ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বান্দরবানে তীব্র গরমে বাড়ছে রোগব্যাধি

কৌশিক দাশ , ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৪ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২৩
বান্দরবানে তীব্র গরমে বাড়ছে রোগব্যাধি

বান্দরবান: তীব্র গরমে নাজেহাল অবস্থা পার্বত্য জেলা বান্দরবানের বাসিন্দাদের। বৈশাখ মাসের শুরু থেকে তীব্র তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।

জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ রাস্তায় বের হচ্ছেন না। তীব্র গরমে নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীদের চাপ।

আবহাওয়ার এমন বৈরি আচরণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। দিনে গরমে প্রচুর প্রভাব রাতেও কমছে না। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ ও সাধারণ পথচারীরা। গত কয়েকদিন ধরেই বান্দরবানের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা  হয়েছে ৪০ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বান্দরবান সদরের বাসিন্দা ও বেতার কেন্দ্রে কর্মরত বিনাপানী চক্রবর্তী বাংলানিউজকে জানান, এবারের গরম অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। এই ধরনের গরম আবহাওয়া আগে কখনো পরিলক্ষিত হয়নি।

বাজার করতে আসা মো. জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে বলেন, বান্দরবানে এবার যে তীব্র গরম অনুভুত হচ্ছে তা বলার মত নয়। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া এখন কষ্টসাধ্য। যদিও পথচারীদের কেউ কেউ বেরিয়েছেন ছাতা নিয়ে। এ অবস্থায় শ্রমজীবী আর কর্মজীবীদের জীবন বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। তারপরও জীবন-জীবিকার তাগিদে নেই থামার উপায়; ঘাম ঝরিয়ে ছুটছেন অনেকেই।

পৌর এলাকার বাসিন্দা মো. আমজাদ বাংলানিউজকে জানান, গরমে আমাদের প্রাণ যায় যায় অবস্থা। তার ওপর আবার বিদ্যুতের লোডশেডিং, সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট- সব মিলিয়ে হাহাকার অবস্থা।

এদিকে গরমের কারণে হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ডায়রিয়াসহ তাপদহজনিত রোগীর সংখ্যা। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যাই বেশি।

হাসপাতালে ভর্তি বান্দরবান পৌরসভার বালাঘাটার বাসিন্দা আলফাজ বাংলানিউজকে জানান, গরমে কোনো কিছু খেয়ে শান্তি নেই। রাতে ভাত খাওয়ার পরপরই প্রচণ্ড পেট ব্যাথা শুরু হয়েছে। তাই দেরি না করে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।

বান্দরবান স্টেডিয়াম এলাকার বাসিন্দা মো. নুর তার ১০ বছরের সন্তানকে নিয়ে সদর হাসপাতালের শিশু ওর্য়াডে রয়েছেন। তিনি জানান, বান্দরবানে একদিকে তীব্র গরম, অন্যদিকে বিদ্যুতের তীব্র লোডশেডিং। ফলে রোগবালাই বাড়ছে। একমাত্র সন্তানের হঠাৎ করে ডায়রিয়া শুরু হওয়ায় তাকে নিয়ে হাসপাতালে আসতে বাধ্য হয়েছি।

তীব্র গরমের কারণে প্রায় জনশূন্য রাস্তাঘাট

তাপপ্রবাহের কারণে হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া, জ্বর, ঠাণ্ডা, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এদিকে গরমের এই সময়টা সাধারণ জনগণকে আরও বেশি স্বাস্থ্য সচেতন থাকা এবং যে কোন রোগব্যাধি দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

বান্দরবান সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ ইস্তিয়াকুর রহমান জানান, তীব্র তাপদাহের কারণে মূলত এখন ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে। বর্হিবিভাগ ও আন্তঃবিভাগে প্রতিদিনই রোগী আগের চাইতে বেশি আসছে। হঠাৎ করে গরম বেশি হওয়ায় শিশু ও বয়স্করা বেশি রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। তাইর তাদের এই সময়টা বেশি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. নীহার রঞ্জন নন্দী বাংলানিউজকে জানান, আমাদের ৭ উপজেলায় আমরা পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করেছি এবং চিকিৎসকদের আমরা বিভিন্ন সভা ও চিঠি দিয়ে সতর্ক করে দিয়েছি। তীব্র এই গরমে মূলত ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ জনগণ। গরমের পরে যে বৃষ্টি হবে সেটাতেও জ্বর ও ডায়রিয়া রোগি বাড়বে। তাই এই ধরনের চিকিৎসার জন্য সব হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের  প্রধানদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি।

তিনি আরও জানান, এই গরমে আমাদের বেশি সচেতন থাকতে হবে। ঘরের বাইরের খাবার বর্জন, বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান, অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে না যাওয়া, শ্রমজীবীদের যতটুকু পারা যায় নিরাপদ ও ছায়াযুক্ত স্থানে কর্ম সম্পাদন করা এবং শারীরিক অসুস্থাবোধ করলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরাণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৪ ঘণ্টা, মে ১২,২০২৩
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।