ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

চোখে আলো ফিরে পেলেন সিলেটের ১৭২ চা শ্রমিক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩
চোখে আলো ফিরে পেলেন সিলেটের ১৭২ চা শ্রমিক

সিলেট: চোখে ছানি পড়ে অন্ধত্ব বরণের পথে ছিলেন চা শ্রমিক সন্তুষ নায়েক। কাজ করতে পারতেন না বাগানে।

থাকতে হয়েছে পরনির্ভরশীল হয়ে। বিনা খরচে অস্ত্রোপচারের পর তার চোখে আলো ফিরেছে। এখন নিয়মিত কাজেও যান তিনি।   

চোখে আলো ফিরে পাওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে উপকারভোগী চা শ্রমিক সন্তুষ নায়েক বলেন, আমি নীরিহ মানুষ। যে উপকার পেয়েছি, সেটা ভুলার নয়। যাদের জন্য আজ চোখে দেখতে পারছি, তাদের কাছে চিরঋণী। কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই।

পয়তাল্লিশোর্ধ্ব চা শ্রমিক নমিতা মাহালি বলেন, অপারেশনের পর চোখে দেখতে পারছি। যারা চোখের আলো দেখিয়েছেন, তাদের ধন্যবাদ।

শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) উপমহাদেশের প্রথম চা বাগান মালনীছড়া চা বাগানের কোম্পানি বাংলোয় আয়োজিত অরবিস ইন্টারন্যাশনাল ও নয়ন ফাউন্ডেশনের মধ্যে ‘সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর’ অনুষ্ঠানে চা শ্রমিকরা তাদের চোখে আলো ফিরে পাওয়ার অনুভুতি ব্যক্ত করেন। ‘

‘সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর’অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আর্তমানবতার সেবায় নিবেদিত রাগীব রাবেয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. রাগীব আলী।

বিশেষ অতিথি ছিলেন সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও অরবিস ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ার অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন।

অরবিস ইন্টারন্যাশনাল ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘নয়ন ফাউন্ডেশন’র উদ্যোগে সিলেটের মালিনীছড়া ও লাক্কাতুড়া চা বাগানের ১৭২ শ্রমিকের চোখে ছানি অস্ত্রোপচার করা হয়।

প্রাথমিক পর্যায়ে দু’টি চা বাগানে সার্ভে করে ১ হাজার ৮৮৫ জনের চোখের সমস্যা শনাক্ত করেন। তাদের থেকে ৪৫৭ জনকে বেছে নেন। এরমধ্যেও যাদের ওষুধ ও চিকিৎসায় সেরে ওঠা সম্ভব, তাদের সেভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

আর ১৭২ জনের চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়। তাদের মধ্যে মালিনীছড়া চা বাগানের ৮১ এবং লাক্কাতুড়া চা বাগানের ৯১ জন শ্রমিক রয়েছেন। সুস্থ হয়ে তারা পুনরায় চা পাতা উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। চোখের আলো ফিরে পেয়ে মহাখুশি এসব শ্রমিকরা।

এ ব্যাপারে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও অরবিস ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ার অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন বলেন, চোখের চিকিৎসায় অস্ত্রোপচারে খরচ বড় বাধা না। আমরা প্রান্তিক মানুষগুলোর কাছে যেতে পারি না, তারাও আসতে পারছে না, সেটাই হচ্ছে বড় বাধা। অপারেশন করলে চোখে দেখতে পারবে কিনা? সে বাধা দূর করে অপারেশন করার পর তারা দেখতে পারছেন। কাজেও ফিরতে পারছেন। বেসরকারি এসব উদ্যোগের কারণে সরকারি হাসপাতালের উপর থেকে চাপ অনেকটা কমেছে।  

নয়ন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাব্বির আহমদ বলেন, আমাদের হাসপাতালে নিয়ে বিনা পয়সায় ৩দিন খাইয়ে তাদের চিকিৎসা করিয়ে কালো চশমা ও ওষুধ দেই। মালিনীছড়ায় ৮৩ ও লাক্কাতুড়া বাগানে ৮৯ জনের চোখের সমস্যা সনাক্ত করে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছি।

 
অর্বিস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর মনির আহমেদ বলেন, চক্ষুসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতিই চা শ্রমিকের স্থায়ী সমাধানের জন্য কাজ করা। এ ধরণের সমন্বিত কাজের সুযোগ করে দেওয়ায় বাগান কর্তৃপক্ষকে ধান্যবাদ জানান তিনি।

ডা. খালেদা ইসলাম বলেন, অর্বিস ইন্টারন্যাশনাল ও নয়ন ফাউন্ডেশন দেখিয়েছে, কিভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে গিয়ে সেবা দিতে হয়। সমন্বিত প্রচেষ্টার জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান তিনি।

ড. রুমানা বলেন, দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, তারাই জানেন তাদের পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যায়। এত উদ্যোগের জন্য সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত। এটা প্রচার হওয়া উচিত। এনজিওগুলোতে সবকিছুতে কিভাবে নেওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে সবার প্রচেষ্টা থাকা দরকার।
মালনিছড়া চা বাগানের ম্যানেজার মো. আজম আলী বলেন, কারো যদি চোখ না থাকে, দুনিয়া তার জন্য অন্ধকার। তাই যারা চক্ষু চিকিৎসার সুযোগ করে দিয়েছে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এভাবে আগে কখনো সম্ভব হয়নি।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রাগিব রাবেয়া ফাউন্ডশনের কো-চেয়ারম্যন আব্দুল হাই, লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার বনম আলী ভৌমিক।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩
এনইউ/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।