ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বসন্ত আজ উচ্ছ্বাসে নিঃশ্বাসে

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩
বসন্ত আজ উচ্ছ্বাসে নিঃশ্বাসে ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: ‘ভোর হলো দোর খোলো/ খুকুমণি ওঠো রে!/ ওই ডাকে যুঁইশাখে/ ফুল-খুকি ছোট রে!’ সত্যিই তাই। আজ কবি কাজী নজরুলের সেই কবিতার মতোই যুঁইশাখে ফুল ফুটেছে।

শীতের জীর্ণতা সরিয়ে এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। আজ তাকে রাঙিয়ে দেওয়ার দিন, রাঙিয়ে নেওয়ার দিন।

কবি শামসুর রাহমান তার বসন্তের মায়ায় লিখেছেন, ‘গাছের শাখায় ফুল হাওয়ার সংস্রবে/যখন নীরবে দিব্যি সানন্দে দুলতে থাকে, পথচারী/ অথবা জানালা-ধরে-থাকা যুবতীর চোখ পড়ে/ কে জানে কী ছবি সব দোলে কিছুক্ষণ!/ বসন্তের মায়া রয়ে যায় বাস্তবিক নানাভাবে। ’

আরেক কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন- ‘হয়তো ফোটেনি ফুল রবীন্দ্র-সঙ্গীতে যতো আছে,/ হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে বনের কুসুমগুলি ঘিরে। আকাশে মেলিয়া আঁখি তবুও ফুটেছে জবা,/ দুরন্ত শিমুল গাছে গাছে,/ তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্তপথিক। ’

এই নগরেও কোকিলের কুহুতান শোনা যাচ্ছিল কয়েক দিন আগ থেকেই। শুকনো পাতা ঝরে জন্ম নিয়েছে নতুন কচি পাতার। আজ সেই পত্রপল্লবে, ঘাসে ঘাসে, নদীর কিনারে, কুঞ্জ-বীথিকা আর পাহাড়ে অরণ্যে বসন্ত এসেছে নবযৌবনের ডাক দিয়ে। ছড়িয়ে দিয়েছে রঙের খেলা। সোনালি রোদের ছোঁয়ায় পলাশগুলো আজ জেগে উঠবে।

মৌমাছিদের গুঞ্জরন, মাতাল হাওয়া ছুঁয়ে যাবে তনুমন। বাসন্তী রঙের গাঁদাফুলের রঙেই আজ সাজবে তরুণ-তরুণীরা। তরুণীরা পরবে বাসন্তী রঙের শাড়ি। খোঁপায় গুঁজবে ফুল, আর হাতে পরবে কাচের চুড়ি। তরুণরা বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি বা ফতুয়া পরে নামবে বাংলার পথে-ঘাটে। শুধু শহরেই নয়, বাংলার গ্রামীণ জনপদেও আজ ঝিরিঝিরি বাতাসে ধরা দেবে বসন্ত।

এ বসন্ত শুধু শুধু উচ্ছ্বাসের রঙ ছড়ায় না, আমাদের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্তরঙিন স্মৃতির কথাও মনে করিয়ে দেয়। ১৯৫২ সালের ৮ ফাগুন বা একুশের পলাশরাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ারও যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে।

বাঙালির জীবনের সঙ্গে একাকার হয়ে আছে বসন্ত। বসন্তের বন্দনা আছে কবিতা, গান, নৃত্য আর চিত্রকলায়। বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে ‘পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব’ হিসেবে। এ উৎসব এখন সব বাঙালির উৎসব।

এ উৎসবটির একটি ঐতিহ্যময় ইতিহাস আছে। মুঘল সম্রাট আকবর প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন ১৫৮৫ সালে। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব। তখন অবশ্য ঋতুর নাম ও উৎসবের ধরনটা এখনকার মতো ছিল না। তাই বসন্ত উৎসব শুধু একটা উৎসব নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য।

আজ তরুণ-তরুণীরা নামবে পথে-প্রান্তরে। আর এ রাজধানী ঢাকার বুকে বাসন্তী সাজে তারা ঘুরে বেড়াবে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর, চারুকলা আর টিএসসিতে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা পরিণত হবে মানুষের বাসন্তী রঙের প্রাঙ্গণে। রমনা পার্ক, জাতীয় সংসদ, চন্দ্রিমা উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বলধা গার্ডেন, চারুকলার পেছনের সবুজ প্রাঙ্গণে ঘুরে বেড়াবে রাজধানীবাসী।

এবারও রাজধানীতে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছে জাতীয় বসন্ত উদযাপন পরিষদ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় থাকবে যন্ত্রসঙ্গীত, বসন্ত কথন পর্ব, প্রীতি বন্ধনী, আবির বিনিময়, একক আবৃত্তি, দলীয় আবৃত্তি, একক সঙ্গীত, দলীয় সঙ্গীত, দলীয় নৃত্য। দেশের অগ্রগণ্য দল ও বরেণ্য শিল্পীরা অনুষ্ঠানমালায় অংশগ্রহণ করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩
এইচএমএস/এমএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।