ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ছেত্রা নদীর ওপর সেতুর আশায় কেটে গেছে প্রায় ৫০ বছর

মেহেদী নূর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩
ছেত্রা নদীর ওপর সেতুর আশায় কেটে গেছে প্রায় ৫০ বছর

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের ছেত্রা নদীর দুই পাড়ের ১৭ গ্রামের কয়েক লক্ষাধিক মানুষের প্রায় ৫০ বছর কেটে গেছে একটি সেতুর আশায়।

স্থায়ী সেতুর জন্য অনেক জনপ্রতিনিধি বার বার আশ্বাস দিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি।

ফলে নদীর ওপর সাড়ে ৬শ ফুট লম্বা ও ৫ ফুট প্রশস্ত বাঁশের সাঁকো দিয়ে দুই পাড়ের মানুষ শুষ্ক মৌসুমে চলাচল করলেও বর্ষা মৌসুমে তাদের দুর্ভোগের কোনো সীমা থাকে না। ফলে শিক্ষা, কৃষিসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।  

স্থানীয় লোকজন জানান, দুর্ভোগ লাঘবে প্রায় ২৪ বছর আগে গ্রামবাসীর নিজস্ব অর্থায়নে ছেত্রা নদীর ওপর অরুয়াইল-পাকশিমুল সংযোগ বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়। বছরের কার্তিক মাস থেকে শুরু হয়ে জৈষ্ঠ্য মাস পর্যন্ত আট মাস গ্রামবাসীকে এ সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পারাপার করতে হচ্ছে। প্রতিদিন অন্তত ১০/১২ হাজার মানুষ এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে আসা যাওয়া করছেন। এছাড়াও শতাধিক মোটরবাইক ও অর্ধশত অটোরিকশা চলাচল করে।  

এই সাঁকো দিয়ে চলাচলকারী কাউসার মিয়া বলেন, বাংলাদেশের সব জায়গায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও আমাদের গ্রামের নদীর ওপরে একটি সেতু ৫০ বছরেও হচ্ছে না। এই সরকার আমাদের চলাচলের জন্য সেতুটি যদি তাড়াতাড়ি করে দিত তাহলে আমাদের গ্রামের মানুষের মুখে হাসি ফুটতো।

স্থানীয় বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, বর্ষাকালে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে নৌকা ব্যবহার করা হলেও শুষ্ক মৌসুমে আমাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই বাঁশের সাঁকো। বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধিরা এখানে স্থানীয় সেতুর প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি। সেতুর অভাবে ওই এলাকার মানুষ শিক্ষা স্বাস্থ্য ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছেন।  

নারী বাসিন্দা কমলা রানী বলেন, অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য এই বাঁশের সাঁকোটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় প্রত্যন্ত গ্রামের নারীদের প্রসব বেদনা শুরু হলে এই সাঁকোর ওপর দিয়ে হেঁটে নিয়ে যেতে হয়। এ নদীর ওপর সেতুটি করে দিলে আমাদের চলাচলের অনেক উপকার হবে।

কলেজছাত্র রাসেল মিয়া বলেন, পাঁচ/ছয়টি গ্রাম থেকে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ছাত্র-ছাত্রী বাঁশের সাঁকো দিয়ে আসা যাওয়া করে। বর্ষা মৌসুমে ঝড় তুফানে এই সাঁকো ভেঙে যায়। ফলে সঠিক সময়ে স্কুলে যেতে পারি না। আমরা চাই দ্রুত সেতু নির্মাণ করা হোক।

অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, বাঁশের সাঁকো দিয়ে দুটি ইউনিয়নের ১৭ গ্রামের মানুষ আসা যাওয়া করে। অনেক বার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু এখনও আলোর মুখ দেখেনি। সরকার যদি স্থায়ীভাবে সেতু করে দেয় তাহলে আমাদের এলাকার মানুষ লাভবান হত। ফলে শিক্ষা, ব্যবসা, বাণিজ্যের অনেক প্রসার হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল মান্নান জানান, জনদুর্ভোগ লাঘবে আন্ডার হান্ড্রেড মিটার প্রকল্পের আওতায় ছেত্রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অনুমোদন পেলেই আমরা কাজ শুরু করব।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।