ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সেকেন্ড হোমের বিষয়ে যা বললেন মোকাব্বির

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩
সেকেন্ড হোমের বিষয়ে যা বললেন মোকাব্বির

ঢাকা: সংসদের বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্য, আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদদের অনেকেই দেশের অর্থ লুটপাট করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বেগমপাড়া, সেকেন্ড হোম, থার্ড হোম তৈরি করেছেন। এটা আমার কথা না প্রতিনিয়তই এসব খবর আমরা গণমাধ্যমে দেখতে পাই।

গত কয়েক দিন আগেও একজন আমলার যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ির চিত্র গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। এ সেকেন্ড হোম নিয়ে কথা বললে দেখা যাবে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসবে।

রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরামের সংসদ সদস্য (এমপি) মোকাব্বির খান এসব কথা বলেন। সংসদ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

মোকাব্বির খান বলেন, গত ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী আমার এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে আমার সম্পর্কে কিছু কথা বলেছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই আপনি সঠিক তথ্য নিয়ে কথাগুলো বলেননি, তাই আমার অবস্থানটা একটু পরিষ্কার করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমি বিরোধী দলে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছি। আমার সেকেন্ড হোমের কথা বলেছেন, আমার বিলাসী জীবনযাপনের কথা বলেছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই, তিনি এ কথাগুলো না বললে আমার হয় তো বলার সুযোগ হতো না। শক্তিশালী বলেন, আর দুর্বল বলেন এটাই সত্য যে বর্তমানে এ সংসদে আমিই একমাত্র সত্যিকার বিরোধী দলের সদস্য। যারা বিরোধী দলে আছেন আমার জাতীয় পার্টির বন্ধুরাসহ অন্যান্য যারা আছেন তারা মহাজোটেরই শরিক। প্রধানমন্ত্রী ইংল্যান্ডে আমার একটি সেকেন্ড হোমের কথা বলেছেন। হ্যা, যুক্তরাজ্যে আমার সেকেন্ড হোম আছে, সেটা গোপনীয় কিছু নয়। আর এটা নিয়ে আমার বিব্রত হওয়ারও কিছু নেই। আমার সৌভাগ্য হয়েছে আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতার নাম বলতে চাই না, এখানেও আছেন, তারা আমার ওই সেকেন্ড হোমে গিয়েছেন। তবে আমি বলতে চাই লুটপাটের অর্থ তো নয়ই, এমন কি বাংলাদেশ থেকে পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রির কোনো টাকা নিয়েও সেই সেকেন্ড হোম আমি তৈরি করিনি। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে আমি ইংল্যান্ডে অত্যন্ত সফলভাবে ব্যবসা করে সেই বাড়ির মালিক হয়েছি, এখন আমার পরিবার সেই বাড়িতে বসবাস করছে।

মোকাব্বির খান বলেন, আমি ইংল্যান্ডে ব্যবসা করতাম তখন একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে সেখানে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেছি, বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করেছি। এ সংসদের অনেকেই এমপি হওয়ার সুবাধে হয়তো শত শত বা হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, একাধিক গাড়ি, বাড়ি, অট্টালিকার মালিক হয়েছেন। কিন্তু যেদিন থেকে আমি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করলাম সেদিন থেকে আমার জীবনের মোড় পাল্টে গেলো। বিশেষ করে সংসদ সদস্য হওয়ার পর জীবনের বিলাসিতা ছেড়ে নিজেকে জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছি। চেষ্টা করি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতার দর্শনকে ধারণ করে একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হতে। অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্য। আমার মতো হতভাগা এমপি হয়তো এ সংসদে একজনও নেই। আমি হলফ করে বলতে পারি বাংলাদেশে আমার নামে কোথাও ফ্ল্যাট, প্লট বা কোনো স্থাবর সম্পত্তি নেই। আমি সরকারি কোনো ফ্ল্যাট বা প্লটের জন্য আবেদনও করিনি। এমপি হওয়ার সুবাধে ন্যাম ভবনে একটি ফ্ল্যাট বরাদ্দ পেয়েছি সেটিতে বসবাস করছি। সিলেটে পৈতৃক যে বাড়িটি আছে সেটাও নিজের নামে করার সুযোগ হয়নি। রাজনীতি করলে ঢাকায় নিজের একটা ঠিকানা থাকা দরকার মনে করে উত্তরায় একটি বাড়ি কিনেছিলাম, ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস সংসদ সদস্য হওয়ার পর অর্থাভাবে এটিও বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। আমি হয়তো একমাত্র সংসদ সদস্য যার কোনো গাড়ি নেই। এমপি হওয়ার সুবাদে ট্যাক্স ফ্রিতে একটি গাড়ি নেওয়ার সুযোগ থাকলেও আমি সেই গাড়িটি নেইনি এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটা নেবো না। ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি একজন সংসদ সদস্যের আইন সিদ্ধ অধিকার। বিবেক, নীতি-নৈতিকতার কাছে সেটি স্বস্তিদায়ক মনে হচ্ছে না। একটি ভাড়া গাড়িতে চলাফেরা করি এবং এমপি হিসেবে যে সম্মানী ভাতা পাই বাকিটা ইংল্যান্ডে আমার পরিবারের কাছ থেকে নিয়ে জীবনযাপন করি।

তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে সেটা আমরা অস্বীকার করি না, এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি কোভিডের আঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অর্থপাচার, কিছু কিছু জায়গায় সরকারের অব্যবস্থাপনা, ব্যাংকিং এবং আর্থিক খাতে ব্যাপক লুটপাটের কারণে দ্রব্যমূল্য আজ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এটা কোনোভাবেই অস্বীকার করার সুযোগ নেই। বাজারে গেলে দেশে কোনো সরকার আছে বলে মনে হয় না। যে যেভাবে খুশি সেভাবেই লুটপাট করছে তাদের কোনো বিচার হচ্ছে না। আজ মধ্যবৃত্ত, নিম্ন মধ্যবৃত্তরা সবচেয়ে খারাপ অবস্থায়। অনেকে দরিদ্রসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। সরকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ন্যায্যমূল্যের কার্ড দিচ্ছে। এখানেও মারাত্মক অব্যবস্থাপনা ও দুনীতি হচ্ছে। এ কার্ডগুলো ৮০ শতাংশ দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দেওয়া হচ্ছে, চাইলে ভুরি ভুরি প্রমাণ আছে। দুর্নীতিবাজ ও অসাধু ব্যবসায়ী সব সময় মানুষের কষ্টকে পুঁজি করে লুটপাট করে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো, আগেও বলেছি আজকেও দাবি করছি এসব সেরা দুর্নীতিবাজ, লুটেরাদের আইনের আওতায় এনে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে কয়েকজন শীর্ষ দুর্নীতিবাজ, লুটেরাদের সর্বোচ্চ সাজা দিন। আমি হলফ করে বলতে পারি দুর্নীতি অনেক কমে যাবে। আশা করি প্রধানমন্ত্রী আপনি জাতির পিতার কন্যা সাধারণ মানুষের কষ্টের কথাগুলো মাথায় নিয়ে বিষয়গুলো আপনি বিবেচনা করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৩
এসকে/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।