ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ডাচ-বাংলার লুটের টাকায় কেউ গাড়ি কিনেছে, ধারও দিয়েছে!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৩
ডাচ-বাংলার লুটের টাকায় কেউ গাড়ি কিনেছে, ধারও দিয়েছে! প্রেসব্রিফিংয়ে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ -বাংলানিউজ

ঢাকা: রাজধানীর উত্তরায় ছিনতাই হওয়া ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকার মধ্যে আরও ৫৮ লাখ ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। একইসঙ্গে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত আরও তিনজনকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

সোমবার (১৩ মার্চ) রাতে ও মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সকালে রাজধানীর কড়াইল বস্তির বউবাজার এলাকা, নেত্রকোনা ও খুলনা থেকে নতুন এই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- আকাশ, মিলন ও হৃদয়।

ডিবি জানায়, ঘটনার দিন ৯ মার্চ উদ্ধার করা হয় ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর ১১ মার্চ রাতে ২ কোটি ৫৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধারসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

এ নিয়ে ডাচ বাংলা-ব্যাংকের ডাকাতির ঘটনায় সর্বমোট ১১ জনকে গ্রেফতারসহ উদ্ধার করা হয়েছে মোট ৭ কোটি ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫০০ টাকা।

লুট করা টাকায় ছিনতাইকারীরা কেউ খুলনায় গাড়ি কিনেছে, কেউ গোপালগঞ্জ এলাকায় কিছু টাকা ধারও দিয়েছে। এছাড়া ছিনতাইয়ে অংশ নেওয়ারা দেশের বিভিন্ন জেলার। তাই জড়িতদের গ্রেফতার ও লুট হওয়া টাকা উদ্ধারে কিছুটা সময় লাগছে বলে জানিয়েছে ডিবি।

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ।

তিনি জানান, সোমবার (১৩ মার্চ) রাজধানীর কড়াইল বস্তির বউবাজার এলাকা থেকে হৃদয়কে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকেকে ৪৮ লাখ ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নেত্রকোনা থেকে মিলন নামে আরেকজনকে ১০ লাখ টাকাসহ গ্রেফতার করা হয়।

সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) ঘটনার মূল মাস্টারমাইন্ড আকাশকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে খুলনা থেকে আনা হয়েছিল, কিন্তু সে-ই আকাশ এটি কিছুক্ষণ আগেই আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি।

ডাচ-বাংলার সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের মূল মাস্টারমাইন্ড আকাশ ও সোহেল রানা নামে দুইজন। এরমধ্যে ঘটনার দিন ছিনতাই শেষে পালিয়ে যাওয়ার সময় আকাশ গাড়িতে উঠতে পারেনি। সিসিটিভি ফুটেজে তাকে দৌড়াতে দেখা গেছে। পরে তাকে খুলনা থেকে আমরা নিয়ে এসেছি, সে-ই যে আকাশ এটি আমরা কিছুক্ষণ আগেই নিশ্চিত হয়েছি।

এর আগে গ্রেফতার আটজনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে ডিবি প্রধান বলেন, ঘটনার দিন তারা বিভিন্ন গ্রুপে দায়িত্বে ছিল। কেউ পরিকরিকল্পনায়, কেউ সিম ও মোবাইল সংগ্রহ করা আর কেউ শুধু ভাড়ায় ‌‘কামলা’ হিসেবে ছিনতাইয়ে অংশ নেয়। তবে ছিনতাইয়ের মূল কাজে ছিলেন ৪-৫ জন।

আকাশ ও সোহেল রানা নামে ২ জন এই ছিনতাইয়ের মূল ছক সাজায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আকাশ তার পূর্ব পরিচিত ইমনের কাছে টাকা লুটের বিষয়টি জানায় এবং তাকে এই কাজে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেয়। তাকে তারা জনবল সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়। ইমন মিলন তার পূর্ব পরিচিত সানোয়ার হোসেনকে বিষয়টি অবগত করে এবং জনবল, সিম সংগ্রহ ও মোবাইল ফোন কেনার দায়িত্ব দেয়।

সানোয়ার ৮টি নতুন সিম এবং মোবাইল যোগাড় করে এবং সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা থেকে মোট ৯ জন সদস্য সংগ্রহ করে। তারা প্রত্যেকেই ঘটনার ২ দিন আগে ঢাকায় একত্রিত হয়। পরিকল্পনাকারীরা তাদেরকে ঢাকায় এনে নতুন কাপড় ও জুতা কিনে দেয়।

সোহেল রানা আগে টাকা বহনকারী প্রতিষ্ঠান মানিপ্ল্যান্ট লিংক লিমিটেডের চালক ছিল। এ কারণে সে প্রতিষ্টানটির খুটিনাটি বিষয় সম্পর্কে অবগত ছিল।   ফলে কোনো বাধা ছাড়াই তারা মাইক্রোবাসটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। নকল চাবি দিয়ে টাকা বহনকরা মাইক্রোবাসটি কোনো বাধা ছাড়াই খুলে ফেলে। মূল হোতা আকাশ টাকা লুটের পর মাইক্রোবাসে উঠতে না পারলেও সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

ডিবি প্রধান আরও বলেন, আকাশ ও সোহেল রানা বাকিদের অর্থাৎ ইমন ও সানোয়ারের কাছেও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের টাকা লুটের বিষয়টি গোপন রাখে। তারা জানায় ৬০-৭০ লাখের মতো কিছু অবৈধ হুন্ডির টাকা লুট করবে এবং সেখানে প্রশাসনের লোকও থাকবে। ঘটনার দিন সবাই কুর্মিটোলায় একত্রিত হয়ে মাইক্রোবাসে ওঠার পর বুঝতে পারে বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে।

ডাকাতির পর মূল হোতা আকাশ মাইক্রোবাসে উঠতে না পারায় বাকিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ধারনা করে, আকাশ ধরা পড়ে গেছে। এই ভয়ে গাড়িতে থাকা বাকিরা মোবাইল ফোনগুলো ৩০০ ফিট সড়কের পাশে পানিতে ফেলে দেয়। এরপর ট্র্যাঙ্ক ভেঙে টাকা লুট করতে তাড়াহুড়ো করে। পরে তারা ৩০০ ফিটের একটি নির্জন জায়গায় গিয়ে ব্যাগ এবং বস্তায় করে যার যার মতো টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।

গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে হারুন-অর-রশীদ আরও বলেন, ছিনতাইয়ে অংশ নেওয়াদের সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল থেকে আনা হয়। ডাকাতির পর তারা টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে যার যার মত বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে যায় এবং বেশ কিছু টাকা বিভিন্ন খাতে খরচও করে।

কেউ লুট করা টাকা দিয়ে খুলনায় গাড়ি কিনেছে ও একজন গোপালগঞ্জে কিছু টাকা ধারও দেয়। যার ফলে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত, গ্রেফতার ও লুণ্ঠিত টাকা উদ্ধার করতে কিছুটা সময় লাগে।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, সোহেলকে গ্রেফতার করা গেলে বাকি টাকার বিষয়ে বা আরও কেউ জড়িত আছে কি-না জানা যাবে। সোহেল আমাদের জালে রয়েছে, আশা করছি শিগগিরই তাকে গ্রেফতার করতে পারব।

তিনি জানান, ডিবির এখনো তিনটি টিম বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করছে। টাকা বহনকারী প্রতিষ্ঠান মানি প্লান্টের কেউ জড়িত আছে কি-না আমাদের তদন্তে অবশ্যই আসবে। কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করেই ১১ কোটি টাকা গাড়িতে দিয়ে দিলেন। বিনা বাধায় গাড়ির দরজা খুলে টাকার ট্রাঙ্কগুলো নিয়ে চলে গেলেন। পরে তদন্তে সবগুলো বিষয় উঠে আসবে। এখন আমাদের মূল কাজ ডাকাতদের গ্রেফতার ও টাকা উদ্ধার।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৩
পিএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।