জামালপুর: শহীদ মিনারের বেদিতে বসা ও জুতা পায়ে ওঠা সম্পূর্ণ নিষেধ। সেই সঙ্গে একুশে ফেব্রুয়ারিতে ফুল দেওয়া ছাড়া শহীদ মিনারের বেদিতে কোনো অনুষ্ঠানও করার কথা নয়।
সেখানে ভাষার মাসে কাপড় দিয়ে শহীদ মিনারকে আড়াল করে এর বেদিতে মঞ্চ বানিয়ে সদর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আর সেই বেদিতে বানানো মঞ্চে জুতা পায়ে দিয়ে উঠেছেন জামালপুর-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মো. মোজাফফর হোসেনসহ এমপিসহ অন্য অতিথিরা।
শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) জামালপুর সদর উপজেলার বটতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এ ঘটনাটি ঘটে।
শহীদ মিনারের তিনটি স্তম্ভ পেছনে রেখে সামনে বেদিতে করা হয় প্যান্ডেল। এ প্যান্ডেলঘেরা মঞ্চে জুতা পায়ে ওঠেন সবাই।
ভাষার মাসে এমন ঘটনায় জামালপুর জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
অনুষ্ঠান উপস্থিত কয়েকজন বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠে শহীদ মিনারের বেদিতে মঞ্চ এমনভাবে বানানো হয়েছে, যেন মূল শহীদ মিনারটি কাপড়ে ঢাকা পড়ে। অতিথিদের সামনে টেবিল এবং চেয়ার দেওয়া হয়। পাশেই বক্তব্য দেওয়ার জন্য মাইকের স্ট্যান্ড বসানো। দুপুর ১টার দিকে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এমপি মো. মোজাফফর হোসেনসহ সব অতিথি একে একে জুতা পায়ে মঞ্চে উঠে চেয়ারে বসেন। বেদিতে দাঁড়িয়ে থাকা অন্যদের পায়েও জুতা ছিল। অনুষ্ঠানটি বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শেষ হয়।
এ বিষয়ে এমপি মো. মোজাফফর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সেটা যে শহীদ মিনার, আমি বুঝতেই পারিনি। আমি ভেবেছি, সেটা একটি ভাঙা মঞ্চ। কেউ যদি আমাকে বলত, সেটা শহীদ মিনার, তাহলে আমি জুতা নিয়ে উঠতাম না। প্রয়োজনে আমি সেখান থেকে নেমে যেতাম।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা শিক্ষা কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক ও বটতলা উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. শফিকুল আলম।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জামালপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আব্দুল জলিল, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক এ কে আজাদ বাদল ও সদস্য মো. আবুল খায়ের খোকা মাস্টার, বাঁশচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল আলীম, সহসভাপতি মো. মাহমুদুল হাসান বাচ্চু, সহসভাপতি মো. শাহজাহান আলী, সহসভাপতি মো. সরোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল লতিফসহ অনেকে।
জেলা শিক্ষা কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক ও বটতলা উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. শফিকুল আলম বাংলানিউজকে জানান, অনুষ্ঠানে তিনি ছিলেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ সেখানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আর সবাই তো সেখানে জুতা পায়ে দিয়ে উঠেছেন, তাই তিনিও উঠেছেন।
জামালপুরের ভাষা ও মুক্তি সংগ্রাম গবেষণা কেন্দ্রের সদস্য জাহাঙ্গীর সেলিম দৈনিক জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে, ২১ ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না। জুতা নিয়ে শহীদ মিনারে ওঠা ভাষা শহীদদের প্রতি অবমাননা এবং আইন অমান্য করার শামিল।
ভুল স্বীকার করে বটতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল হুদা বাংলানিউজকে জানান, প্রত্যেক বছরই সেখানে অনুষ্ঠান করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় সেখানে করা হয়েছে। প্রধান অতিথিই যদি ওঠেন, তাহলে আর কী!
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩
এসআই