ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সৈয়দপুরে টিসিবিতে চলছে হরিলুট, কমিশন খাচ্ছে ডিলার

ডিষ্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২৩
সৈয়দপুরে টিসিবিতে চলছে হরিলুট, কমিশন খাচ্ছে ডিলার

নীলফামারী: ট্রেডিং কর্পোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রমে নীলফামারীর সৈয়দপুরে চলছে হরিলুট। কৌশলে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে কার্ড কেড়ে নিয়ে গোপনে অন্যের কাছে বিক্রি করেছেন মেম্বার ও চেয়ারম্যান।

কমিশন পেয়ে এ অনিয়মে সহযোগিতা করেছে ডিলার ও সরকারি ট্যাগ অফিসার। এসব অপকর্মের কারণে কার্ডধারী হয়েও পণ্য পাননি অনেকে। আর অনেকে কার্ডধারী না হয়েও এক বা একাধিকের কার্ড নিয়ে টিসিবি পণ্য নিয়ে নিচ্ছেন গত দুমাস ধরে।

এসব চিত্র দেখা যায় ইউনিয়ন পর্যায়ে টিসিবির মাসিক পণ্য বিতরণের সময়। রোববার (৯ এপ্রিল) সকালে উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে কার্ডধারী হয়েও পণ্য না না পাওয়া শতাধিক দরিদ্র মানুষ বিক্ষোভ করেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চার মাস আগে পণ্য নেওয়ার সময় সময় তাদের কার্ড ডিজিটাল করার কথা বলে জমা নেয় ডিলার। কিন্তু আজও তাদের কার্ড ফেরত দেওয়া হয়নি। মাঝে একবার টিসিবির পণ্য তাদের দেওয়া হয়েছিল। এরপর অনেক দিন বন্ধ থাকার পর রোববার দিয়েছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কার্ড না পাওয়ায় তারা টাকা থাকলেও পণ্য নিতে পারছেন না। অথচ ডিলার জানিয়েছে, আগেরবার সব কার্ডের বিপরীতে পণ্য দেওয়া হয়েছে। তাহলে তাদের কার্ড ও প্রাপ্যগুলো কোথায়? ভুক্তভোগীরা জানতে চান এ তসরুপের পেছনে তারা আছেন, কেন তারা গরিবের হক মেরে খাচ্ছেন? তারা এসব অপকর্মের বিচারও দাবি করেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ডিলারের লোকজন তালিকার সঙ্গে কার্ড মিলিয়ে দেখার কাজ করছেন না। যিনি কার্ড নিয়ে গেছেন তিনিই আসল ব্যক্তি কিনা যাচাই করা হচ্ছে না। ফলে এক ব্যক্তিই একাধিক কার্ডে টিসিবির পণ্য নিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে টিসিবির ডিলার প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাফা স্টোরের ম্যানেজার সাবু বলেন, কার্ডধারী নিজের কার্ড দিয়ে মাল নিচ্ছে না অন্যেরটা দিয়ে নিচ্ছে তা দেখা আমাদের দায়িত্ব না। কার্ডের মালিক নিশ্চিত করা আমাদের কাজ নয়। ওটা দেখবে ট্যাগ অফিসার। আমরা যার কাছে কার্ড পাব তাকেই পণ্য দেব। পণ্য দিয়ে আমরা কার্ড নিয়ে চেয়ারম্যানকে বুঝিয়ে দেই। তিনি যাচাই বাছাই করে সুবিধাভোগীদের মাঝে আবার বিতরণ করেন। কেউ কার্ড না পেয়ে থাকলে তাতে আমাদের কিছুই করার নাই। আমরা বরাদ্দকৃত ৪ হাজার ২২০টি কার্ডের বিপরীতে দুই লিটার করে ভোজ্য তেল, চিনি ও মসুর ডাল যথাযথভাবে বিতরণ করেছি। কেউ কার্ড অনুযায়ী পণ্য না পেলে দায় আমাদের। তবে কার্ড পাওয়া না পাওয়া চেয়ারম্যান মেম্বারদের বিষয়।

ট্যাগ অফিসারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সৈয়দপুর উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসার আবু জাফর। তিনি আজ পণ্য বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে তার অফিসে গেলে ‘সাংবাদিক এসেছে’ জেনে তিনি পালিয়ে যান। তার মোবাইলেও কয়েকবার কল করা হয়। তিনি রিসিভ করেননি।

একটি সূত্রের অভিযোগ, চেয়ারম্যান মেম্বাররা কৌশল করে ডিলারের মাধ্যমে কার্ড জমা নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে অনেকের কার্ড আটকে দেন। সেগুলো আবার বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করেন; আবার নিজেদের লোকজন দিয়ে পণ্য নিয়ে সেগুলো বিক্রি করেন। এভাবে প্রায় ২ হাজার কার্ডপ্রতি বহু অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে, যা অন্যায় ও অবৈধ। এতে ডিলার ও ট্যাগ অফিসারও জড়িত। তাই তারা পণ্য বিতরণের নিয়ম মানছেন না। ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই পোড়ারহাট বাজারে এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রিত পণ্য মজুদ রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে বোতলাগাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনিরের সঙ্গে কথা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, কার্ড আটকে রাখা, অন্যজনের কাছে বিক্রি, নিজেদের লোক দিয়ে অন্যের পণ্য নেওয়া- কোনো কিছুই ঠিক নয়। সব মিথ্যা। আমি নিজেই পণ্য বিতরণের সময় থাকি। তাই অনিয়ম-দুর্নীতি করার সুযোগও নেই।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।