ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সংসদীয় আসনের সীমানায় তেমন পরিবর্তন আসছে না

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩
সংসদীয় আসনের সীমানায় তেমন পরিবর্তন আসছে না

ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদীয় আসনের সীমানায় তেমন কোনো পরিবর্তন আনছে না কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রতিনিধি, নেতারা ও জনগণ বর্তমান সীমানাতেই অভ্যস্ত বলে যুক্তি দেখাচ্ছে সংস্থাটি।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচন করবে ইসি। এজন্য জুনের মধ্যেই সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে হাতে নিয়েছে।

সংসদীয় আসনের সীমানায় কোনো পরিবর্তন না এনে রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) একটি প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩টির আগের সীমানা হুবহু রেখে কেবল সাতটি আসনে নতুন গঠিত প্রশাসনিক এলাকাগুলোর নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন সিটি করপোরেশন, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডের নামই মূলত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এলাকার কোনো বিস্তৃতি হয়নি।

প্রাথমিক তালিকায় যে সাতটি আসনের পরিবর্তন আনা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- ময়মনসিংহ-৪, মাদারীপুর-৩, সুনামগঞ্জ-১, সুনামগঞ্জ-৭, সিলেট ১, সিলেট-৩ ও কক্সবাজার-৩।

ময়মনসিংহ-৪ আসন: বর্তমানে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নিয়েই আসনটি রয়েছে। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন হওয়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে- সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকা ও সদর উপজেলা নিয়েই আসনটি হবে।

মাদারীপুর-৩ আসন: কালকিনি উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে ‘ডাসার’ নামে নতুন একটি উপজেলা সৃষ্টি হওয়ায় পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে তালিকায়। এক্ষেত্রে প্রস্তাবিত নির্বাচনী এলাকা হবে- কালকিনি, ডাসার ও মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন। এলাকা আগের মতোই।

সুনামগঞ্জ-১ আসন: ধর্মপাশা উপজেলার চারটি ইউপি নিয়ে ‘মধ্যনগর’ নামে নতুন উপজেলা গঠিত হয়েছে। ফলে আগের এলাকার সঙ্গে কেবল নতুন করে মধ্যনগর নামটি যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ-৩ আসন: জগন্নাথপুর উপজেলা ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নিয়ে আসনটি গঠিত। তবে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ নাম পরিবর্তন হয়ে এখন শান্তিগঞ্জ হয়েছে। এজন্য প্রস্তাব করা হয়েছে আসনটি গঠিত হবে জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে।

সিলেট-১ আসন: সদর উপজেলার একটি ইউনিয়ন ও তিনটি ইউনিয়নের আংশিক এলাকা সিলেট সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। আগে আসনটি ছিল সিলেট সদর উপজেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকা নিয়ে। প্রাথমিক তালিকায় সদর উপজেলার সঙ্গে সিটি করপোরেশনের ১-২৭ ও ৩১-৩৯ নম্বর ওয়ার্ড যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।

সিলেট-৩ আসন: দক্ষিণ সুরমার দু’টি ইউনিয়ন ও একটি ইউপির আংশিক সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে আসনটিতে রয়েছে দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা। প্রাথমিক তালিকায় সিটি করপোরেশনের ২৮-৩০ ও ৪০-৪২ এবং দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

কক্সবাজার-৩ আসন: সদর উপজেলার পাঁচটি ইউপি নিয়ে ‘ঈদগাঁও’ নামে নতুন উপজেলা গঠন হয়েছে। এ আসনটি কক্সবাজার সদর ও রামু উপজেলা নিয়ে গঠিত। এক্ষেত্রে প্রাথমিক তালিকায় ঈদগাঁও নামটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতারা ও জনগণ আগের সীমানাতেই অভ্যস্ত। তাই আমরা আগের সীমানাই অক্ষুণ্ণ রেখেছি। কেবল নতুন যেসব প্রশাসনিক এলাকা সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে দাবি-আপত্তি আহ্বান করেছে। আগামী ১৯ মার্চের মধ্যে দাবি-আপত্তি নিয়ে শুনানি শেষে আগামী জুনের মধ্যেই প্রকাশ করবে সংসদীয় আসনের চূড়ান্ত তালিকা।

মো. আলমগীর বলেন, যদি কারো আপত্তি থাকে, তার বক্তব্য যদি শুনানি যৌক্তিক মনে হয়, তাহলে আমরা তা বিবেচনায় নেবো। প্রত্যেকটি আবেদনের শুনানির জন্য সময় দেওয়া হবে। তবেই ইতোমধ্যে আমরা যেসব আবেদন পেয়েছি, সেগুলোতে বর্তমান সীমানা বহাল রাখার জন্য বলা হয়েছে।

সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০২১ অনুযায়ী- ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার পাশাপাশি সর্বশেষ আদমশুমারির প্রতিবেদনে উল্লেখিত জনসংখ্যার যতদূর সম্ভব বাস্তব বণ্টনের ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, জনসংখ্যাকে আমরা সবার পরে প্রাধান্য দিয়েছি। কেননা, জনসংখ্যা ভিত্তিতে সীমানা করতে গেলে কোনো কোনো জেলা একটি করে আসন হবে। আর ঢাকার মতো বড় শহরে আসন আরও বাড়বে। এক্ষেত্রে প্রশাসনিক অখণ্ডতা ও ভৌগোলিক বিষয়কেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

এদিকে আইনে ইসির নেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে মামলা দেওয়া যাবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া কমিশন দৈব দুর্বিপাক বা অন্য কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকলে সীমানা পুনর্নির্ধারণ না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এক্ষেত্রে সর্বশেষ নির্ধারিত সীমানার ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সীমানা পুনর্নির্ধারণের ইতিহাসে ১৯৮৪ ও ১৯৯১ সালের পর ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত সরকারের সময় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছিল। সে সময় ১৩৩টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনেছিল এটিএম শামসুল হুদার কমিশন।

এরপর কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে ৫০টি আসনে পরিবর্তন এনেছিল। তারা প্রস্তাব করেছিল ৮৭টি আসনে পরিবর্তন আনার।

২০১৮ সালে কেএম নূরুল হুদার কমিশন ৪০টি আসনে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করলে শুনানির পর ২৫টি আসনে পরিবর্তন এনেছিল। যেগুলো পরিবর্তন করে ২০০৮ সালের মতো করা হয়েছিল।

আর কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন সাতটি আসনে পরিবর্তনের প্রস্তাব করলেও আদতে এলাকার কোনো পরিবর্তন নেই। এক্ষেত্রে দাবি-আপত্তি পেয়ে শুনানিতে কোনো আসনের সীমানায় পরিবর্তন হলেই কেবল নতুন সীমানায় ভোট হবে কোনো কোনো আসনে। নয়তো আগের সীমানাতেই অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

বাংলাদেশ সময়: ২৩১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩
ইইউডি/এমএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।