ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করেন জালাল, কিন্তু কেন?

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৩
ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করেন জালাল, কিন্তু কেন?

ভোলা: ঘোড়ার পিঠে চড়ে বিয়ে বাড়ি যাওয়ার গল্প সচরাচর শোনা গেলেও ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করার মতো ঘটনা বিরল। এমনি এক ভিক্ষুকের সন্ধান মিলেছে দ্বীপজেলা ভোলায়।

জামাল হোসেন ওরফে জালু নামের এক ভিক্ষুক ঘোড়ার পিঠে চড়ে ভিক্ষা করে বেড়ান মানুষের বাড়ি বাড়ি। চরম অসহায় জীবন-যাপন করলেও কেউ খবর নেয় না অসহায় জালুর। স্ত্রী শাহিনুর বেগম নিয়ে ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন এ ভিক্ষুক। সেই ঘরটিও তার নিজের নয়। এক আত্মীয় থাকতে দিয়েছেন তাদের।  

জালাল উদ্দিনের জীর্ণশীর্ণ ঝুপড়ি

কোনো ঘর-বাড়ি না থাকলেও জালাল উদ্দিনের রয়েছে একটি ঘোড়া। যে ঘোড়ায় চেপে ভিক্ষা করেন তিনি।

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নের চর গঙ্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা এই জালাল উদ্দিন জালু।  

সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন সকালে ঘোড়ার পিঠে চড়ে ভিক্ষার ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন জালাল। ফেরেন সন্ধায়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল ও টাকার জন্য সাহায্য চান। দিন শেষে যা মিলে তা দিয়েই স্বামী-স্ত্রী ও ঘোড়ার আহারের ব্যবস্থা করেন।

ঘোড়ায় চেপে জালাল উদ্দিনের ভিক্ষা করার বিষয়টি প্রথমে ভালোভাবে নিত না গ্রামবাসী। তবে তার অসহায়ত্ব দেখে এখন খুশি মনে ভিক্ষা দেন অনেকে।

কারণ, ষাটোর্ধ্ব বয়সী এই বৃদ্ধের চলাফেরার সামর্থ্য সেভাবে নেই। শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন তিনি।  

জালাল উদ্দিন জানান, ১৩ হাজার টাকা দিয়ে ঘোড়াটি কিনে ভিক্ষায় নেমেছেন।  

তিনি বলেন, আমার সহায়-সম্বল কিছুই নেই। একটা গরু ছিলো সেটা বিক্রি করে ওই টাকা দিয়ে ঘোড়া কিনেছি। সেই ঘোড়া নিয়ে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে যাই। যা পাই তা দিয়ে দুটো ডাল-ভাতের ব্যবস্থা হয়। যখন টাকা মেলে না তখন না খেয়ে কাটাতে হয়।

এমন অসহায় দিন যাপন করলেও কেউ তাদের খোঁজ নেয়না বলে অভিযোগ জালুর স্ত্রীর শাহিনুর বেগমের।  

তিনি বলেন, অনেকেই সরকারি সাহায্য পায়, আমরা পাইনা, কেউ আমাদের দেয় না।  

ঘোড়ায় চড়ে বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করছেন জালাল

স্থানীয় বাসিন্দা মায়ানুর, হাজেরা, রশিদা ও কালাম বলেন, নদীতে ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন জালাল উদ্দিন। এক সময় স্ত্রীসহ ঢাকায় ঝাড়ুদারের কাজ করতেন জালাল। করোনার প্রাদুর্ভাবের সময় কর্মহীন হয়ে পড়েন। বাধ্য হয়ে ফির আসেন নিজের গ্রামে। উপার্জনের কোন পথ না পেয়ে শুরু করেন ভিক্ষাবৃত্তি। আগে হেঁটে ভিক্ষা করতেন। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে ঘোড়া কিনে তাতে চড়ে ভিক্ষা শুরু করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাচড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মহিবুল্লাহ বলেন, জলু অসহায় সেটা জানি। যখনই তার সঙ্গে দেখা হয় তখন তাকে সাহায্য করি।

বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরীন হক বলেন, সাচড়া ইউনিয়নে ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করছেন, এমন মানুষের কথা আমার জানা নেই। আমি বিষয়টির খোঁজ-খবর নিয়ে তাকে সহযোগিতা করব। তিনি ভূমিহীন-গৃহহীন হয়ে থাকলে চেষ্টা করব তাকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেওয়ার।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।