, বুড়ো বয়সে পোলাপান নিয়ে ব্যবসা শুরু করছোস। ছোট ভাই স্বাস্থ্য সহকারি মনিরুজ্জামানকেও হুমকি দেন তিনি।

লিখিত অভিযোগে বাদী আরও উল্লেখ করেন, খরচ চালানোর কথা বলে ২০ হাজার ও ওসি সাহেবের কথা বলে আরও ২০ হাজার টাকা নেন মাহমুদুল হাসান। তারপরও তদন্ত প্রতিবেদনে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়েছেন তিনি।

বাদীর বড় ভাই নুরুল আমিন বাহাদুর বলেন, আমাদের বাপের সম্পত্তি দিচ্ছে না আমার ভাই। আমরা চার ভাই, এক বোন ও মা এক হয়ে বলেও তিনি আমাদের সম্পত্তিতে অধিকার দিচ্ছে না। বাড়ি করতে, ধান লাগাতে দিচ্ছে না। পুলিশ কেন তার পক্ষ নিচ্ছে। পুলিশ থাকবে আইনের পক্ষে। আমরা মামলা করেছি আইনের গতিতে চলবে।

অপর ভাই শেখ রাশেদ মঞ্জু বলেন, মামলা করার পর পুলিশ আমাদের হুমকি দেয়। আমি বাড়িতে না থাকায় পুলিশের এসআই মাহমুদুল হাসান আমার স্ত্রীকে হুমকি দিয়েছেন। আমার ভাই স্বাস্থ্য সহকারী মনিরুজ্জামানের চাকরি খাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। গাজা-ইয়াবার মামলা দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি।

নিশ্চিন্তপুর ইউপি সদস্য তফাজ্জল হোসেন বলেন, রাশেদুলের ভাইয়ের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে বিরোধ আছে। রাশেদুলকে মাদক ব্যবসায়ী বলা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নয়।

নাটুয়ারপাড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, ভাইদের জমিজমা নিয়ে সমস্যা। মামলাটি তদন্ত করছে মাহমুদুল। তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছেন। অনেক সময় পুলিশ রাগ করে দু-একটা কথা বলতে পারে। কিন্তু এমন মেসেজ দেওয়ার তো কথা না। এখন কথা বলার পরিপ্রেক্ষিতে যদি কোনো কমবেশি হয় আরকি। আর টাকা-পয়সার লেনদেনের বিষয়টি কেউ তো দেখে না। তদন্ত করলে এমনি বের হবে।

এ বিষয়ে জানতে এসআই মাহমুদুলকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

কাজিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল কুমার দত্ত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কেউ যদি সাইকো হয়-তাহলে কেমন হয় বুঝলেন। আমার কাছে যে ছেলে আসছিল সে কমিউনিটি ক্লিনিকে চাকরি করেন। তার উগ্র আচরণ। খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি, তার মানসিক সমস্যা আছে। মামলা তুলে নেওয়ার হুমকির বিষয়টি আমার জানা নেই।

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মণ্ডল জানান, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (সদর সার্কেল) ঘটনাটি তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।