ফেনী: ফেনীতে আলোচিত ছয় লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার মামলায় পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ ১৩ জনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (৬ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ মো. কায়সার মোশাররফ ইউসুফ এ রায় দেন।
১৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ডসহ এক লাখ টাকা জরিমানাপ্রাপ্তরা হলেন- পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিল্লাল হোসেন (পলাতক), এসআই আশিকুর রহমান (পলাতক) ও সালেহ আহম্মদ (হাজতে), করিম কোম্পানী (হাজতে) , জাফর কোম্পানী (পলাতক)।
১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-অ্যাডভোকেট জাকিল হোসেন (আজ থেকে হাজতে), তোফাজ্জল হোসেন (হাজতে), পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সদস্য শাহিন (আজ থেকে হাজতে) ও মোতালেব মুহুরী (পলাতক), গিয়াস উদ্দিন গেসু (হাজতে), কাশেম আলী (পলাতক)। পাঁচ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এএসআই মাহফুজুরের গাড়িচালক জাবেদ আলী।
এদিকে মামলা দায়ের হওয়ার পর ওই পাঁচ পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়।
এর আগে বুধবার (১ মার্চ) যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত। মামলার ১৪ আসামির মধ্যে পাঁচজন গ্রেফতার ও চারজন উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিলেন এবং বাকি পাঁচজন আসামি পলাতক ও একজন মারা গেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এপিপি দ্বিজেন্দ্র কুমার কংস বণিক। আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফয়েজুল হক মিলকী, আনোয়ারুল ইসলাম ফারুক, জাহিদ হোসেন কমল, মীর মোশাররফ হোসেন মানিক ও তাজুল ইসলাম ভূঞা। এ মামলায় এএসআই মাহফুজসহ পাঁচজন ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দিতে দায় স্বীকার করেছেন।
আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট হাফেজ আহম্মেদ জানান, এ মামলায় ৩৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জন সাক্ষী দিয়েছেন। গত বছর জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে ২৯ অক্টোবর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা বদলি করা হয়। এ মামলায় একসঙ্গে ছয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, গত বছরের ৬ মার্চ এ ঘটনায় তৃতীয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডির কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। সাত বছরে চাঞ্চল্যকর এ মামলায় তিন ম্যাজিস্ট্রেট, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মামলার বাদীসহ ১৬ জন সাক্ষী দিয়েছেন। মামলায় মোট ৩৯ জনকে সাক্ষী করা হয়। এ মামলার মোট ১৩ আসামির মধ্যে আটজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। চারজন জামিনে ও চারজন কারাগারে এবং পাঁচজন পলাতক রয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৭ মে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি দেন তোফাজ্জল হোসেন। আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এ মামলার নয় আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তোফাজ্জল কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌরসভার বাসিন্দা। মাহফুজ ফেনী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে বিশেষ শাখায় কর্মরত ছিলেন। তারপর সেখান থেকে তিনি বদলি হয়ে যান।
সূত্রে আরও জানায়, ২০১৫ সালের ২১ জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লালপোল এলাকায় এক শিশুকে ধাক্কা দিয়ে প্রাইভেটকার নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলো এএসআই মাহফুজুর। র্যাব-৭ এর একটি দল প্রাইভেটকারটি ধাওয়া করে তাকে আটক করে। পরে তার গাড়ি থেকে ছয় লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা ও নগদ সাত লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশের এএসআই মাহফুজুর ও গাড়িচালক জাবেদ আলীকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাবের পক্ষ থেকে নায়েক সুবেদার মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ২২ জুন ফেনী মডেল থানায় মাদক আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ফেনী মডেল থানার তৎকালীন পরিদর্শক মো. শাহীনুজ্জামানকে। তিনি ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত সন্তুষ্ট না হয়ে পুনঃতদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন।
২০১৬ সালের ২২ মে এ ঘটনার দ্বিতীয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পরিদর্শক আবুল বশর অভিযোগপত্র জমা দিলে আদালত গ্রহণ করেননি। আদালত পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন। ১৪ জনকে আসামি করে ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন তৃতীয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন। এ মামলাটি এএসআই মাহফুজুরসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর অভিযোগ গঠন করে ১০ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন। দুপুরে এ মামলায় জেলহাজতে থাকা প্রধান আসামিসহ পাঁচজনসহ জামিনে থাকা তিনজন মিলে মোট আটজনকে আদালতে এ হাজির করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০২৩
এসএইচডি/আরআইএস