ঢাকা, শনিবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

টুকটুকে লাল মরিচ দেখে কৃষকের মুখে হাসি

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৭ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৩
টুকটুকে লাল মরিচ দেখে কৃষকের মুখে হাসি

বগুড়া: বগুড়ার ১২ উপজেলাতেই এবার রবি মৌসুমে মরিচ চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন চাষিরা। জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলা যমুনা বেষ্টিত।

এ তিন উপজেলার বেশি পরিমাণ জমিতে মরিচ চাষাবাদ হয়ে থাকে।

প্রতি বছর যমুনার পানি নেমে যাওয়ার অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকেন চরাঞ্চলের মরিচ চাষিরা। যমুনার বুক খালি হলেই কপাল খুলে যায় নদী ভাঙনের শিকার মানুষগুলোর। পানি নেমে যাওয়া মাত্র চরের ঊর্বর মাটিতে পা ফেলেন তারা। তোড়জোড় শুরু করেন মরিচ চাষে। প্রতিবছরই মরিচ ফলানোর কাজটি করেন চরাঞ্চলের চাষিরা।

বগুড়ার লাল টুকটুকে মরিচের খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। জেলার তিনটি উপজেলায় (সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট) বেশি মরিচ উৎপাদন হয়ে থাকে। এ উপজেলা তিনটি যমুনা নদী বেষ্টিত। এর মধ্যে সারিয়াকান্দির প্রায় সাতটি, সোনাতলার তিনটি ও ধুনটের একটি ইউনিয়ন পুরোপুরি যমুনায় ঘেরা। এসব ইউনিয়নের কৃষকরা বছরের এ মৌসুমে মরিচ চাষ করেই সময় কাটিয়ে দেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। যমুনার বিভিন্ন এলাকায় ও দু’কূল ঘেঁষে জেগে ওঠা চরের ঊর্বর মাটিতে বিশাল এলাকাজুড়ে কৃষকরা চাষ করেছেন দেশীয় জাতের মরিচ।

জানা যায়, এ বছর অনেক কৃষক হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষাবাদ করেছেন। টানা তিন থেকে চার মাস চরাঞ্চলের চাষিরা মরিচ চাষে ব্যস্ত সময় পার করে দেন। ঊর্বর মাটির কারণে চরের জমিতে মরিচ ভালো হয়। আর চরের মরিচ গুণে মানে স্বাদেও অতুলনীয়। সারা দেশে চরের মরিচের চাহিদা রয়েছে আলাদা।

মঙ্গলবার (১৬ মে) জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর রবি মৌসুমে মরিচের চাষাবাদ হয়ে থাকে সাধারণত অক্টোবর থেকে মার্চের শেষ পর্যন্ত। এ জেলার কৃষকরা জমিতে স্থানীয় ও হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষ করে থাকেন। মরিচ লাগানোর ৬০ থেকে ৭০ দিনের মাথায় চাষিরা তা উঠানো শুরু করেন। প্রত্যেক সপ্তাহে একবার করে প্রায় তিনমাস একটানা মরিচ উঠানো হয়। গুণগত মান ভালো বলেই দেশব্যাপী এ জেলার মরিচের সুনাম রয়েছে। এছাড়া মরিচের ঝাল ও দারুণ সুগন্ধ রয়েছে। অনেক বড় বড় কোম্পানি এখানকার মরিচ কেনায় বিনিয়োগ করে। এ কারণে জেলার চাষিরা লাভবান হচ্ছেন।

সারিয়াকান্দি উপজেলার কৃষক জুহুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে তিনি যমুনার বুকে মরিচ চাষ করে থাকেন। এ বছর রবি মৌসুমে মরিচ চাষে বাম্পার ফলনে তিনি বেশ লাভবান হয়েছেন। এ অঞ্চলের চাষিরা পানি নেমে যাওয়া মাত্রই তোড়জোড় শুরু করে দেয় মরিচ চাষ। গেল রবি মৌসুমে তিনি ১২ বিঘা জমিতে ‘খ্যাতির মরিচ’ লাগিয়েছিলেন। বীজ, সার, সেচ, শ্রমিক মিলিয়ে তার মোট খরচ হয়েছিল প্রায় ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, মরিচ চাষাবাদে বেশি ব্যয় হয় শ্রমিক ও কীটনাশকে। মরিচ গাছগুলো ঠিক রাখতে প্রায়ই প্রতিদিনই নিয়মানুযায়ী ওষুধ দিতে হয়। সর্বোপরি ক্ষেতের গাছগুলোর ঠিকভাবে দেখভাল করতে হয়। প্রথমে জমিতে চাষ দিতে হয়। এরপর মরিচের বীজ বোপন করতে হয়। পরবর্তীতে ধারাবাহিকতার সঙ্গে নিড়ানি, সামান্য সেচ ও সার দিতে হয় মরিচের ক্ষেতে। মূলত পরিচর্যাটা করাটাই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বিঘায় শুকনো হিসেবে পাঁচ থেকে সাত মণ মরিচ পাওয়া যায় বলেও জানান তিনি।

সোনাতলা উপজেলার কৃষক আবিদুর রহমান, খাইরুল আলম বাংলানিউজকে জানান, মচির চাষে এখন প্রতি বিঘায় ব্যয় হচ্ছে ২১ থেকে ২৫ হাজার টাকা। ১৫ দিনের মধ্যে একবার ক্ষেত থেকে মরিচ তোলা যায়। তবে তাদের চরের উৎপাদিত মরিচ বিক্রি নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয় না। দেশের নামিদামি অনেক কোম্পানি বা বড় বড় প্রতিষ্ঠান এখানকার মরিচ ক্রয় করে। এসব এলাকায় ক্ষেতের মরিচ তোলার সময় থেকেই কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রতিনিধি আসতে থাকে।

তারা বলেন, এসব মরিচ ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা নিয়ে ও বিক্রি করেন অনেকে। এবার দাম বেশ ভালো। গেল বছরে চরের প্রতি মণ মরিচ এক হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। এখন সেই মরিচ ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। এ কাজে বাড়ির নারীরাও সমানভাবে সংযুক্ত থাকেন। মরিচ লাগানো, তোলা, শুকানো ও বস্তায় ভরা পর্যন্ত প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে পুরুষকে সহযোগিতা করেন নারীরা। চাষাবাদের সময় বাড়তি আয়ের আশায় কৃষকরা সবাই একযোগে মরিচ ক্ষেতে ব্যস্ত সময় কাটান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী উপ-পরিচালক মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, এবার রবি মৌসুমে ১২টি উপজেলায় সাত হাজার ৬৬৬ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও চাষাবাদ হয়েছে পাঁচ হাজার ৬৫০ হেক্টর। এরমধ্যে সিংহভাগ মরিচ চাষ হয় সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায়। শুকনো মরিচ হিসেবে প্রতি হেক্টরে ফলন হয় ২ দশমিক ৮৫ মেট্রিক টন হারে। এ হিসেবে রবি মৌসুমে এ জেলায় মরিচ উৎপাদন ১৬ হাজার ১০২ মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৯০০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, চলতি মরিচ-১ মৌসুমে এ জেলায় ৬৯০ হেক্টর জমিতে মরিচ লাগানো হয়েছে। মার্চের শেষদিক থেকে জুন পর্যন্ত চাষিরা এ মৌসুমের মরিচ চাষ করেন। কাঁচা হিসেবে ১১ দশমিক ৭ মেট্রিক টন হারে প্রতি হেক্টর ফলন হচ্ছে। সে হিসেবে বর্তমান মরিচ মৌসুমে প্রায় ৮ হাজার ৭৩ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচের ফলন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৩
কেইউএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।