মেহেরপুর: সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, দেশের কোর্টগুলোতে প্রায় ৪০ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এই মামলার জট কমাতে বিচারক এবং আইনজীবীরা একসঙ্গে চেষ্টা করছে।
মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার সময় মেহেরপুর জজকোর্ট চত্বরে বিচারপ্রার্থীদের জন্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ‘ন্যায়কুঞ্জে’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
এসময় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার মো. তোফায়েল হাসান, মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ মো. শহিদুল্লাহ, মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, মেহেরপুর পুলিশ সুপার মো. রাফিউল আলম, জজকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট পল্লব ভট্টাচার্য, আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্টে গত বছর ৮২ হাজার মামলা ফাইল হয়েছে। মামলাগুলোর মধ্যে ৭৯ হাজার মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। অর্থাৎ নিষ্পত্তি হয়েছে শতকরা ৯৫ ভাগ। জেলা পর্যায়ের জুডিসিয়ারিতেও যে মামলা ফাইল হয়েছে, তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি জেলাতে কেস নিষ্পত্তির যত মামলা ফাইল হয়েছে তার চেয়ে বেশি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, এই দেশের ৪০ লাখ মামলার জন্য বিচারকের সংখ্যা মাত্র দুই হাজার। এটা খুবই অপ্রতুল। আমরা চেষ্টা করছি, নতুন বিচারক নেওয়ার। ইতোমধ্যে ১০২ জন বিচারক নেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। পুলিশী তদন্তে আছেন তারা। আমরা এই বছরের মধ্যেই তাদের নিয়োগ দিতে পারবো। এছাড়া আরও ১০০ বিচারক নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আরও বলেন, আমরা আশাবাদী, বিচারকগণ পরিশ্রম করেই মামলাজট সুরাহা করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আইনজীবীদের আদালতকে সহায়তা করার আহ্বান জানান। যাতে করে সবাই একসঙ্গে মামলাজটকে রিমুভ করতে পারি।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, এই দেশের মালিক জনগণ। প্রতিদিন আদালত প্রাঙ্গণে শত শত লোক বিচারের আশায় আসেন। তাদের বসার কোনো যায়গা নেই। এইসব চিন্তা ভাবনা থেকেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিচারপ্রার্থীরা যাতে আদালতে এসে একটু স্বস্তিতে বসতে পারেন। সেটাই আজকের এই ‘ন্যায়কুঞ্জে’র কনসেপ্ট।
সেই বিবেচনা থেকেই সরকার আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের বিশ্রামাগারের জন্য ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। সেই টাকাতেই এই ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নির্মাণ। ৬৪টি জেলায় প্রায় ৫০ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে, যেখানে লোকজন বেশি সমাগম হবে সেখানে একটু বেশি বরাদ্দ দেওয়া হবে। তুলনামূলক ছোট জেলাতে একটু কম বরাদ্দ হবে।
ঠিকাদারদের এবং প্রকৌশলীকে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য বিশ্রামাগার ন্যায়কুঞ্জ তৈরি করা হচ্ছে। তাই লক্ষ্য রাখবেন যেন এই বরাদ্দের টাকাটা যাতে মিসইউস না হয়। এইসব অসহায় সাধারণ মানুষের দিকে তাকিয়ে দ্রুত এর নির্মাণকাজ শেষ করারও আহ্বান জানান তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী মেহেরপুর সার্কিট হাউজে পৌঁছালে প্রথমে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, মেহেরপুর পুলিশ সুপার মো. রাফিউল আলম, প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম ও জজকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট পল্লব ভট্টাচার্য, আইনজীবী সমিতির পক্ষে অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান, মেহেরপুর পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) পক্ষে অ্যাডভোকেট পল্লব ভট্টাচার্যসহ জেলা প্রশাসন ও জেলা জজকোর্টের বিচারকগণ তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
এসময় মেহেরপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি চৌকস দল প্রধান বিচারপতিকে গার্ড অব অনার দেন। পরে আদালত চত্বরে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করেন প্রধান বিচারপতি।
সকাল ৯টার দিকে মেহেরপুর জজ আদালতের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এসময় বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৩
আরএ