ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘বাউল গানে’ মাদক-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদমুক্ত শিক্ষাঙ্গণ

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৬ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২৩
‘বাউল গানে’ মাদক-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদমুক্ত শিক্ষাঙ্গণ

ঢাকা: বাঙলার লোকগীতি বা বাউল গানের মাধ্যমে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত শিক্ষাগণ গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাউল গানের মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গণের প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে।

এজন্য স্কুল-কলেজে বাউল গানের মাধ্যমে প্রচারণার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত শিক্ষাগণ গড়ার প্রত্যয়ে বাউল বা লোকগানের মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গণের প্রচার-প্রচারণার লিখিত প্রস্তাব দিয়েছিলেন বাউল প্রচার সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলম দেওয়ান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বাউল প্রচার সংস্থার আবেদন ও প্রস্তাবনার আলোকে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে এ নির্দেশনা পাঠানো হয়। সম্প্রতি অধিদপ্তর থেকে সব পরিচালক, সরকারি-বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, উপ-পরিচালক, জেলা শিক্ষা অফিসার, প্রধান শিক্ষক, উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারকে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।

আলম দেওয়ান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যদি মানুষ গড়ার জায়গা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারি তাহলে ভালো কিছু করা সম্ভব।  

তিনি বলেন, ১৯৭৮ সাল থেকে আমরা বিভিন্ন সচেতনতামূলক কাজ করছি। পোলিওমুক্ত বাংলাদেশ ক্যাম্পেইন, এইডস থেকে রক্ষা পেতে ‘বাঁচতে হলে জানতে হবে’ গানের মাধ্যমে আমরা কাজ করে আসছি।  

আলম দেওয়ান বলেন, এসব ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ৫-১০ হাজার মানুষ জড়ো করে গানের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা সম্ভব।  

বাউল গানের মাধ্যমে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত শিক্ষাগণ গড়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, সেই আলোকে প্রস্তাবনা আকারে জমা দিয়েছি। তবে কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা আমাদের জানায়নি এখনও।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেওয়া বাউল প্রচার সংস্থার আবেদনে বলা হয়, মুজিব আদর্শে একটি সুন্দর জাতি গঠনে স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ একটি সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখান থেকে উত্তোরণের একমাত্র উপায় সাংষ্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গণে প্রচার-প্রচারণা করা। বাঙালি জাতি সংষ্কৃতিমনা, তাই বাউল ও লোকগানের মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গণে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রচার চালিয়ে সুন্দর জাতি গঠন করা সম্ভব বলে মনে করি।

ইতোপূর্বে আমাদের ফার্ম বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন- জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ, আন্তর্জাতিক মাদকমুক্ত দিবস, ঢাকা সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কার্যক্রম, জাতীয় আয়কর দিবস, জাতীয় মূসক দিবস, আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস, বিশ্ব পরিবেশ দিবস, পলিথিন শপিংব্যাগ বর্জন কর্মসূচি, বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস, কালাজ্বর নির্মূল কার্যক্রম, বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস, জাতীয় হাম-রুবেলা টিকাদান ক্যাম্পেইন, জাতীয় টিকা দিবস, জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ, নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস, বিশ্ব এইডস দিবস, বিশ্বস্বাস্থ্য দিবস, বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবসে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের।

বেসরকারি কার্যক্রমের মধ্যে- গ্রামীণফোন, বন্ধু চুলা, বায়োগ্যাস সপ্তাহ, রবি, সিটিসেল, ফ্রেস মেঘনা গ্রুপ, পারটেক্স গ্রুপ, আরএফএল গ্রুপ, গ্লোব সফট ড্রিংকস, ড্যানিস গ্রুপ, ইউনিলিভার কোম্পানি, শাহ সিমেন্ট, গরু মার্কা ঢেউটিন, রানী মার্কা ঢেউ টিন, আনোয়ার সিমেন্ট শিট, ম্যাগি নুডলস, বুক্রোস দুধ, সেনা কল্যাণ সংস্থার এলিফ্যান্ট ব্র্যান্ড সিমেন্টসহ অসংখ্যা কোম্পানির প্রচারণা। এছাড়া টেলিভিশন, বেতার ও অনেক বিজ্ঞাপনে কাজ করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছি বলে উল্লেখ করেন চিঠিতে।  

বাউল প্রচার সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলম দেওয়ান সই করা চিঠিতে বলা হয়, আমাদের সংস্থা প্রচারণা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রশিক্ষত পেশাদার বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে আধুনিক যোগাযোগ উপকরণ প্রস্তুত ও প্রচার সেবা কার্যক্রম পরিচালনায় দীর্ঘ ৪৪ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। সরকারি আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে প্রচারণা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী।  

অনুষ্ঠানের একটি পরিকল্পনাও জমা দিয়েছে বাউল প্রচার সংস্থা। তাতে বলা হয়, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ জনসমাগম এলাকায় মঞ্চে মন্ত্রী, সচিব, ডিজি, জেলা প্রশাসক বা পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে ছাত্র-ছাত্রী ও স্থানীয় এলাকাবাসী নিজ নিজ আসনে বসা থাকবেন। বাদক দলের পরিবেশনায় যন্ত্রসঙ্গীত এবং লোকজন জড়ো করার জন্য জনপ্রিয় গান পরিবেশন করা হবে। এরপর শিল্পী একটি গান পরিবেশন করবেন, সেই গানের মধ্যে থেকে তিনটি কুইজ দেওয়া হবে। সঠিক উত্তর দাতাকে দেওয়া হবে পুরস্কার। এছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করা হবে। উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী একটি কমিটি গঠন করা। যারা নিজ নিজ এলাকায় মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা, প্রয়োজনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা এবং মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী একটি দেশ গঠনে অবদান রাখবে।

এমন অনুষ্ঠানে এক থেকে পাঁচ হাজার ছাত্র-ছাত্রীসহ সব শ্রেণির লোকই অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন জানিয়ে আলম দেওয়ান বলেন, এমন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দুই থেকে পাঁচ হাজার মানুষকে সচেতন করা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০২৩
এমআইএইচ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।