ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

গানম্যান ছাড়াই বহন করা হচ্ছিল ডাচ্‌-বাংলার টাকা!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪১ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৩
গানম্যান ছাড়াই বহন করা হচ্ছিল ডাচ্‌-বাংলার টাকা!

ঢাকা: ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় টাকা বহনকারী প্রতিষ্ঠান মানি প্লান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেডের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এত বিশাল অঙ্কের টাকা বহনের সময় কোনো গানম্যান রাখা হয়নি, এমনকি এত সকালে নির্জন রাস্তা দিয়ে টাকা বহনের সময় পুলিশকেও আগে থেকে অবগত করেনি প্রতিষ্ঠানটি।

টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্তকারী সংস্থা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, প্রতিষ্ঠানটির ২-৩ জন গানম্যান আছেন যারা অফিসেই থাকেন। কোনো ধরনের নিরাপত্তা ছাড়াই প্রতিদিন ৪/৫টি গাড়িতে টাকা বহন করতো মানি প্লান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেড।

এদিকে ঘটনার দিন গাড়িতে থাকা মানি প্লান্টের ৫ জনকে পল্লবী থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাদের কাছ থেকে সেদিনের ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানার চেষ্টা করছে।

ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বলেন, উত্তরার তুরাগ এলাকায় ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের সোয়া ১১ কোটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করছি। এখনো অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

গ্রেফতারদের তথ্য, ও মানি প্লান্টের কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, সোয়া ১১ কোটি টাকা পরিবহনের সময় নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা অর্থাৎ গার্ডের জন্য অস্ত্রসহ কোনো নিরাপত্তাকর্মী ছিল না। অধিকাংশ সময় এভাবে অধিক টাকা পরিবহন হয় যা, পরিবহনকৃত টাকা নিরাপত্তা বিধানে অপ্রতুল।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মানি প্লান্টের লোকজনকে থানায় এনেছিলাম। তারা স্বীকার করেছেন, তাদের দুইজন সিকিউরিটির লোক আছেন, তারা অফিসেই থাকেন। ঘটনার সময় তারা গাড়িতে ছিলেন না। যদি থাকতেন তাহলে ডাকাতরা যখন দরজা খুলল তখন কোনো উদ্যোগ নিলেন না! অস্ত্র থাকলে তো গুলি করতেন, কিছুই করলেন না।

টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার ৮ জনের সঙ্গে মানি প্লান্ট লিঙ্কের কারো যোগসাজশ বা যোগাযোগ ছিল কিনা জানতে চাইলে হারুন বলেন, আমরা এ ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি, সাক্ষ নিচ্ছি, গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত আছে৷ মানি প্লান্ট লিঙ্কের যে পরিমাণ টাকা ট্রাংকে থাকার কথা বলেছে, সেটাও ছিল কিনা তদন্ত করছি।

তারা যে এত পরিমাণ টাকা লেনদেন বা বহন করছিল তারা থানাকে জানাননি। এতদিন ধরে তারা যে বিভিন্ন ব্যাংকের টাকা লেনেদন করেন, কোনো দিন তারা থানা পুলিশকে অবহিত করেননি। এর সব কিছু আমরা তদন্ত করছি।

গ্রেফতারদের পরিচয় বা পেশাদার ডাকাত কিনা জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, আমরা আপাতত এ ব্যাপারে কিছু জানাচ্ছি না। যেহেতু আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে, অভিযানের স্বার্থেই বলছি না।

যা বলছে মানি প্লান্ট লিংক

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানি প্লান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক অজয় কর বলেন, সেদিন আমাদের সত্যিই টাকা বহনকারী গাড়িতে গানম্যান ছিল না। তবে সিকিউরিটির লোকজন ছিল। ডাকাত দলের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, মারামারিও হয়েছে। ডাকাত দল আমাদের গাড়ির দরজাও ভেঙে ফেলেছে।

টাকা বহনের ক্ষেত্রে পুলিশকে না জানানোর বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, সাধারণত টাকা বহনের সময় পুলিশকে জানানো হয় না। কারণ এটা আমাদের রেগুলার একটিভিটিজ। সপ্তাহে পাঁচদিনই আমাদের এই কার্যক্রম চলে। শুধু আমরা না, টাকা বহনে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও জানায় না।

গাড়িতে গানম্যান না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেলারি টাইমে আমাদের শিডিউলে ব্যাপক প্রেসার পড়ে৷ প্রেসারের কারণে শিডিউলের বাইরে গিয়েও আমাদের ডিপ্লয়মেন্ট করতে হয়৷

ফাঁকা রাস্তায় এত পরিমাণ টাকা নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অজয় কর বলেন, আমাদের মিরপুর ডিওএইচএস অফিস থেকে মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে তুরাগ পর্যন্ত যাওয়ার নতুন রাস্তা হয়েছে। গত ২/৩ মাস ধরে ওই সড়কটি ব্যবহার করা হচ্ছিল। এতে সময় সাশ্রয় হচ্ছিল।

গাড়িতে থাকা কারো সঙ্গে ছিনতাইকারীদের যোগসাজস থাকতে পারেরে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তদন্তাধীন বিষয়, ডিবি পুলিশ সেটা তদন্ত করেছে। তবে পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া এমন ঘটনা হঠাৎ করে ঘটেনি। যারা ছিনতাই করেছে তাদের হয়ে টাকা বহনকারী গাড়িতে ইনফর্মার থাকতে পারে।

মানি প্লান্টের ৫ জনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে

সোয়া ১১ কোটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় সেদিন টাকা নিয়ে যাওয়া মানি প্লান্ট কোম্পানির ৫ জনকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সেদিনের ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানার জন্য তাদেরকে পল্লবী থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন ডিএমপির ঊর্ধ্বতনরা।

রোববার (১২ মার্চ) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুই কোটি ৫৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে ছিনতাই হওয়া সোয়া ১১ কোটি টাকার মধ্যে মোট উদ্ধার হলো ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা।

গ্রেফতাররা হলেন- মো. সানোয়ার হাসান (২৮), মো. ইমন ওরফে মিলন (৩৩), মো. আকাশ মাদবর (২৫), সাগর মাদবর (২২), মো. বদরুল আলম (৩৩), মো. মিজানুর রহমান (২০), মো. সনাই মিয়া (২৮) ও এনামুল হক বাদশা (২৬)।

৯ মার্চ সকালে রাজধানীর উত্তরার তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ী ১১ নম্বর সড়কে ডাচ বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানি প্লান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেডের গাড়ি থেকে সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

ওই ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ১০-১২ জনকে আসামি করে ৯ মার্চ দিনগত রাতে মানি প্ল্যান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক আলমগীর হোসের বাদী হয়ে তুরাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৩
পিএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।