ঢাকা, শনিবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঐতিহাসিক আমতলা গেট ৩৬৩ দিন থাকে অবৈধ দোকানপাটের দখলে

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩
ঐতিহাসিক আমতলা গেট ৩৬৩ দিন থাকে অবৈধ দোকানপাটের দখলে

ঢাকা: রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে না আমাদের মায়ের ভাষা বাংলা ভাষা। এখন বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

১৯৫২ সালে ছাত্র সমাজ রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই এ স্লোগান দিয়ে যে গেট দিয়ে ১৪৪ ধারা ভেঙেছিল। সেই স্মৃতিবিজড়িত আমতলা গেটটি বছরের ৩৬৩ দিন থাকে অবৈধ দোকানপাটের দখলে। বছর ঘুরে একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই ১৯ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাত থেকে জায়গা পরিষ্কার করা শুরু হয়। আবার ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই আবারও আগের নিয়মে ফিরে যায় ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত সেই জায়গাটি। অবৈধ দোকানপাটের পরিপূর্ণ দখলে চলে যায়।

শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাতে দেখা যায়, ইতিহাসবিজড়িত সেই গেটটি স্থায়ীভাবে বন্ধ। পাশেই ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেট। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিতে মাতৃভাষা বাংলা চাই স্লোগান দিয়ে ১৪৪ ধারা ভেঙেছিল ছাত্র সমাজ। সেই স্মৃতি বিজড়িত গেটেরর নিচে বাম পাশে চায়ের দোকান ও হাতের ডান পাশে সোহাগের পুরি-সিঙাড়ার দোকান। সামনে ফুটপাতে পান, সুপারি, ফল-পানি-বিছানা-বালিশের দোকান। গেটের ওপরে প্লাস্টিকের সাইনবোর্ডটি না থাকলে জানার কোনো উপায় নেই যে এটি সেই ঐতিহাসিক আমতলা স্মৃতিবিজড়িত গেট। তবে উপরে থাকা ব্যানারটি দেখে মনে হচ্ছে ঝকঝকে। কেউ হয়তোবা নতুন লাগিয়েছে।

কথা হয় সেই গেটের নিচে অবস্থান করা দোকানদারের সঙ্গে। তারা জানান, শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের দিকে ভাষা আন্দোলন পরিষদ থেকে কয়েকজন লোক এসে ভাঙাচুরা পুরাতন সাইনবোর্ড সরিয়ে এ নতুন ব্যানারটি লাগিয়ে গেছে।

সেই ব্যানারে লেখা আছে, ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত আমতলার ঐতিহাসিক প্রাঙ্গণ থেকে। আরো লেখা আছে, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির এদিনে ছাত্র সমাজ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিল করেন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এ আমতলা গেট দিয়েই ছাত্ররা বেরিয়ে এসেছিলেন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করতে। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দিতে দিতে রাজপথে নেমে এসেছিলেন তাঁরা। ছাত্রদের মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। শহীদদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষার অধিকার পায় বাঙালিরা। মায়ের বাসায় কথা বলার স্বীকৃতি পায়। রক্তের বিনিময় ছিনিয়ে আনা বাংলা ভাষা এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি।

ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, ভাষা আন্দোলনের আমতলার সেই ঐতিহাসিক গেট বছরের ৩৬৩ দিন অবৈধ দোকানপাটদের দখলে থাকে। আর গেটটির কয়েকটি কক্ষে হাসপাতালের এক আবাসিক চিকিৎসক থাকেন তার পরিবার নিয়ে। বছর ঘুরে একুশে ফেব্রুয়ারির এলেই প্রশাসন দু-একদিন আগে থেকে ঐতিহাসিক আমতলা গেটসহ শহীদ মিনার পর্যন্ত পুরো সড়কটি দুদিন ঝকঝকে করে রাখে। দ্বিতীয় দিনের মাথায় আবার ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত সেই গেটসহ হাসপাতাল কেন্দ্রিক আশপাশের ফুটপাত অবৈধ দোকানপাটের দখলে চলে যায়।

ঢাকা মেডিকেলে হাসপাতালে সাবেক পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত ভাষা আন্দোলনের গেটটি আমি নিজ উদ্যোগে রঙ করেছিলাম। উপরে সাইনবোর্ড লাগিয়েছিলাম। ওই জায়গায় যেন দোকানপাট বসতে না পারে এর জন্য ফুটপাতের পাশে খালি জায়গায় লোহার ব্যারিকেড দিয়ে ফুল গাছ লাগিয়েছিলাম।
 
এদিকে বর্তমান ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, স্মৃতিবিজড়িত সেই গেটের নিচ থেকে প্রতিনিয়ত অবৈধ দোকান আমরা উচ্ছেদ করে থাকি। এছাড়া হাসপাতাল সংলগ্ন সড়কটি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আন্ডারে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কয়েক বছর আগে অবসর নেওয়া একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বছর ঘুরে একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই স্মৃতিবিজড়িত সেই আমতলা গেটটি নিয়ে হুলুস্থুল লেগে যায়। বাকি ৩৬৩ দিন কার কোনো খবর  থাকে না। এ দৃশ্য বহু বছর ধরে দেখে আসছি।  

বাংলাদেশ সময়: ০১১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩
এজেডএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।