ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শতবর্ষী মেহগনি গাছ থেকে হারাতে বসেছে চন্দনা টিয়া

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৬ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৩
শতবর্ষী মেহগনি গাছ থেকে হারাতে বসেছে চন্দনা টিয়া

বগুড়া: চন্দনা টিয়া বাংলাদেশের মহাবিপন্ন প্রায় পাখি। প্রায় ১৫ বছর আগে থেকে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় শতবর্ষী একটি মেহগনি গাছ বিপন্ন প্রায় চন্দনা টিয়া পাখিদের আবাসস্থল হিসেবে গড়ে উঠে।

গাছটিতে ২ থেকে ৩ জোড়া চন্দনা টিয়া স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও আসা যাওয়া রয়েছে কমপক্ষে ১৫ জোড়ার। তবে আস্তে আস্তে এ গাছটি থেকেও হারাতে বসেছে মহাবিপন্ন প্রায় এ পাখি।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা সদর থেকে কয়েক কিলোমিটার দক্ষিণে গেলে আড়িয়া বাজার। সেখান থেকে পাকা সড়ক হয়ে পূর্বে সামান্য পথ পাড়ি দিলে ডেমাজানী গ্রামে শতবর্ষী মেহগনি গাছটির অবস্থান। চন্দনা টিয়ার আবাসস্থলখ্যাত শতবর্ষী এই মেহগনি গাছটি বৃটিশ শাসক বলিহার রাজার পুরনো পরিত্যক্ত কাচারিবাড়ীতে অবস্থিত। স্থানটির সবুজবেষ্টিত পরিবেশ যে কাউকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করবে।

মঙ্গলবার (০৯ মে) সরেজমিনে দেখা যায়, বৃটিশ শাসক বলিহার রাজার পুরনো পরিত্যক্ত কাচারিবাড়ীর চারপাশ প্রাচীরে ঘেরা। গাছটির অবস্থান সেখানেই। শতবর্ষী এই মেহগনি গাছটি পাশে দাঁড়িয়ে আছে কদম গাছ। তার বুকে রয়েছে মাটির তৈরি পাখির বাসা। এছাড়া বট, কড়ি, কাঁঠালসহ সেই মেহগনি ঘিরে রয়েছে আরও বেশকিছু গাছপালা। গাছের পাতায়-পাতায় শোভা পাচ্ছিলো গাঢ় সবুজ রঙ। চোখের দৃষ্টি সীমাকে ছাপিয়েও যেন তরতর করে ওপরে বয়ে ওঠেছে শতবর্ষী মেহগনির ডালপালা। সেই ডালপালা ও পাতার আড়ালে দেখা যায় বিপন্ন প্রায় চনন্দা টিয়া পাখি।

চন্দনা টিয়া বাংলাদেশের মহাবিপন্ন আবাসিক পাখি। বাসা করার জন্য বড় গাছের অভাব, গাছে ফোকরের অভাব এবং অবাধে শিকার করে বেচা-বিক্রির কারণে এখন এ প্রজাতির টিয়া এখন খুব কম চোখে পড়ে। চন্দনা টিয়া ঘাস-সবুজ, কাঁধে মেরুন পট্রি। লম্বা লেজওয়ালা পাখি। ছেলে পাখি দেখতে মেয়ে পাখির চেয়ে আকারে বড়। ছেলে পাখির গলার পেছনে ও ঘাড়ের পাশে সুস্পষ্ট লালচে-গোলাপি বর্ণের বলয়সহ পুরো দেহ ঘাস-সবুজ। ডানার পালক ও ঢাকনির মধ্যে পরিষ্কার লাল পট্রি চোখে পড়ে।

আর্দ পাতাঝরা বন, বৃক্ষবহুল এলাকা, উদ্যান, বাগান ও আবাদি জমিতে এ পাখি বিচরণ করে। খাদ্যের তালিকায় রয়েছে জাম, ধান, গম, ভুট্টা, জামরুল, খেজুর, বুনো ফল, ফুলের মিষ্টি রস ও ফুলের কচি অংশ। প্রজনন মৌসুমে নারকেল ও নানা জাতের গাছের ফোকরে বাসা বাঁধে। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস এদের প্রজনন মৌসুম। তখন একেক জোড়া দম্পতি ৩ থেকে ৪টি করে ডিম দেয়। ১৯ থেকে ২০ দিনের মাথায় ডিম থেকে ছানা জন্ম নেয়।  

বগুড়ায় বিলুপ্তপ্রায় চন্দনা পাখি নিয়ে গবেষণার কাজ করেন বগুড়া আজিজুল হক কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক এস এম ইকবাল। তিনি ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সেভ টিম (ওয়েস্ট) পরিবেশবাদী সংগঠনের নির্বাহী পরিচালকও।

এস এম ইকবাল বাংলানিউজকে জানান, প্রায় বছর ১৩ আগের কথা। শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের ডেমাজানী এলাকায় ২০১০ সালের বিরল প্রজাতির এ চন্দনা টিয়া প্রথমে তার নজরে পড়ে। এরপর তিনি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। অভয়ারণ্য সৃষ্টির লক্ষে গাছে সাঁটিয়ে দেন সাইনবোর্ড। যেখানে লিখেন- ‘চন্দনা টিয়া বাংলাদেশের মহাবিপন্ন প্রায় পাখি। এদের সংরক্ষণ করা আমাদের সবার দায়িত্ব। ’ সেই থেকে বিরল প্রজাতির চনন্দা টিয়া সংরক্ষণ ও বংশ বৃদ্ধিতে সাধ্য মতো কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, প্রথম অবস্থায় প্রজনন বৃদ্ধি করতে কাঠের গুড়ির তৈরি ৩০টি কৃত্রিম প্রজনন আবাসস্থল গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। তবে এই পদ্ধতি কার্যকরি হয়নি। পাখিগুলোর সংরক্ষণের কাজে স্থানীয়দের তার সংগঠনের সঙ্গে সস্পৃক্ত করা হয়। তারাও নিজ দায়িত্বে পাখিগুলো দেখভাল করেন।

ডেমাজানী গ্রামের বাসিন্দা দেবাশীষ দাস, শামসুদ্দিন, মামুনুর রশিদ বাংলানিউজকে জানান, আগে অনেকেই এ গাছ থেকে চন্দনা টিয়া ধরে নিয়ে যেত। কিন্তু এখন তা আর পারে না। কেননা এখন গ্রামের লোকজন পাখিগুলো দেখাশোনা করে থাকেন। কেউ শিকার করতে আসলে তাদের বাঁধা দেয়। এ পাখিগুলোর জন্য এ স্থানটি সুন্দর থেকেও সুন্দর হয়ে উঠে। তবে আস্তে আস্তে এ গাছটি থেকে পাখিগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে বলেও অতি দুঃখের সঙ্গে মন্তব্য করেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৩
কেইউএ/ এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।