ঢাকা, রবিবার, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

এক স্কুলে পড়ছে ১০ জোড়া যমজ ভাই-বোন 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৬ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৩
এক স্কুলে পড়ছে ১০ জোড়া যমজ ভাই-বোন 

ঠাকুরগাঁও: ভাই-বোনের সম্পর্ক গুলো সবসময় মধুর হয়। এক সঙ্গে বেড়ে ওঠা আর খুনসুটি করেই পার হয়ে যায় পুরো সময়।

তবে সে সম্পর্ক আরও মধুর হয়ে উঠে যমজ ভাই-বোনদের ক্ষেত্রে। একই সময়ে পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখা। আর জীবনের পথচলায় একই রকম দেখতে, একই ভাল লাগা আর খারাপ লাগা গুলো বেশ আকৃষ্ট করে সকলকে। এক সঙ্গে খাওয়া, খেলাধুলা করা ও পড়াশোনা করাসহ নিজেদের ভাল লাগার পাশাপাশি মুগ্ধতাও ছড়ায় আশপাশে। তেমনি একসঙ্গে এক বিদ্যালয়ে ১০ জোড়া যমজ ভাই-বোন পড়াশোনা করছেন।  

বেশিরভাগ যমজ শিশুকে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়। তেমনি ঠাকুরগাঁওয়ের একটি স্কুলে একসঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণিতে ১০ জোড়া যমজ ভাইবোন পড়াশোনা করছে। এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১০ জোড়া যমজ শিশুর পড়াশোনার বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।  

জানা যায়, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মথুরাপুর পাবলিক হাই স্কুলে এক সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণীতে পড়াশোনা করেন ২০ জন যমজ ভাই-বোন। বিদ্যালয়টির ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে তাহসিন-তাসনিম ও সান-মুন, সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে কার্তিক-গণেশ, হাবিব-হাফিজ ও সুমাইয়া-সাদিয়া, অষ্টম শ্রেণিতে শুভ-সৌরভ, নবম শ্রেণিতে হাসি-খুশি ও তাহবি-তাসবি এবং দশম শ্রেণীতে পড়াশোনা করেন আবিদ-অমিত ও রাহুল রাহা- চঞ্চল রাহা যমজ ভাই বোন।  

যমজ ভাই-বোনদের চেহারায় মিল থাকায় তাদের নিশ্চিত করতে খানিকটা বিড়ম্বনা হলেও তাদের সঙ্গে নিয়ে বেশ উপভোগ করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সহপাঠীরা। দুইজন একসঙ্গে বেড়ে ওঠাকে বেশ গর্বের সঙ্গে দেখছেন যমজ ভাই-বোনেরা।  

ষষ্ঠ শ্রেণীর যমজ দুই ভাই সান ও মুন বলেন, আমরা দুই ভাই একসঙ্গে সব কাজ করি। খাওয়া, খেলাধুলা ও স্কুলে আসা যাওয়া একসঙ্গে করি। আমাদের দুজনের পছন্দ মাংস ভাত। শুধু দুজনের দুই রঙ পছন্দ। একজনের লাল আরেকজনের নীল। আমরা একই পোশাক পরে বিভিন্ন জায়গায় যাই। শুধু পোশাক না আমাদের জুতা, চশমা, প্যান্ট সব একরকম। আমাদের খুব ভালো লাগে। তবে অনেকেই আমরা কে কোনোটা চিনতে পারেনা। আমরা এ বিষয়টাকে আরও বেশি উপভোগ করি। আমরা দুই ভাই অনেক আনন্দ করি একসঙ্গে। বাড়িতে একসঙ্গে পড়তে বসি। আমাদের বাবা-মা ও পরিবার সকলে খুশি আমাদের নিয়ে।

সপ্তম শ্রেণীর যমজ দুই বোন সুমাইয়া ও সাদিয়া বলেন, আমাদের সবকাজগুলো আমরা একসঙ্গে করি। আমাদের দুজনের প্রিয় রঙ হল নীল। আমরা একসঙ্গে স্কুলে আসি। একসঙ্গে ক্লাশে বসি। টিফিনের সময় আবার একসঙ্গে খেলাধুলা করে থাকি। সব কাজগুলো আমরা একসঙ্গে করি। ক্লাসের সময় একজনকে বকা দিলে আমাদের আরেকজনকে খুব খারাপ লাগে্ আবার কেউ যদি আমরা ভালো কিছু করি তাহলে মন থেকে ভালো লাগা কাজ করে। স্কুলের শিক্ষক ও সহপাঠীরা আমাদের চিনতে পারেনা। তখন একসঙ্গে দুজনকে ডাকে তখন আমাদের খুব ভালো লাগে।  

নবম শ্রেণির যমজ দুই বোন হাসি ও খুশি বলেন, আমাদের একটা বড় সুবিধা হল কেউ কোনো ভুল করলে একজন আরেক জনকে চাপিয়ে দেওয়া যায়। পরে আবার আমরা একসাথে মিলে যাই। আর পরিবারের কাছে, আত্নীয় স্বজনদের কাছে ও শিক্ষকদের কাছেও আমরা বেশ আদর পায়। আমরা আমাদের পুরো সময়টা একসঙ্গে কাঁটে। আমরা জমজ হয়ে অনেক খুশি। পড়াশোনা করার সময় আমরা একজন আরেকজনের সহযোগিতা নিতে পারি। সবমিলিয়ে আমরা একজন আরেকজনের পূর্ণ পরিপূরক। একজন আরেকজন ছাড়া চলতে পারিনা। রাগারাগি হলে আবার কিছুক্ষণের মধ্যে মিলে যায়। আমরা জমজ হয়ে অনেক খুশি।  

বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষিকা আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, যমজ বিষয়টি আমি বেশ উপভোগ করি। তারা যখন পাশাপাশি বসে তখন তাদের দেখতেও ভালো লাগে। তাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ অনেক বেশি। তারা যাতে ভালো কিছু করে আমরা সবসময় তাদের উৎসাহিত করি।  

বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক মামুনুর রশিদ বলেন, আমাদের প্রত্যেকটি শ্রেণীতে যমজ শিক্ষার্থী আছে। ক্লাশ নেওয়ার সময় একজন পড়া দিতে পারলে অপরজন খুশি হয়। আবার একজন না পারলে অপরজন মন খারাপ করে। তাদেরকে বুঝার কোনো উপায় নেই যে কে কোনটা। সে কারণে একজনের নাম আরেকজনকে বলতে হয়। তবে তারা বেশ মেধাবী। আমরা আশা রাখছি তারা তাদের কর্মজীবনে ভালো কিছু করবেন।  

মথুরাপুর পাবলিক হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে ২০ জন যমজ ভাই-বোন পড়াশোনা করেন। তাদের নাম গুলো প্রায় একই রকম ও চেহারার মিলও দেখা যায়। সে কারণে কোনটা কে সেটা বুঝতে বিড়ম্বনায় পরতে হয়। তবুও আমরা যমজ বিষয়টি বেশ উপভোগ করছি। এ ছাড়াও আমি লক্ষ করেছি তাদের মেধাও প্রায় সমান হয়। একজনের শ্রেণীর রোল নাম্বার দুই হলে অপরজনের তিন হয়। তাদের আচার-আচরণ, পোশাক পরিচ্ছদ একই রকম। তারা একসঙ্গে থাকতে বেশ স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। আর আমরাও বিষয়টি উপভোগ করি।

বাংলাদেশ সময়: ২৯২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।