ঢাকা: ‘গুলিস্তান থেকে পুরান ঢাকার দিকে যখন বাস যাওয়া শুরু করে তখনই সিদ্দিকবাজারের ঘটনা মনে পড়ে যায়। কারণ পুরান ঢাকার বেশিরভাগ এলাকা অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে।
রাজধানীর পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজার ও সায়েন্সল্যাবের শিরিন ম্যানশনে বিস্ফোরণ কাণ্ডের পরে এ আতঙ্কের কথা বলছিলেন পুরান ঢাকার শ্যামপুরের এক ফ্যাক্টরিতে কর্মরত মামুন হোসাইন।
যিনি প্রতিদিন হেমায়েতপুর থেকে সাভার পরিবহনের বাসে অফিসে যাতায়াত করেন।
এ সাভার পরিবহনেরই একটি বাসের উপর ধসে পড়ে সিদ্দিকবাজারের কুইন স্যানিটারি মার্কেট।
শুধু তিনি নয়, তার মতো অন্য বাস যাত্রীদের মধ্যেও দেখা গেছে আতঙ্ক।
এতে বাসে থাকা যাত্রীদের কেউ মারা না গেলেও আহত হয়েছেন অনেক যাত্রী। আর নিহত হয়েছেন বাসের সহকারী।
এরপর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকার গুলিস্তান থেকে সিদ্দিকবাজার, আলুবাজার, বংশাল, সদরঘাটসহ এ রোডে চলা বাস যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্কে রয়েছে।
দুর্ঘটনার পরে গত তিনদিনে পুরান ঢাকা ঘুরে দেখা যায়, এখানের অলি-গলির ভেতরে হাজার হাজার কেমিক্যাল গুদাম, প্লাস্টিক কারখানা, জুতার কারখানা, ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাসের লাইন, অপরিকল্পিত ভবন রয়েছে। যখন বড় কোনো দুর্ঘটনা হয় তখন কর্তৃপক্ষ কয়দিন মনিটারিং করলে পরে আর কেউ খোঁজ রাখে না। যার ফলে সমস্যার সমাধানও হয় না।
সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী ইয়াসিন আতিফ বলেন, আমার বাসা শ্যামলীতে। ক্যাম্পাসে যাওয়া আসার জন্য বেশিরভাগ সময় সাভার পরিবহনে চড়া হয়। সেদিন যদি সে বাসের যাত্রী হতাম তাহলে তো আর নাও বাঁচতে পারতাম। এ ঘটনার পর এখন খুব আতঙ্ক থাকি পুরান ঢাকায় বাসে করে আসার সময়।
ভিক্টোরিয়া ক্লাসিক পরিবহনের যাত্রী একরামুল হক বলেন, ‘টিভিতে দেখলাম একটা বাস কতো মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়েছে সিদ্দিকবাজারের ঘটনায়। এমন একটা দেশে বাস করি যেখানে সব জায়গায় শুধু আতঙ্ক। কোথাও নিরপাদ নেই আমরা। ’
বিহঙ্গ পরিবহনের হেলপার আব্দুল গণি বলেন, ‘শুধু বাস যাত্রীরা নয়, আমরাও খুব আতঙ্ক আছি। এখন কী করার আছে। পুরান ঢাকার এ সড়কে বাস না চললে তো আমাদের সংসার চলবে না। তাই আতঙ্ক নিয়ে বাসে হেলপারি করে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, শুধু যে সড়কের দুর্ঘটনার জন্য পরিবহন দায়ী থাকে তা কিন্তু নয়। এখন দেখা যায়, বিস্ফোরণের জন্য সড়কে অনেক সময় মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হয় বাসের যাত্রীরা। যা সম্প্রতি কিছু বিস্ফোরণ ঘটনায় আমরা দেখতে পেরেছি। তবে পৃথিবীর আর কোথাও এভাবে বিস্ফোরণের আতঙ্কে বাসের যাত্রীরা থাকে না। এখন সরকারের উচিত বিস্ফোরণের কারণগুলো খুঁজে সমস্যার সমাধান করা। যেন যাত্রীরা আর আতঙ্কে না থাকে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা বাসে কাজ করে। সিদ্দিকবাজারের ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছে সে বাসের হেলপার ও চালক। সরকার ও বাস মালিকদের পক্ষ থেকে এসব দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত পরিবহন শ্রমিকদের পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৬ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৩
এনবি/আরবি