ঢাকা: গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় ব্যাটারি অটোরিকশা চালাতো কিশোর মো. আজাদ (১৬)। সে প্রতিদিনের মতো গত ৪ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) বিকেল ৩টার দিকে অটোরিকশা নিয়ে বের হয়ে আর বাসায় ফেরেনি।
পরদিন ৫ ফেব্রুয়ারি কালিয়াকৈর থানার গোসাত্রা এলাকার পশ্চিম চকের আফজাল দেওয়ানের সবজি ক্ষেতে তার গলা ও পুরুষাঙ্গ কাটা মরদেহ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় আজাদের বড়ভাই কালিয়াকৈর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
কে বা কারা এই তাকে হত্যা করেছে তার কোনো ক্লু ছিল না। তবে আজাদের মরদেহ উদ্ধারের সময় তার মাথার নিচে একটি স্টিলের রক্তমাখা ধারালো চাকু পাওয়া যায়।
পরে ঘটনাস্থলে সেই রক্তমাখা চাকু ও বিভিন্ন আলামত বিশ্লেষণ করে বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ভোরে কালিয়াকৈরের হরিণহাটি এলাকা থেকে হত্যার জড়িত মো. নাহিদ হোসেনকে (২২) গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১। এ সময় তার কাছ থেকে আজাদের ব্যবহৃত ১টি মোবাইল ফোন, ছিনতাই হওয়া অটোরিকশা ও নগদ ৩ হাজার ৫৮০ টাকা জব্দ করা হয়।
আটক নাহিদ হোসেন টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানার আতাউর মন্ডলের ছেলে। বর্তমানে কালিয়াকৈর থানা এলাকায় বসবাস করেন।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফট্যানেন্ট কর্ণেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।
এ সময় তিনি হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন। জানান, র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামি নাহিদ হোসেন হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে নাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, ২ বছর আগে গাজীপুরের কালিয়াকৈর হরিণহাটি এলাকায় এসে রিকশাভ্যানে করে কাঁচা তরকারির ব্যবসা শুরু করেন। ভুক্তভোগী আজাদও ওই এলাকায় অটোরিকশা চালাতো। প্রতিদিন কাঁচা তরকারী আনা/নেওয়ার মাধ্যমে আজাদের সঙ্গে নাহিদের পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে কাঁচা তরকারির ব্যবসা বাদ দিয়ে নাহিদও একটি অটো রিকশা কেনেন।
গত ৩ জানুয়ারি অটোরিকশার ব্যাটারি কেনার জন্য নাহিদ তার বাড়ির পাশের জেলা মানিকগঞ্জের আমতলীর আলোর প্রত্যাশা সমবায় সমিতি থেকে নিজের নামে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। ওই টাকা নিয়ে গাজীপুরের ফিরে এসে ব্যাটারি কিনতে দোকানে যাওয়ার পথে আজাদের সঙ্গে দেখা হয়। নাহিদকে তার অটোরিকশায় যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে আজাদ। পরে তারা সফিপুর থেকে আনসার একাডেমি হয়ে নির্জন জায়গায় জঙ্গলের মাঝখানের রাস্তায় পৌঁছালে আজাদ প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য অটোরিকশা থামায়। এসময় ২ জন অপরিচিত লোক ভয়ভীতি দেখিয়ে নাহিদের সঙ্গে থাকা ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
জিজ্ঞাসাবাদে নাহিদ আরও জানায়, এই ছিনতাইয়ের ঘটনায় সে মনে মনে আজাদের জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ করে এবং প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নাহিদ ভুক্তভোগী আজাদকে ফোন দিয়ে কাঁচা তরকারি পরিবহনের জন্য ডাকেন। নাহিদ সফিপুর বাজারের ফুটপাত থেকে ৩০ টাকা দিয়ে একটি চাকু কিনে পকেটে লুকিয়ে রাখেন।
আজাদ অটোরিকশায় করে কাঁচা তরকারি আনার জন্য রওয়ানা হয়ে কালিয়াকৈরের গোসাত্রা পাড় হয়ে চান্দাবহ কবর স্থানের মোড়ে আসলে থামাতে বলেন নাহিদ। এরপর অটোরিকশাটি সেখানে রেখে হেঁটে আজাদকে কাঁচা তরকারি আনার কথা বলে কৌশলে মাঠের (চকের) মধ্যে অন্ধকারে নিয়ে গলা টিপে ধরে মাটিতে ফেলে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ওই চাকু দিয়ে আজাদকে জবাই করে। পরে আজাদের পুরুষাঙ্গ ও অন্ডকোষ কেটে দেহ থেকে বিছিন্ন অবস্থায় ফেলে রেখে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যান নাহিদ।
এরপর ছিনতাইকৃত অটোরিকশাটি কালিয়াকৈরের হরিণহাটি (এপেক্স রোড) এলাকার ফেদু মাতাব্বর কলোনি অ্যান্ড টাওয়ারের নিচতলার অটো গ্যারেজে নিয়ে রেখে দেন।
গ্রেফতার আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়:১৭৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৩
এসজেএ/এমএমজেড