সাভার (ঢাকা): কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেছেন, বাণিজ্যিক কৃষি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে শুধুমাত্র যশোর অঞ্চলেই ১৮০০ জন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষি মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এবং তাদের মধ্যে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতকরণ সরঞ্জামাদী বিতরণ করা হবে।
শুক্রবার (৭ এপ্রিল) বেলা ১১টায় সাভারের মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট প্রশিক্ষণ রুমে যশোর অঞ্চল টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পের পাঁচদিন ব্যাপী কর্মকর্তা প্রশিক্ষণের সমাপণী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, অত্র প্রকল্পের মাধ্যমে একদিকে যেমন যশোর অঞ্চলে দানাদার ফসলের পাশাপাশি বিভিন্ন উচ্চমূল্য ফসলের আবাদ বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের ফলে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ক্ষতি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পাবে। এছাড়াও কৃষি উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাণিজ্যিক কৃষি সম্প্রসারণ হবে ও ব্যয়সাশ্রয়ী প্রযুক্তির মাধ্যমে জাতীয় জ্বালানি সাশ্রয় হবে। ফলে গ্রামীণ কৃষকের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধি হবে।
অংশগ্রহণকারী প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে কৃষি সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দেশে খাদ্য ঘাটতি নিরসনে তিনি প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। উক্ত নির্দেশ বাস্তবায়নের লক্ষে অত্র প্রকল্পের আওতায় যশোর অঞ্চলে ২২ হাজারের অধিক বসতবাড়ির পতিত জমি আবাদের আওতায় আনা হবে। পাশপাশি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষে সম্ভাব্য সকল স্তরে ‘উত্তম কৃষি চর্চা নীতিমালা’ অনুসরণের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
ওয়াহিদা আক্তার আরও বলেন, এক সময় এদেশে মঙ্গা ও খাদ্যাভাব ছিল, কিন্তু বর্তমান কৃষি বান্ধব সরাকারের বিভিন্ন যুগান্তকারী পদক্ষেপের ফলে খাদ্যশস্য উৎপাদনে আমাদের দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি বিশ্ব বাজারে নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি করার মত ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ, কৃষিবিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণবিদদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং কৃষকের পরিশ্রম এই কৃষি উন্নয়নের ধারার মূল চালিকা শক্তি।
দেশের ক্রমহ্রাসমান আবাদী জমি থেকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পুষ্টি চাহিদা পুরণ, বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা এবং মহামারি করোনা অভিঘাত ও বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা পরবর্তি দেশের জনগণের খাদ্য ও পুষ্টির ঘাটতি নিরসনে খোরপোশ কৃষিকে বাণিজ্যিককৃষিতে রুপান্তরই আগামীর কৃষির অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ।
উক্ত চ্যালেঞ্জ মেকাবেলা করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্ব বাজরে মানসম্পন্ন কৃষি পণ্য রপ্তানীর মাধ্যমে দেশের কৃষি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্যে ভূমিকা রাখবে যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ বাদল চন্দ্র বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) কৃষিবিদ তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী, কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক কৃষিবিদ ড. সুরজিত সাহা রায়, মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট এর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. ফেরদৌস আহমেদ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ। পরে অতিথিরা প্রশিক্ষণার্থীদের কোর্স সমাপনী সনদ বিতরণ করেন।
উল্লেখ্য যে, দেশের অঞ্চল ভিত্তিক কৃষি সম্ভাবণাকে বিবেচনায় রেখে কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক যশোর অঞ্চলের ছয়টি জেলার ৩১টি উপজেলায় সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে গত জুন হতে জুলাই, ২০২৭ মেয়াদে “যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ” শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। অত্র প্রকল্পের আওতায় মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, সাভার ঢাকা এর প্রশিক্ষণ হলরুমে গত ৩ এপ্রিল তারিখ হতে ৫ দিনব্যাপী বিসিএস কৃষি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২৩
এসএফ/ এসএম