সিলেট: স্বাধে ঘ্রাণে অনন্য সিলেটের খিচুড়ি-আখনি। রোজার প্রথম দিনেই সিলেটে রকমারি ইফতারের আয়োজনের অনুষঙ্গ হয়ে ওঠেছে খিচুড়ি-আখনি।
চালের সঙ্গে ডাল, সবজি ও হরেক রকমের মসলার সংমিশ্রণ। তাতে রয়েছে মন মাতানো ঘ্রাণ। আর ঘ্রাণেই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে সিলেটের পাতলা খিচুড়ি। সিলেটে রোজাদারদের জনপ্রিয় খাবার এটি। দিন শেষে ইফতারে স্বাস্থ্যসম্মত হিসেবে খিচুড়ি তৈরি করে বিক্রি হয়ে থাকে রেস্তোরাগুলোতে।
এই খাবার সিলেটের প্রতিটি রেস্টুরেন্ট এমনকি বাসা-বাড়িতেও জনপ্রিয়। সেই সঙ্গে ইফতারের অনুষঙ্গ আখনি-পোলাও (তেহারি) থাকবেই। ঢাকার তেহারি সিলেটে আখনি হিসেবে সমাদৃত। এবারও সেই আখনির কদর ইফতারে। এমনটি জানিয়েছেন নগরের জিন্দাবাজার পালকী রেস্তোরার স্বত্বাধিকারী কবির আহমদ।
তিনি বলেন, খিচুড়ি-আখনি (তেহারি) এ দুই আইটেম না হলে ইফতারে যেনো অপূর্ণতা থেকেই যায়। দিন শেষে রোজাদাররা ভাজাপোড়া খেলে এসিডিটির সমস্যায় ভোগতে হয়। যে কারণে অনেকটা তরল খাবার হিসেবে খিচুড়ি খান। আর আখনি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের পছন্দ। যে কারণে এমন কোনো রেস্তোরা নেই, ইফতার আয়োজনে এ আখনি রাখেন না। এছাড়া ব্যতিক্রমী আযোজনের মধ্যে বড় বাপের পোলায় খায় ১৫শ’ টাকা পিস বিক্রি করছেন তারা।
শুক্রবার (২৪ মার্চ) সিলেট নগরের বিভিন্ন রেস্তোরা ঘুরে দেখা গেছে, রোজার প্রথম দিন থাকায় রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল ছিল কম। দোকানগুলোতে নেই কোনো ভিড়। মার্কেট, বিপনীবিতানগুলোও তালাবদ্ধ। আর তাই ইফতারের দোকানে নেই ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। তবে ইফতার কিনতে আসা ক্রেতাদের বেশি সংখ্যক খিচুড়ি, আখনি ও জিলাপি কিনতে আসেন বলে জানান, সিলেটে মিষ্টি ও খাদ্যপণ্য প্রস্তুত ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ফিজার ব্যবস্থাপক জয়নার আবেদীন বুলু।
এদিকে, রোজায় বাসা-বাড়িতে ইফতারের দাওয়াতের আয়োজনে গৃহিণীরা জনপ্রিয় খিচুড়ি রান্না করতে ভুলেন না। মাদরাসা এতিমখানাতেও ইফতারের সময় খিচুড়ি-আখনি পরিবেশন করা হয়। নরম এ খাবার শরীরের জন্য সহনীয় হওয়াতে সিলেটের শিশু থেকে বুদ্ধ সকলের কাছে প্রিয় পাতলা ওঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি এক কেজির বাটি খিচুড়ির মূল্য ২২০ টাকা। এককেজি আখনি-পোলাও ২২০ টাকা। দামেও সহনীয় হওয়াতে সব শ্রেণীর মানুষ বাজার থেকে ইফতার সামগ্রী হিসেবে খিচুড়ি কিনে নিতে পারেন।
সরেজমিন নগরের পানসী, পাঁচভাই, ভোজন বাড়ি, পালকী, সাম্পান রেস্টুরেন্ট ঘুরে দেখা যায়, সব রেস্টুরেন্টেই খিচুড়ি ও আখনি-পোলাও বিক্রি হচ্ছে। তবে স্বাদের দিক থেকে মোহনীয় এমন দোকানে ভীড় করছেন ক্রেতারা।
জিন্দাবাজারের পানসী রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী আবু বকর সিতু বাংলানিউজকে বলেন, রোজাদারদের জন্য খিচুড়ি স্বাস্থ্যসম্মত। সারা দিন অভুক্ত থেকে ইফতারের সময় খিচুড়ি বেশি পছন্দ এ অঞ্চলের মানুষের। ডাল-চাল ছাড়াও খিচুড়িকে সুস্বাদু করে তুলতে বিভিন্ন প্রকারের সবজি ও মসলা ব্যবহার করা হয়। যে কারণে এর স্বাদই আলাদা।
এছাড়া আখনি তিন ধরণের করা হয়ে থাকে। এরমধ্যে মোরগ, পোলাও ও গরুর মাংসের। প্রতিকেজি আখনি ২২০ টাকা বিক্রি করা হয়ে থাকে বলেন তিনি।
পাঁচভাই রেস্টুরেন্টের আব্দুল কাইয়ুম বাংলানিউজকে বলেন, রোজাদারদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি চিন্তা করে প্রতিনিয়ত ইফতারের অন্যান্য আইটেমের সঙ্গে খিচুড়ি উপকরণ হিসেবে থাকে। দামে কম থাকায় বিক্রিও হয় ভালো। রসেই সঙ্গে হালিম কিনতে ভিড় করেন ক্রেতারা।
পালকী থেকে খিচুড়ি কিনে নিতে আসা নগরের মিরের ময়দান শাহীন আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, রেস্টুরেন্টের খিচুড়ি বিভিন্ন ধরনের উপকরণ দেওয়া হয়। তাছাড়া খিচুড়ি বাসি বিক্রি হয় না। যে কারণে প্রতিদিন রেস্টুরেন্ট থেকেই খিচুড়ি কিনে বাসায় নিই।
চিকিৎসকদের মতে, সারাদিন রোজা রাখার পর খালি পেটে শক্ত খাবার পড়লে অনেক সময় শরীরের জন্য অসহনীয় হয়ে ওঠে। এতে এসিডিটি বেড়ে যায়। এ কারণে খিচুড়ি সহজে হজম হয়। কেননা এটি তরল খাবার, শরীরের জন্যও ক্ষতিকর নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৩
এনইউ/এসএ