ঢাকা, শনিবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

এনআইডি থাকলে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা উচিত: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৭ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২৩
এনআইডি থাকলে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা উচিত: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ঢাকা: করের আওতা বাড়াতে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থাকলেই সবার রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করার উচিত বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

শনিবার (২৭ মে) দুপুরে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) অডিটোরিয়ামে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মুহিত ভাই অর্থমন্ত্রী থাকার সময় আমি করের আওতা বাড়ানোর জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র যাদের আছে, তাদের সবাইকে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটি হয়নি আমলাতন্ত্রের কারণে, এনআইডি যাদের আছে সবাইকে করের আওতায় আনতে পারলে সাত থেকে আট শতাংশ কর জিডিপির হার বাড়বে। বর্তমানে এক শতাংশ মানুষ করের আওতায় রয়েছে।

তিনি বলেন, ১৭ কোটি মানুষের দেশ অথচ ট্যাক্স দেয় মাত্র সাড়ে সাত থেকে আট শতাংশ লোক। তখন আমি ভাইকে বলেছিলাম, আমেরিকায় যাদের সোস্যাল সিকিউরিটি কার্ড আছে তাদের ট্যাক্স দিতে হয়। যাদের সাড়ে ৩ হাজার ডলারের নিচে তাদের ট্যাক্স দিতে হয় না। আর যাদের এর ওপরে তাদের ট্যাক্স দিতে হয়। অথচ আমাদের দেশে করদাতা টিন নম্বর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। এমনকি কোম্পানি ও কর্পোরেশনগুলো টিন নম্বর করেছে। এজন্য আমি বলেছিলাম, যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে তাদের সবাইকে ট্যাক্স দিতে হবে। এটা সম্ভব। তিনি এ বিষয়ে আমলাদের যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বলেছেন। এখন এটা আমার দাবি, কারণ আমাদের করদাতা বাড়াতে হবে। এজন্য যারই এনআইডি থাকবে তাকেই ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিত জুটির কারণে দেশ ও মানুষের মঙ্গল হয়েছে। কারণ শেখ হাসিনা মানুষের মঙ্গল চান। আর এই মঙ্গলকে কীভাবে অর্জন করা যায়, সেই মাধ্যম বের করতেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। একই সাথে সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য এই জুটি সব সময় কাজ করেছেন। তার ফলে আজ আমাদের দেশের চেহারা পালটে গেছে। দেশ উন্নত হচ্ছে, আজকে ২৪ ঘণ্টার পথ ৪৫ মিনিটে যেতে পারছি। সেটা সম্ভব হয়েছে এরকম কৃতিপুরুষ ছিল বলে। আমরা তার মাগফেরাত কমনা করছি।  

ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ২০০১ সালে হুমায়ুন রশীদ হঠাৎ মারা গেলেন। তখন সৌদি আরবে চাকরিতে। তখন নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমাকে ফোন করলেন। প্রস্তাব দিলেন নির্বাচনের জন্য। আমি রাজি না হয়ে বললাম আমার কাছে ভালো প্রার্থী আছে। নেত্রী জানতে চাইলে বললাম আমার বড় ভাই। তখন শেখ হাসিনা বলেন, তিনি মেজাজ গরম মানুষ। পরে আমি দায়িত্ব নিলাম। মুহিত ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললাম।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আবুল মাল আবদুল মুহিতকে সুযোগ দিয়েছেন, যে কারণে দেশে অর্থনৈতিক চিন্তা, অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। তাই এই কৃতিত্বের জন্য সবচেয়ে প্রশংসার দাবিদার শেখ হাসিনা।  

সৌদিতে স্থায়ী মিশন খোলার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সহযোগিতা পাওয়ার কথা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার সময় ২৭টি মিশন করা হয়েছে এবং কেনা হয়েছে। সৌদি আরবে ৩৭ বছর পর শেখ হাসিনার সময়ে মিশন হয়েছে। সব মিলিয়ে নিজেদের মিশন থাকার কারণে সরকারের ৪৭ হাজার ডলারের মতো সেভ হচ্ছে।

বিদেশি মিশনগুলোতে জাতীয় দিবসগুলো উদযাপনে আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে আবুল মাল আবদুল মুহিতের কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অর্থের অভাবে মিশনগুলোতে জাতীয় দিবসগুলো উদযাপন করা হতো না। সেটা জানার পর প্রধানমন্ত্রীর সামনেই অর্থমন্ত্রী মুহিত ভাই অর্থ দেওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেলেন।

সরকারি কর্মকর্তাদের শতভাগ বেতন বাড়ানো নিয়ে প্রয়াত অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে একমত ছিলেন না জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তখন তাকে বলেছিলাম, এত বেতন বাড়ালে দেশ তো গ্রিসের মতো দেউলিয়া হয়ে যাবে। কিন্তু তিনি বললেন, আমরা সবার হাতে টাকা তুলে দেবো। বড় বাজেট দেবো। পরে দেখলাম তার চিন্তা খুবই ইনোভেটিভ। তিনি একজন ভিশনারি মানুষ ছিলেন। আবুল মাল আবদুল মুহিতের যে কর্মস্পৃহা এবং তিনি তা বাস্তবায়ন করতেন; এজন্যই তিনি প্রশংসার দাবিদার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সুযোগ দিয়েছেন, সেজন্যই তিনি তার চিন্তাধারা প্রয়োগ করতে পেরেছেন।

ইআরএফের সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মৃধার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফজলে কবির এবং সাবেক অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাবেক গভর্নর ফজলে কবির বলেন, তাকে নিয়ে কথা বলার জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল না।  যে কোন স্থান থেকে শুরু করলেই হলো, খানিক বললেই অনেক বলা যাবে। মুহিত স্যার ছিলেন একজন বড় মনের অর্থনীতিবিদ। সব কিছুকে তিনি সহজভাবে গ্রহণ করতেন।

সাবেক অর্থ সচিব মাহাবুব আহমেদ বলেন, রাত একটা দুইটা পর্যন্ত তিনি জেগে জেগে ফাইল দেখতেন, পড়াশোনা করতেন। কম ঘুমিয়ে কাজ করতে পারতেন। তার প্রচুর প্রাণশক্তি ছিল। তিনি বলতেন, বাংলাদেশ আরও ভালো করতে পারতো। কিন্তু রোহিঙ্গার কারণে করতে পারেনি। তার কথা শুনে মিয়ানমারের প্রতিনিধি নাখোশ হয়েছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২৩
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।