যশোর: প্রতারণার অভিযোগে তিন ইরানি নাগরিকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ইরানি নাগরিকদের যশোর এবং বাংলাদেশি নাগরিকদের ঢাকার ভাটারা থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার যশোর পুলিশ সুপারের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হুসাইন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ইরানি নাগরিক খালেদ মাহবুবী (৫৪), ফারিবোরয মাসুফি (৫৭) এবং এক কিশোর। সে খালেদ মাহবুবীর ছেলে। গ্রেপ্তারকৃত বাংলাদেশিরা হলেন খোরশেদ আলম (৫৩) ও সাইদুল ইসলাম বাবু (৩৫)।
জানা যায়, যশোরের অভয়নগর উপজেলার বর্ণী হরিশপুর বাজারে শরিফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির ‘মরিয়ম স্টোর’ নামক মুদিখানা দোকান রয়েছে। তিনি ওই দোকানে মোবাইল ব্যাংকিং ও মোবাইল রিচার্জের ব্যবসাও পরিচালনা করেন। গত ৮ এপ্রিল তার দোকানের সামনে একটা প্রাইভেটকার থামিয়ে অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জন লোক নামেন। এরপর তাদের মধ্যে দুজন লোক দোকানে প্রবেশ করেন। তাদের একজনের মাথায় টুপি, মুখে মাক্স, প্যান্ট, শার্ট পরিহিত ছিল। দোকানে আসা লোকগুলো আরবি ভাষায় কথা বলেন। নারিকেল তেল কেনার কথা বলে দোকানদার শরিফুলের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে এবং মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে তার মুখের কাছে নেন। এতে শরিফুল জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েন এবং ওই লোকগুলোর কথা মতো কাজ করতে থাকেন। এরপর ওই দুই ব্যক্তি দোকানে থাকা নগদ প্রায় ৬ লাখ টাকা নিয়ে চম্পট দেন। এ ঘটনায় শরিফুল ছেলে বাদী হয়ে গত ৫ মে অভয়নগর থানার মামলা করেন।
মামলায় ব্যতিক্রমী এ ঘটনা জানতে পেরে যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার বিশেষ তদারকি শুরু করেন এবং ক্লু উদঘাটনের জন্য জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দায়িত্ব দেন। এরপর ডিবি ওসি রুপণ কুমার সরকারের নেতৃত্বে এসআই নুর, মামলার তদন্তকারী অফিসার অভয়নগর থানার এসআই বিমান তরফদার ও ডিবি পুলিশের সদস্য আশরাফ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম তদন্তে নামেন। টিমটি প্রথমে ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং প্রাইভেটকারের রেজিষ্ট্রেশন নম্বরের সূত্রধরে জড়িতদের নাম ঠিকানা শনাক্ত করেন।
পরে গত রোববার (৭ মে) রাতে ঢাকার ভাটারা এলাকা ও যশোর শহরের হোটেল সিটি প্লাজায় অভিযান চালিয়ে চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেট কার, ৪ হাজার ৩৫৯ মার্কিন ডলার, ৩২৫ ইন্ডিয়ান রুপি, ১৮ লাখ ৮০ হাজার ইরানি মুদ্রা, ১০০০ ইরাকের মুদ্রা, ১৮৫ নেপালি মুদ্রা, ১০০০ ভিয়েতনামের মুদ্রা ও ৫৪ হাজার ৭০০ টাকা, ৩টি পাসপোর্ট এবং ৭টি মোবাইল সেট জব্দ করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হুসাইন বলেন, এই ইরানি নাগরিকেরা প্রথমে ফেসবুকে বাংলাদেশি তরুণ ও বিভিন্ন বয়সী মানুষের সঙ্গে নেটওয়ার্ক তৈরি করেন। এর পর তারা মূলত টুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে আসেন। টুরিস্ট ভিসায় প্রবেশ করে বাংলাদেশের কয়েকজনের সহযোগিতায় তারা বিভিন্ন জেলা বিশেষ করে বাণিজ্যিক এলাকায় এসব প্রতারণা কাজ করে আসছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩১ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০২৩
ইউজি/এসআইএস