লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম রকি ও তার ভাই আওয়ামী লীগ নেতা রাকিব পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে পরিবহন মালিকদের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে।
চাঁদা না দেওয়ায় লক্ষ্মীপুর-ফেনী রুটের ‘যমুনা হাই ডিলাক্স’ পরিবহনের একটি বাস চালকের সহযোগী খোরশেদ আলমকে মারধর করা হয়।
এছাড়া গত তিনদিন ধরে টার্মিনালের কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতা রকি ও তার ভাই রাকিবের বিরুদ্ধে। রাকিব লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাস বন্ধ রেখে লক্ষ্মীপুর জেলা বাস টার্মিনালে মানববন্ধন করেছেন বাস মালিক ও শ্রমিকরা।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন যমুনা বাসের মালিক হাবিবুর রহমান, চালক জাবেদ পাঠান, বেল্লাল হোসেন, শ্রমিক নেতা রাজীব আহমেদ, শাকিল আহমেদ, বাস চালকের সহযোগী মোরশেদ আলম প্রমুখ। কাউন্টার বন্ধ, বাসে যাত্রী নেওয়াতে বাঁধা ও শ্রমিক মোরশেদকে মারধরের বিচার চেয়েছেন মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা।
বৃহস্পতিবারও (৯ ফেব্রুয়ারি) বন্ধ রয়েছে কাউন্টার।
এদিকে বাস বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে লক্ষ্মীপুর-ফেনী রুটের যাত্রীদের। এর মধ্যে অনেকেই প্রতিদিন সকালে লক্ষ্মীপুর থেকে ফেনী গিয়ে কাজে যোগ দেন।
আবার রাতে বাড়িতে ফিরে আসেন। বাস বন্ধ থাকায় তারা লোকাল বাসে যাতায়াত করে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
মানববন্ধনে যমুনা হাই ডিলাক্সের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মিলন বলেন, লক্ষ্মীপুর-ফেনী রুটে যমুনার ৫২টি বাস রয়েছে। ১৫ বছর এ রুটে তারা পরিবহন ব্যবসা করছেন। কখনও কাউকে চাঁদা দিতে হয়নি। ছাত্রলীগ নেতা রকি হঠাৎ করে প্রতিনিধির মাধ্যমে তার কাছ থেকে মাসিক এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এতে অস্বীকৃতি জানালে ছাত্রলীগ নেতা ক্ষিপ্ত হন। পরে রকি ও তার ভাই রাকিব পাটওয়ারী দুই লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করেন। কোনোভাবেই রাজি না হওয়ায় গত চার মাস ধরে তারা সমস্যা সৃষ্টি করে আসছেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি বাস টার্মিনালের কাউন্টারে তালা দিয়ে দিয়েছেন। গত তিনদিন ধরে প্রতিটি কাউন্টারের সামনে তারা তাদের লোকজন পাহাড়া দিচ্ছে এবং তারা বাসে যাত্রীদের উঠাতে দিচ্ছে না। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াটার দিকে জকসিন বাজার এলাকায় বাসে উঠে ৮-১০ জন চালক ও তার সহযোগীকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়। পরে চন্দ্রগঞ্জ বাজার এলাকায় গেলে তারা চালকের সহযোগীকেও মারধর করে। এ ঘটনায় আমরা স্থানীয় পুলিশ হেডকোয়ার্টারে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছি।
আবুল কাশেম মিলন আরও বলেন, এর আগে কখনও ছাত্রলীগের কেউ আমাদের থেকে চাঁদা দাবি করেনি। এ প্রথম এমন ঘটনা ঘটেছে। এখন ছাত্রলীগকে চাঁদা দিলে কিছুদিন পর অন্যদেরও দিতে হবে। নির্বিঘ্নে ব্যবসা করার লক্ষ্যে আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম রকি বলেন, যমুনা পরিবহনে আমাদের মালিকানাধীন তিনটি বাস রয়েছে। প্রতিদিন প্রতিবাস থেকে ৬০০ টাকা করে নেয় যমুনা হাই ডিলাক্স বাস পরিবহন কর্তৃপক্ষ। ওই টাকা না নেওয়ার জন্য বলায় চেয়ারম্যানসহ কর্তৃপক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে। চেয়ারম্যানের কাছ থেকে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। বাস চালকের সহযোগীকে কে বা কারা মারধর করেছে তা আমরা জানি না।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, চাঁদা দাবির অভিযোগ ও বাস বন্ধে জনগণের দুর্ভোগ লাগবে উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২৩
এসআরএস