ঢাকা: রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর এলাকার বহু পুরনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান মাজার কো-অপারেটিভ মার্কেট। গজ কাপড়, টেইলার্স, পোশাক, জুতা, মোবাইল-কম্পিউটারসহ নানা পণ্যের এ মার্কেটে অসুবিধা অনেক।
মিরপুর ১ মাজার কো-অপারেটিভ মার্কেটটি পরিচালিত হয় সভাপতি-সম্পাদকসহ ৯ সদস্যের কমিটির মাধ্যমে। প্রতি তিন বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয় মার্কেট নির্বাচন। সে হিসেবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানটির দোষ-গুণ সাব তাদের ওপর বর্তায়। দোকানিরা বলেছেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে কমিটির তৎপরতা চোখে পড়ে। বাকি সময় আশায় থাকেন তারা।
এ মার্কেট নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা-পথচারী ও সাধারণদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ হকার নিয়ে। মার্কেট খোলা থেকে বন্ধ হওয়া পর্যন্ত মার্কেটের তিন পাশ ঘিরে হকারদের যন্ত্রণায় ক্রেতারা অস্থির হয়ে পড়েন। বিক্রেতারাও এ জ্বালায় জর্জরিত। কোনো এক ‘প্রভাবশালী মহল’ ও ‘রাঘব বোয়াল’দের কারণে হকারদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। কেন করা যায় না, সে উত্তর দিতে পারেনি মার্কেট কমিটি।
মার্কেটের একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনসহ সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা মার্কেটের সামনে হকার বসান। প্রতিদিন হকার প্রতি তারা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করেন। এ ছাড়া ফুটপাতের জায়গা থেকে শুরু করে সরকারি জায়গায় (রাস্তায়) পজিশন নিতে ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেন। এসব হকারদের আবার ‘স্থানীয় সন্ত্রাসীদেরও ম্যানেজ করতে হয়’। মার্কেটের দোকানি-ক্রেতাদের দাবি, কমিটির লোকজনও হকারদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন। তা না হলে কেন মার্কেটের তিন পাশ থেকে তারা হকার উচ্ছেদ করতে পারেন না?
এ ব্যাপারে অবশ্য কমিটির দাবি, তারা হকারদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন না। মার্কেটের পূর্ববর্তী কমিটিও এ দাবি করেছে। তারা বলেন, বর্তমান কমিটি বা আগের কোনো কমিটি হকারদের কাছ থেকে একটি টাকাও আদায় করে না। কখনও করবেও না। তাহলে হকারদের উচ্ছেদ কেন করা যায় না? এমন প্রশ্নে কমিটির সদস্যরা বলেন, কেন যায় না তা তো আপনারা (সাংবাদিক) বোঝেনই।
সম্প্রতি রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেট আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেখানকার দোকানিরা প্রায় পথে বসে গেছেন। কদিন আগে নবাবপুরে মোহাম্মদিয়া মার্কেটে আগুনে ২০টি দোকান ও গুদামের পুড়ে গেছে। মিরপুর ১ মাজার কো-অপারেটিভ মার্কেটও আগুনের শিকার হয়েছিল। প্রথমবার ১৯৯৯ সালে। সে সময় প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি দেখেছিল বাণিজ্যিক এ প্রতিষ্ঠানটি। এক দশক আগেও মার্কেটটিতে আগুনের ঘটনা ঘটে। সেবার অল্পের জন্য ভয়াবহ ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন মার্কেটের দোকানিরা।
বারোশ’র অধিক দোকানের এ মার্কেটে ব্যাপক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। যতটুকু আছে সেটিও অপ্রতুল। বর্তমান মো. খোরশেদ আলম ইঞ্জিনিয়ার ও অ্যাডভোকেট আলাউদ্দিন প্যানেলের কমিটির দাবি মার্কেটে ২০০টি ফায়ার ডিসপোজাল ইউনিট আছে। কিন্তু সরেজমিনে মার্কেটটিতে এমন ব্যবস্থা চোখে পড়েনি।
মার্কেটের চার তলার দোকানগুলোয় ঝুটের গোডাউর, তা ছাড়া টি-শার্ট, জিন্সের দোকান-গোডাউন করা হয়েছে। এ অবস্থায় আগুন ধরে গেলে পুরো মার্কেট ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেখানকার দোকানিদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, আমরা কোনোরকম এখানে ব্যবসা করে যাচ্ছি। আমাদের ভয় আছে। যেকোনো সময় আগুন লাগলে আর রক্ষা হবে না। পুরো মার্কেটে আগুন ধরে যাবে। সে রকম সুরক্ষাও নেই এখানে।
এ প্রতিষ্ঠানের কমিটির বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ, মার্কেটের কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পরিবহনের কারণে যানজট লেগে থাকা। মার্কেটে আগে গার্মেন্টস ছিল তখন সেগুলোর পরিবহনের কারণে জট লেগে থাকতো। এখন গার্মেন্টস না থাকলেও বিভিন্ন ঝুট-গুদামের পরিবহনের কারণে ব্যাপক জট সৃষ্টি হয়। এতে স্থানীয়দের পাশাপাশি ক্রেতা-ভোক্তারাও যন্ত্রণা ভোগ করেন। আবার পার্কিং না থাকায় মার্কেটের পেছনের দিকে মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, রিকশা রাখা হয়। যে কারণেও বিড়ম্বনায় পড়েন ক্রেতা-বিক্রেতারা। তারা বলছেন, মার্কেট কমিটির অব্যবস্থাপনার কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তাছাড়া হকার ব্যবসায়ীদের কারণে কিছু কিছু সময় যানজটের তীব্রতা বাড়ে দ্বিগুণ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বর থেকে শাহ-আলী মাজার যেতে বিশাল চওড়া রাস্তার অর্ধেকের বেশি অংশ হকারদের দখলে। ঈদ-পূজা-পার্বণে এ এলাকার রাস্তা ক্রেতা-বিক্রেতায় একাকার হয়ে যায়। এ অবস্থা দেখা যায় দারুসসালাম ও চিড়িয়াখানা রোড, মিরপুর নিউমার্কেট, মুক্তবাংলা মার্কেট, হক প্লাজা, ক্যাপিটাল মার্কেট, মুক্তি প্লাজা, প্রিন্স প্লাজা, বাগদাদ শপিং কমপ্লেক্স, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট সিটি করপোরেশন মার্কেট, শাহ আলী কলেজ মার্কেটের সামনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, অনেক টাকা চাঁদা দিয়ে বসার জায়গাটুকু পেয়েছি। তারপরও আমাকে প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। বিক্রি হোক বা না হোক। এই চাঁদার টাকা দিতেই হবে। এটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর ফুটপাথে খুবই কম লাভে পণ্য বিক্রি করতে হয়। এখন প্রচুর দোকান থাকায় খুব বেশি লাভও হয় না। তার মধ্যে থানা, পুলিশ, লাইনম্যান, ঝাড়ুদার, সোর্স ও এলাকার বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের আলাদা আলাদা করে টাকা দিতে হয়। কেউ দিন হিসেবে আবার কেউ সপ্তাহ হিসেবে এসব টাকা নিয়ে থাকে। আর যাদের কাছ থেকে জায়গা বা পজিশন নিয়েছি তাদের তো আলাদাভাবে চাঁদা দিয়ে জায়গা রক্ষা করতে হয়। এমন বক্তব্য রাস্তা দখল করে দোকান বসানো বহু হকারের।
কো-অপারেটিভ মার্কেট নিয়ে আরও যত অভিযোগ-
মার্কেট শীতাতপ না হলেও শুধু মাত্র নিচতলায় এসি স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু অল্প সময়ের জন্য সেগুলো চালনা করা হয়। যখন উপচে পড়া কাস্টমার হয় মার্কেটে বেকায়দায় পড়তে হয় বিক্রেতাদের। তা ছাড়া মার্কেটের চলাফেরা করার জায়গাও কম। একসঙ্গে অনেক কাস্টমার হলে চলা দায় হয়ে পড়ে। এতে এক ক্রেতার সঙ্গে অন্য ক্রেতার শরীরে ধাক্কা লাগে। নারী ক্রেতারা বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক ভোগান্তি পোহান।
মার্কেটের টয়লেট ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা খারাপ, নারীদের জন্য রয়েছে মাত্র একটি টয়লেট। বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে যেখানে যেখানে খাবারের দোকান রয়েছে, আশপাশের পরিবেশ নোংরা হয়ে থাকে। তা ছাড়া মার্কেটে সিগারেটের দোকানও রয়েছে। যেখান থেকে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তিন তলা পর্যন্ত মার্কেট, চার তলা থেকে গোডাউন, তার ওপর তলা থেকে ফাঁকা। এসব ফাঁকা জায়গায় মদ-গাঁজার আসরও বসে।
কিন্তু কমিটি দাবি করছে, তাদের এমন কোনো সমস্যাই নেই। মদ-গাঁজার আসর নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটিও সঠিক নয়। কেননা, মার্কেটে সিসিটিভি স্থাপিত আছে। সেখানে দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে। কিন্তু তারা যেভাবে দাবি করেছেন, সেভাবে সিসিটিভি দেখা যায়নি।
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বড় কোনো উৎসবে এ মার্কেটে তারা শপিং করতে আসেন। কারণ, অন্যান্য শপিং মল থেকে এ মার্কেটে কিছুটা সুলভে তারা পণ্য কিনতে পারেন। কিন্তু মার্কেটের ভেতরের পরিস্থিতি অন্য রকম। দোকানিরা চলাচলের রাস্তা দখল করে পণ্য সাজিয়ে রাখেন। তা ছাড়া চলাচলের রাস্তাও ছোট, যে কারণে মানুষে মানুষে ধাক্কাধাক্কি হয়। অধিক ভিড়ে ভেতরের পরিস্থিতি গরম হয়ে পড়ে। এতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। মার্কেট কমিটি নারীদের জন্য একটি মাত্র টয়লেট করেছে। অনেকেই এটি নিয়ে সমস্যায় ভোগেন।
এতসব অভিযোগ ও অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) মার্কেটের বর্তমান কমিটির সভাপতি মো. খোরশেদ আলম ইঞ্জিনিয়ার ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলাউদ্দিনকে কয়েকবার ফোন করা হয়। এমনকি তাদের সঙ্গে দেখা করতেও অফিসে যাওয়া হয়। কিন্তু তারা কেউ ফোন ধরেননি। এমনকি দেখাও দেননি। পরবর্তীতে মার্কেট কমিটির কোষাধ্যক্ষ মো. রবিউল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ ও অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কথা বলে বাংলানিউজ। এ সময় তিনিও অবশ্য সভাপতি-সম্পাদককে ফোন দেন। কিন্তু তারা তার ফোনও ধরেননি।
রবিউলের ভাষ্য, মূলত বিষয়গুলো নিয়ে সভাপতি-সম্পাদকের কথা বলার কথা। এখন যেহেতু আমি ম্যানেজমেন্টের একজন সেহেতু আমার যদি বলতেই হয়, আমাদের পুরনো মার্কেট। তারপরও আমাদের যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, আমরা তা নিয়েছি। এ সময় তিনি বাংলানিউজকে কয়েকটি সাধারণ নোটিশ দেখান; যেগুলোয় বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া হয়। উল্লেখযোগ্যগুলো হলো- মার্কেটে দাহ্য পদার্থ ব্যবসা, কেরোসিন ব্যবহৃত চুলা ও হিটার ব্যবহার না করা প্রসঙ্গে; মার্কেটকে ধূমপান মুক্ত রাখতে চায়ের দোকানে বিক্রি/সিগারেট বিক্রি না করতে; ক্রেতাদের সুবিধার্থে গলিপথে কাপড়ের বস্তা, জুটের বস্তা ও কাটিং টেবিল না রাখা সম্পর্কিত।
কিন্তু এতেও কি সাধারণের অভিযোগ ও অব্যবস্থাপনার দায় এড়াতে পারে কমিটি? রবিউল বলেন, যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে, সে সম্পর্কিত কাজ আমার না। তারপরও কমিটির একজন সদস্য হিসেবে আমি তা এড়িয়ে যেতে পারি না। মার্কেটের সামনে হকার বসা শতভাগ অবৈধ। এ ব্যাপারে পূর্বাপর কমিটি যা যা করণীয় সবই করেছে। কিছুদিন পর পরই পুলিশ প্রশাসন আমাদের নিয়ে বৈঠকে বসে। এ সময় আমরা আমাদের বিষয়গুলো তাদের জানাই। এই অব্যবস্থাপনার সঙ্গে উচ্চস্তরের লোকজন জড়িত। আমাদের ফুটপাতে বসা হকারদের কাছ থেকে আমরা টাকা নিই না। এটা পুলিশ প্রশাসনও জানে, সংশ্লিষ্ট সবাই জানে। টাকা কারা আদায় করে, সেটা ওপেন সিক্রেট ব্যাপার। এখানে বড় বড় রাঘব বোয়াল জড়িত।
এ সময় মার্কেটের দোকানি ও হকারদের দাবির কথা তুলে তাকে প্রশ্ন করা হয়। বিক্রেতারা বলছেন মার্কেট কমিটটি দৈনিক ৩০০ টাকা করে আদায় করে। রবিউল বলেন, এমন কোনো কিছু হয়ে থাকলে অবশ্যই আমাদের দেখান হোক। আমাদের ফুটপাতের কেউ কিনা, নাকি অন্য জায়গায় কেউ এসে এসব অভিযোগ করেছে; সেগুলো আমাদেরও যাচাই করা দরকার। হকার উচ্ছেদের জন্য আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু বাস্তবিকভাবে আমাদের দ্বারা সম্ভব হয়নি।
অন্যান্য অসুবিধা-অভিযোগের ব্যাপারে কোষাধ্যক্ষ বলেন, আমাদের মার্কেট শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত না। এসিগুলো আমাদের আলাদা স্থাপিত। যে কারণে চাইলেও প্রতিনিয়ত এসি চালিয়ে রাখা যায় না। তারপরও ক্রেতাদের সুবিধার জন্য আমাদের শতভাগ চেষ্টা থাকে, তারা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারে। সব মার্কেটেই পক্ষ-বিপক্ষ থাকে। এটা স্বাভাবিক। যারা অভিযোগ করে, তারা আমাদের কাছে এসে বললেই আমরা বাস্তবতা যাচাই করে সমাধান করতে পারি। অন্যান্য যে অভিযোগের ব্যাপারে কথা হচ্ছে সেগুলোও সব সত্য নয়। তারপরও আমাদের চেষ্টা থাকবে যাতে ভালো ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারি।
মার্কেটের আগুন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে রবিউল বলেন, ১৯৯৯ সালে আগুনে বড় ক্ষতি হয়। প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। এক দশক আগেও আগুন লেগেছিল। তবে সে সময় তেমন ক্ষতি হয়নি। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট সচেতন। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তাদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল কিনা, সে ব্যাপারে তিনি অবশ্য কিছু জানাতে পারেননি।
আমাদের মার্কেটে ছোট ছোট স্টল আছে, তাদের আমরা বলে দিয়েছি সিগারেট বিক্রি না করতে। কিন্তু তারা দোকান চালায়, আমাদের জিজ্ঞেস করে কীভাবে ব্যবসা করবো? তারপরও আমরা বলেছি, কাউকে সিগারেট বিক্রি করতে দেখলে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। তার ইলেক্ট্রিসিটি বন্ধ করা হবে। আর পার্কিং না হলেও এটি করা হয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা ট্রাফিক জোন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি- যাতে এখানে পার্কিং না করা হয়। সম্প্রতি একটা অভিযান হয়েছিল। সেখান থেকে কিছুটা ফল পাওয়া যায়। এগুলো করাতেও কিছু খরচ করতে হয়।
খরচের বিষয়টি এলে তাকে কোন কোন বিভাগ থেকে অর্থ চাওয়া হয় প্রশ্ন করলে উত্তরে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অর্থ ছাড়া তো কোনো কাজ হয় না। এটা সরাসরি বলাও যায় না। এটা বলা সমীচীন হবে না। বিষয়টি চেয়ারম্যান-সেক্রেটারি দেখেছেন। তারাই আমাদের বলেছিলেন। ফাংশনটা যদি করতেও হয় (অর্থ খরচ) এটা তারা করতে চেয়েছিলেন ক্রেতা সাধারণের জন্য।
পরবর্তীতে শনিবার (১৫ এপ্রিল) এসব বিষয়ে কথা বলতে আবারও ফোন দেওয়া হয় কো-অপারেটিভ মার্কেট সভাপতি খোরশেদ আলম ইঞ্জিনিয়ারকে। তিনি ফোন না ধরলে কোষাধ্যক্ষ রবিউলের ফোনের মাধ্যমে খোরশেদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, আগুন নির্বাপণে আমাদের যে ডিসপোজাল ইউনিট আছে, তাতে আমরা মার্কেটে আগুন লাগলে নেভাতে পারব বলে আশা করি। তারপরও আমরা আরও ২০-৩০টি ডিসপোজাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর আগে আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। ডিসপোজাল দিয়ে আগুন নিভিয়েছি।
এ সময় শনিবার সকালে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের আগুন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় সভাপতিকে। মার্কেটটিতে কো-অপারেটিভের চেয়েও বেশি ফায়ার ডিসপোজাল ছিল। কিন্তু তারপরও মার্কেট থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি। কো-অপারেটিভ মার্কেটের সে সক্ষমতা আছে কিনা, সে ব্যাপারে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি। তবে বলেছেন, আমরা প্রয়োজনে ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে এসে সার্ভে করাবো। আগেও করিয়েছিলাম।
হকার উচ্ছেদ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা বারবার বিষয়টি নিয়ে থানায় কথা বলেছি, আইনশৃঙ্ক্ষলারক্ষাকারী বাহিনীকেও বলেছি। তারা হকার তুলে দেক আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আমরা তাদের কাছ থেকে টাকা নিই না। আমার তুলি, আমার এসে বসে। এখানে রাজনৈতিক পরিস্থিতিটা সবাই বোঝে। এ সময় প্রশাসন ও উচ্চ পর্যায় থেকে কমিটির কাছে টাকা চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন কোনো বিষয় আমি জানি না। পরে সভাপতিকে তার কোষাধ্যক্ষের বক্তব্য সম্পর্কে বললে খোরশেদ বলেন, তিনি কী বলেছেন আমি জানি না। আমরা কাউকে বেনিফিট দিই না। প্রশাসন অনেক সময় ইফতার চায়, আমরা সে ব্যবস্থা করি।
এসব বিষয়ে কথা বলতে শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাকে মোবাইলেও পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (অঞ্চল-২) মো. জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মিরপুর-১ নম্বর গোল চত্বর এলাকার মার্কেট ও চিড়িয়াখানা রোডের ঈদগাহ মাঠের সামনে হকাররা ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছে এটা সত্য। ঈদের আগে আর উচ্ছেদ অভিযান হচ্ছে না। তবে ঈদের পর আমরা এসব এলাকায় অভিযান পরিচালনা করবো।
হকারদের দৌরাত্ম্য সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা তাদের কাছে মগের মুল্লুক হয়ে গেছে। সকালে উচ্ছেদ করলে বিকেলে বসে পড়ে। এর একটা ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া মার্কেটে অগ্নি নির্বাপণের যে বিষয়গুলো সেগুলোও অভিযানের সময় আমরা পর্যবেক্ষণ করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৩
এমএমআই/এমজে