ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মোবাইলে ডাহুকের ডাক বাজিয়ে ১১ ডাহুক পাখি শিকার

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৪ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২৩
মোবাইলে ডাহুকের ডাক বাজিয়ে ১১ ডাহুক পাখি শিকার

মৌলভীবাজার: পাখি ধরার কতটা বিচিত্র পদ্ধতি! ফাঁদ দিয়ে, বিষটোপ দিয়ে, জাল দিয়ে, কিংবা যে পাখিটাকে ধরবে সেই পাখি মতোই অনুরূপ একটি প্রশিক্ষিত শিকারি পাখি দিয়ে এক শ্রেণির মানুষ বহুকাল ধরে পাখি ধরে আসছে।

এবার পাখি ধরায় যুক্ত হলো প্রযুক্তির ব্যবহার।

স্মার্টফোন ডিভাইজে ডাহুক পাখির (White-breasted waterhen) ধ্বনি বা ডাক বাজিয়ে প্রাকৃতিক ডাহুক পাখিদের চরম বিভ্রান্তির মাঝে ফেলে দেওয়া হয়।

ওই ডাক প্রাকৃতিক ডাক নাকি কৃত্রিম ডাক, এটা তারা বুঝতে না পেরে জাল এসে বসা মাত্রই আটকা পড়ে যায়।  

সম্প্রতি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার মোবাইলফোনে ডাক শুনিয়ে ১১টি ডাহুক পাখি শিকার করা দুই তরুণ আসাবুদ্দিন (২০) ও ওয়ারিছ আলীকে (১৭) আটক করেছে বনবিভাগ।

উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের ফানাই নদী এলাকা থেকে ওই দুই তরুণকে আটক করেছে স্থানীয় বনবিভাগ। পরে বনবিভাগের নলডরী বিট কার্যালয়ে এক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্টেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেহেদী হাসান। পরে উদ্ধার করা পাখিগুলোকে অবমুক্ত করা হয় এবং ওই দুই তরুণকে জরিমানা করে স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপস্থিত ছিলেন বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন ও কুলাউড়া থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. আবু তাহের।

ভ্রাম্যমাণ আদালত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের দিগলকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. নুর মিয়ার ছেলে মো. আসাবুদ্দিন (২০) ও একই এলাকার বাসিন্দা মো. তাহির আলীর ছেলে মো. ওয়ারিছ আলী (১৭) ডাহুক পাখি শিকারের জন্য স্থানীয় ফানাই নদীতে নামেন।

এসময় নদীর একপাশে আলাদা পোষা একটি ডাহুক পাখি খাঁচার ভেতর ও ডাহুক পাখির ডাক রেকর্ডকৃত একটি মোবাইল ওই খাঁচার পাশে রাখেন। মোবাইলে ডাক শুনে একে একে ১০টি ডাহুক পাখি তাদের ফাঁদে এসে ধরা দেয়।

পরে শিকার করা পাখিগুলো পরিবহন করে বিক্রির উদ্দেশ্য নিয়ে যাওয়ার সময় বনবিভাগের নলডরী বিট অফিসার মো. আব্দুল মান্নান দুই তরুণ আসাবুদ্দিন ও ওয়ারিছকে আটক করেন।

পরে তিনি তাৎক্ষণিক বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিনকে জানালে তিনি সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসানকে অবগত করেন। পরে দুপুরে বিট অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেহেদী হাসান আসাবুদ্দিনকে ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ডের সাব্যস্ত করেন। কিন্তু তাদের বয়স বিবেচনায় ওয়ারিছ আলীকে জরিমানা না করে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আব্দুল মতিনের জিম্মায় মুচলেকা নিয়ে দুইজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই মুচলেকাতে উল্লেখ করা হয়, এরপর থেকে ওই অপরাধ করলে জরিমানা দ্বিগুণসহ কিশোর অপরাধ সংশোধনাগারে পাঠানো হবে।

পরে শিকার করা ১১টি ডাহুক পাখিকে ফানাই নদীতে অবমুক্ত করা হয়।

রোববার (৭ মে) উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান বলেন, পাখি শিকারি দুই তরুণ তাদের অপরাধ শিকার করেছে। পরে বনবিভাগের সহযোগিতায় ১১টি পাখি অবমুক্ত করা হয়। বন্যপ্রাণী আইনে আসাবুদ্দিনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা সাব্যস্ত করেছিলাম। তবে তারা অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় এবং প্রথম এই অপরাধ করায় তাদের স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং ভবিষ্যতে এরূপ প্রকৃতিবিরোধী কাজের ব্যাপারে তাদের দুইজনকে জড়ালো সতর্ক করে দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০২৩
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।