ঢাকা, শনিবার, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

৬৭ শতাংশ গৃহকর্মী মানসিক নির্যাতনের শিকার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩
৬৭ শতাংশ গৃহকর্মী মানসিক নির্যাতনের শিকার

ঢাকা: বাসা-বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে ৬৭ শতাংশ গৃহকর্মী মানসিক নির্যাতনের শিকার হন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)।

রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) শোভনকাজ ও কর্মক্ষেত্রে জেন্ডার সহিংসতা বিষয়ে বাংলাদেশের নারী গৃহশ্রমিকদের ওপর পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানায় সংস্থাটি।

জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বিলস জানায়, গৃহশ্রমিকদের অধিকার, মর্যাদা ও সুরক্ষায় ‘সিকিউরিং রাইটস অব উইমেন ডমেস্টিক ওয়ার্কার্স ইন বাংলাদেশ (সুনীতি)’ শীর্ষক এক প্রকল্পের আওতায় এই গবেষণা করা হয়। গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা ও অক্সফাম ইন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই গবেষণা পরিচালনা করে বিলস।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন ডিনেটের নির্বাহী পরিচালক এম. শাহাদাৎ হোসেন। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দারিদ্র্য, পেশার সহজলভ্যতা এবং বিবাহ বিচ্ছেদসহ বিভিন্ন কারণে নারীরা গৃহকর্মীর কাজ বেছে নেন। কিন্তু এই পেশায় এসে ৪২ শতাংশ আবাসিক গৃহকর্মী বসার ঘর অথবা রান্নাঘরের মতো খোলা জায়গায় ঘুমান। ৭৫ শতাংশ অনাবাসিক অথবা খণ্ডকালীন গৃহকর্মী বস্তিতে বাস করেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গৃহকর্মীদের গড় মাসিক আয় ৫ হাজার ৩১১ টাকা। কিন্তু তাদের মাসিক গড় ব্যয় ১০ হাজার ৮০১ টাকা। এক্ষেত্রে ৯৬ শতাংশ গৃহকর্মী বলছেন, বর্তমান মজুরি মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। এছাড়া শতভাগ গৃহকর্মীই কাজ করেন মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতে।

বিলসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতি বা বিলম্বের কারণে মজুরি কর্তনের শিকার হন ২৬ শতাংশ গৃহকর্মী। আবাসিক গৃহকর্মীরা দৈনিক ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করেন। অনাবাসিক বা খণ্ডকালীন গৃহকর্মীদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ কোনো সাপ্তাহিক ছুটি পান না। এছাড়া ৯৯ শতাংশ গৃহকর্মীই পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে কোনো প্রশিক্ষণ পান না। মাত্র ৪ শতাংশ গৃহকর্মী কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৯৯ শতাংশ গৃহকর্মী ও ৬৬ শতাংশ নিয়োগকর্তার গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫ সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই। যার কারণে বাসাবাড়িতে কাজ করতে গিয়ে মানসিক নির্যাতনের শিকার হন ৬৭ শতাংশ গৃহকর্মী। লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতার বিষয়ে সাহায্য চাওয়ার যেসব উপায় রয়েছে, যেমন—হটলাইন, হেল্পলাইন সম্পর্কে সচেতন নয় ৯১ শতাংশ গৃহকর্মী।

করোনা মহামারির সময়ে গৃহকর্মীদের ওপর লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ সময় ২ শতাংশ গৃহকর্মী তাদের চাকরি হারিয়েছেন এবং ২ শতাংশ গৃহকর্মী আয়ের উৎস হারিয়ে স্বামী বা পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

গবেষণা প্রতিবেদনে গৃহশ্রমিকদের অধিকার, মর্যাদা ও সুরক্ষায় বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক বেল্লাল হোসেন শেখ বলেন, নিয়োগকর্তারা অভিযোগ করেন, গৃহকর্মীদের ছুটি দিলে তারা আর কাজে আসতে চায় না। আমি নিয়োগকর্তাদের বলতে চাই, এটা গৃহকর্মীদের দোষ নয়। তারা ঠিকমতো ছুটি পায় না। তাই একবার ছুটি পেলে আর আসতে চায় না বা দুই দিনের ছুটির কথা বলে অনেক দিন ছুটি কাটায়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গৃহকর্মীদের তাদের কাজের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় জানিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শক ও অতিরিক্ত সচিব (অব.) এবিএম খোরশেদ আলম বলেন, আমাদের দেশের গৃহশ্রমিকরা গ্রাম থেকে শহরে আসে। তাই গৃহস্থালির বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা থাকে না। এজন্য তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করে মালিকরা তাদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। এটা একবার অভ্যাস হয়ে গেলে প্রতিনিয়ত চলতেই থাকে।

বিলসের যুগ্ম মহাসচিব ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী পরিষদের সম্পাদক শাকিল আক্তার চৌধুরীর সঞ্চালণায় গবেষণা প্রতিবেদন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপ-পরিচালক সুষ্মিতা পাইক, অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কোয়ালিটি স্পেশালিস্ট মুরাদ পারভেজ, লেবার রাইটস জার্নালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, সলিডারিটি সেন্টার বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অফিসার অ্যাড. মো. নজরুল ইসলাম, বিলস উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নইমুল আহসান জুয়েল প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩
এসসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।