ফরিদপুর: ভিমের রড বেরিয়ে পড়েছে। দেয়ালের বিভিন্ন জায়গায় ধরেছে ফাটল।
ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনটি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার শেখর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের তিনটি শ্রেণি কক্ষ ও একটি স্টোর রুম বিশিষ্ট একতলা ভবনটি ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও প্রয়োজনীয় অন্য কোনো শ্রেণি কক্ষ না থাকায় পরিত্যক্ত ওই ভবনেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীদের। যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার পলেস্তারা খসে পড়ে আহত হয়েছে কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা বইয়ের পড়া না দেখে তাকিয়ে থাকে ছাদের দিকে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে বিদ্যালয়ে কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা।
জানা যায়, ১৯৪৭ সালে স্থাপিত স্কুলটি ১৯৭৩ সালে জাতীয়করণ করা হয়। পূর্বের স্থাপনা ভেঙে ১৯৯৪ সালে ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে তিনটি শ্রেণি কক্ষের একতলা ভবনটি নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। কিন্তু মানসম্মত কাজ না হওয়ায় ২২ বছরের মাথায় পরিত্যক্ত ঘোষিত করা হয় ভবনটি। যদিও দুইবার মেরামত করা হয়েছে কিন্তু তারপরও ভবনের অবস্থা খারাপ।
সর্বশেষ ২০১৯ সালে দুই লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয় ভবনটি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে পড়ছে। ভিমের অনেক যায়গায় রড বেরিয়ে পড়েছে। ভবনটির দেয়ালের বিভিন্ন যায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়টিতে নেই সীমানা প্রাচীর।
স্কুলটির চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী অর্পিতা সরকার জানায়, ক্লাস চলাকালীন বই রেখে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। কখন যে কার গায়ে ওপর থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে। সব সময় ভয় কাজ করে।
৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মৌমিতা দাস জানায়, ভয়ে ভয়ে ক্লাস করি। মাঝে মধ্যেই ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। জরুরি ভিত্তিতে আমাদের জন্য নিরাপদ ক্লাস রুম প্রয়োজন। সে বলে মনের ভেতর ভয় নিয়ে কি ক্লাস করা যায়?
শেখর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল ম্যানেজিং কমিটির (এসএমসি) সদস্য শিক্ষক কাজী ফরহাদুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একতলা ভবনটি জরাজীর্ণ। বিভিন্ন যায়গায় দেয়ালে ফাটল ধরেছে। মেরামত করেও ভালো করা সম্ভব না। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানতে পেরেছি নতুন ভবন না হওয়া পর্যন্ত এ ভবনটি ভেঙে টিন শেড ঘর করে দেওয়া হবে। কিন্তু তারও কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। এ স্কুলে আমাদের ছেলে মেয়েরা পড়ালেখা করে। কোনো রকম দুর্ঘটনা ঘটলে দায় দায়িত্ব কে নেবে?
এ ব্যাপারে শেখর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করা গৌরাঙ্গ সরকার বলেন, ২০১৬ সালে তৎকালীন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার দাস মৌখিকভাবে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। কিন্তু শ্রেণি কার্যক্রম চালানোর মতো অন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই ভবনে ক্লাস নিচ্ছি। একাধিকবার উপজেলা শিক্ষা অফিসে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। এর মধ্যে কয়েকবার পলেস্তারা খসে পড়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ পর্যন্ত যে সব কর্মকর্তা স্কুলটি পরিদর্শন করেছেন, তাঁদের সবাই পরিদর্শন খাতায় ভবনটিকে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য লিখেছেন।
তিনি আরও জানান, ২২ শতাংশ জমির ওপর স্থাপিত বিদ্যালয়ের বড় ভবন। দুই কক্ষের আরেকটি একতলা ভবন আছে। সে ভবনের এক রুমে অফিস কক্ষ এবং আরেক রুমে শিশু শ্রেণি। টিন সেড ওয়াল করা এক রুমের আরেকটি ঘর আছে সেটিও বর্তমানে পরিত্যক্ত। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারণে কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থী। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে তবে সহকারী শিক্ষক পদে ৪জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। জরাজীর্ণ ভবনের কারণে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী নন অভিভাবকরা। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১৬৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ভবন ভেঙে টিন শেড ঘর করে দেবে বলে শুনেছি কিন্তু সেটা কবে হবে জানি না। অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং একটি নতুন ভবন স্থাপনের দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু আহাদ মিয়া বলেন, এর মধ্যে শেখর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি সাইক্লোন সেন্টার বরাদ্দ এসেছিল কিন্তু যায়গার অভাবে সেই বরাদ্দ ফেরত যায়। ওই বিদ্যালয়ে জমির পরিমাণ কম। নতুন ভবন পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। ভবন না পাওয়া পর্যন্ত পরিত্যক্ত ভবনটি ভেঙে ওখানে একটি টিন সেড ঘর করে দেওয়া হবে। যেখানে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৮ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৩
আরএ