ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

অভাবের তাড়নায় মোখার দিনেও সাগরে জেলেরা

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৮ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২৩
অভাবের তাড়নায় মোখার দিনেও সাগরে জেলেরা ছবি: বাংলানিউজ

ফেনী: ঘূর্ণিঝড় 'মোখা'র সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে ফেনী জেলার উপকূলে দেখানো হচ্ছে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত। এমন পরিস্থিতিতেও ফেনীর সোনাগাজী জেলেপাড়া থেকে মাছ ধরার নৌকা নিয়ে সাগরে গেছেন ১০/১২ জন জেলে।

 

রোববার (১৪ মে) সকাল ৭টার দিকে নদীতে জোয়ার এলে তারা মাছ ধরার নৌকা নিয়ে বের হন। এদিকে জেলেদের নৌকা নিয়ে বের হওয়ার খবরে জেলেপাড়ায় আসেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম অনিক সরকার বলেন, যারা নদীতে মাছ ধরতে গেছেন তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য মহাজনদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বলা হয়েছে সাগর থেকে ফিরে তারা যেন ঘরে না থেকে সরাসরি আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান। এ সময় তিনি জেলেদের সহায়তার বিষয়টিও আশ্বস্ত করেন।  

এ সময় জেলেরা বলেন, আজ ১০/১২ দিন নদীতে যেতে পারিনা। ঘরে চাল নেই, এক গলা ঋণ। কিস্তির লোক বাড়িতে এসে বসে আছে, সাগরে যাওয়া ছাড়া তো উপায় নেই।  

জেলেপাড়ার জেলে প্রাণনাথ বলেন, 'পেডে ভাত নাই, দইজ্জাত ন যাই কি করমু, কিস্তির লোক তো বাইত চলি আইছে।  

নিরঞ্জন জলদাস বলেন, উপায় নেই। নিরুপায় হয়ে তারা নদীতে গেছেন। ঘরে চাল নেই, তরকারি কেনার টাকা নেই। ঋণের টাকার জন্য এনজিওর লোক ঘরে এসে বসে থাকে। রুটি-রুজির একমাত্র অবলম্বন তো নদীতে মাছ ধরা।

সুমন নামে জেলে পাড়ার আরেক বাসিন্দা বলেন, অল্প কটা চিড়া-মুড়ির জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে তো লাভ নাই। এ দিয়ে তো পেটের খিদা মিটে না।  

উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান জানান, উপকূলে ৮ নম্বর বিপদ সংকেত দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীর ঝুঁকিপূর্ণ চারটি ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ইতোমধ্যে পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ৪৩টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র, মাঠে থাকবে দুই হাজার সিপিপির স্বেচ্ছাসেবক। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস ও স্কাউট সদস্যরাও প্রস্তুত রয়েছে।

উপকূলবর্তী এলাকার জেলে ও শ্রমজীবী মানুষগুলো বলছে, ঝড়-প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করেই টিকে থাকেন তারা। প্রশাসন তাদের ঘর-বাড়ি সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে তারা দুর্যোগে আশ্রয়কেন্দ্রমুখী হবেন।  

সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, কক্সবাজার ও মিয়ানমারের উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। আজ রবিবার (১৪ মে) সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া ১৮ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় (১৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১ দশমিক ৩ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে।

এর প্রভাবে ফেনীর সোনাগাজী উপকূলে বাতাসের গতি বেড়েছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে বৃষ্টিও। প্রশাসন স্থানীয়দের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করলেও মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রমুখী হচ্ছেন না।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২৩
এসএইচডি/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।