ঢাকা: নারীদের মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি চেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ‘ডিজিটাল সাংবাদিকতা নারীর চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
এ সভার আয়োজন করে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন আইরিন নিয়াজি মান্না।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এটাই চাইব যে নারী সে মানুষ; তাই মানুষ হিসেবেই স্বীকৃতি পাক। আর অন্য কিছু চাচ্ছি না। এমন না যে নারীদের অনেক কিছু দিয়েছে। যদি দিতই তাহলে কেন ৯৬ সাল পর্যন্ত সচিবালয়ে কেন বেবি ডে-কেয়ার সেন্টারের জন্য অপেক্ষা করতে হলো। শেখ হাসিনাই কিন্তু বেবি ডে-কেয়ার সেন্টার প্রথম চালু করেছেন। এত বড় একটা ডিগ্রি নিয়ে যখন মেয়েরা চাকরি করতে আসে তখন তার মনকে দুই ভাগ করে দেওয়া হয়। এক তো সে বাচ্চাটেকে বাড়িতে রেখে আসছে অন্যদিকে অফিসের কাজে ভালো করে মন দিতে পারে না। শেখ হাসিনা স্লোগান দিয়ে বলেন না যে পাশে আছি। কিন্তু তিনি পাশেও থাকেন এবং কাছেও থাকেন। মায়ের মমতা দিয়ে মাথায়ও হাত রাখেন এবং পিঠেও হাত রাখেন। এটাই হচ্ছে আজকের সরকার প্রধানের নীতি।
মুক্তিযুদ্ধে নারীরা দুইভাবে নির্যাতিত হয়েছে উল্লেখ করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় নারীর ওপর প্রথম নির্যাতন হচ্ছে তার সম্ভ্রম। প্রথমে সে ভোগের সামগ্রী শিকার হয়েছে তারপর দ্বিতীয় হচ্ছে নারীর জীবন নাশ। এভাবেই নারীরা মুক্তিযুদ্ধে তাদের উৎসর্গ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের ছেলেরা অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছে যেটা মেয়েরা পারেনি। কিন্তু তারা পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে নারীরা যে এগিয়েছে এর পেছনের পথ সহজ ছিল না। ভোটার লিস্টে বাবার নামের সঙ্গে মায়ের নামের থাকা দেশে প্রথম প্রচলন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, ছেলেমেয়ে বললে সাধারণ মানুষ বোঝানো হয়। আর যদি মেয়েছেলে বলা হয় তখনই শুধু আমরা বুঝতে পারি যে মেয়েদের সম্বোধন করা হচ্ছে। এই ধরনের অসমতা বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই চলে আসছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফ্রেন্ডশিপ এনজিওর ফাউন্ডার ও এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রুনা খান বলেন, অনেকে বলে রিমোট এরিয়াতে নারীরা ভালো করে কাজ করতে পারে না। কিন্তু আমি বলব এটা একদমই ভুল। আমি বিগত ২০ বছর ধরে কাজ করছি। আমাকে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। সবাই বলত এসব রিমোর্ট এরিয়াতে চোর, ডাকাতসহ অনেক খারাপ কিছু থাকে। কিন্তু আমি বলব সেসব সমস্যা থেকে আমাদের মানুষই রক্ষা করেছে। আমাদের সবার উচিত দায়িত্বশীল হওয়া বা আচরণ করা। কাউকে ছোট করে না দেখা। এদেশের নারীরা আগামীর সম্ভাবনা। ভালো ব্যবহার করা সুন্দর করে কথা বলা কিন্তু নারীদের দুর্বলতা না। এটা নারীদের সাহসিকতা, নারীদের সম্ভাবনা। আমরা নারী-পুরুষদের এক প্ল্যাটফর্মে দেখতে চাই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সাংবাদিকতা এখন আর হাতে কলমে নেই, ডিজিটালে প্রবেশ করেছে। ফলে যে কেউ চাইলেই তাদের তোলা ছবি বা খবর গণমাধ্যমে পাঠাতে পারে। অনেক নারী প্রযুক্তি ব্যবহার করতে জানলেও সামান্য কিছু নারী এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন। নারীদের প্রতি সবার দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর দরকার।
সকাল সাড়ে ১০টায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সভাপতি মুরসালিন নোমানীর নেতৃত্বে ডিআরইউর সামনে থেকে একটি র্যালি বের হয়। র্যালিতে ডিআরইউর সদস্যরা এবং ফ্রেন্ডশিপ এনজিওর সদস্যরা অংশ নেন।
সভাটির সভাপতিত্ব করেন ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী। সঞ্চালনা করেন ডিআরইউর নারী বিষয়ক সম্পাদক মরিয়ম মনি সেঁজুতি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, ফ্রেন্ডশিপ এনজিওর ফাউন্ডার ও এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রুনা খান, আরএফএস এডভাইজরি ও বিডব্লিউসিসিআইর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক নাজমা জামালউদ্দিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২৩
ইএসএস/এএটি