ঢাকা: ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিশু-কিশোরদের বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক ও মানবিকতার আদর্শে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে উদযাপন করেছে।
শনিবার (১৮ মার্চ) লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন এ তথ্য জানায়।
এ উপলক্ষে পূর্ব লন্ডন আয়োজিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন শিশুদের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্নে রঙিন’ শীর্ষক এক বিশেষ স্মারক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, দেশ বিভাগের আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিসত্তার ভিত্তিতে বাঙালি জাতির জন্য একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
ড. গওহর রিজভী বলেন, বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন লাহোর প্রস্তাবে ধর্ম-ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের যে পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছিল তার মাধ্যমে বাঙালি জাতির মুক্তি ও উন্নতি সম্ভব নয়। তাই তিনি দীর্ঘ ও আপসহীন সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বিশ্বে বাঙালি জাতিকে একটি স্বাধীন জাতি ও বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
ড. গওহর রিজভী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আদর্শকে ক্ষুণ্ণ করার জন্য বিভিন্ন অপচেষ্টা চালানো হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সমুন্নত রেখেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নে অভূতপূর্ব অগ্রগতি ও সাফল্য অর্জন করে চলেছেন।
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন সাত কোটি বাঙালিকে কেউ কোনো দিন দাবায়ে রাখতে পারবে না। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে সব বাধা অতিক্রম করে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা যায়। একইভাবে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিখিয়েছেন কীভাবে কারো কাছে মাথা নত না করে আত্মমর্যাদার সঙ্গে বিশ্বে সম্মানের আসনে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে প্রতিষ্ঠা করা যায়।
হাইকমিশনার ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশকে জানতে হলে বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। তাঁর মহান নীতি ও আদর্শে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত ও গড়ে তুলতে হবে।
তিনি ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিশু-কিশোরদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মূল্যবোধে এবং বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশি মা-বাবাদের প্রতি আহ্বান জানান।
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ তার বক্তব্যে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেন, আজো তারা একইভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত রয়েছেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ এনামুল হক ও টাওয়ার হ্যামলেটসের স্পিকার শফি আহমেদ বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে ড. গওহর রিজভী ও হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডনের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের আইরিশ, স্কটিশ ও ওয়েলস ভাষায় অনুবাদের একটি বিশেষ প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন এবং লন্ডন মিশন আয়োজিত বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ বিষয়ক বিশেষ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ও বিজয়ী শিশু-কিশোরদের সার্টিফিকেট প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এদিনের বিশেষ আকর্ষণ ছিল বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে মিশনের কর্মকর্তা, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি বিশিষ্ট শিল্পী ও শিশু-কিশোরদের একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে হাইকমিশনার মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু করেন। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেয়া বাণী পাঠ করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের জন্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের শান্তি ও অব্যাহত অগ্রগতির জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২৩
টিআর/আরএইচ